পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা করিয়াছেন অপূর্ব
সৃষ্টি “মানবজাতি” খুব সুন্দর রহস্যময়ী করিয়া।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অপরূপ সৌন্দর্য দিয়া ছিলেন
নবী ইউসুফ (আঃ) কে যেন খুশি মনে ঢালিয়া।

সময়ের আবর্তনে ইউসুফ (আঃ) এর বহুবার
হইয়া ছিল প্রভুর ঈমানী অগ্নিঝরা পরীক্ষা।
শৈশবকাল হইতে পরীক্ষায় তিনি হইয়া ছিলেন
উত্তীর্ণ, অর্জন করিয়া ছিলেন কালজয়ী দীক্ষা।

ইউসুফ (আঃ) এর নূরানী রূপোজ্জ্বল সুন্দর
চেহারার নিকট চন্দ্রসূর্যের সৌন্দর্য মানিত হার।
মহিমান্বিত অপরূপ সৌন্দর্যের ঝলকানিতে
দূরীভূত হইত যেন অমাবস্যাতিথির অন্ধকার।

ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু একদিন স্বপ্নে দেখিলেন,
আকাশে উঠিয়াছে এগারো তারা।
তাহাদের মধ্যে একটি তারা অতি প্রজ্জ্বলিত
হইয়া ছড়াইতেছে আলো যেন সবার সেরা।

স্বপ্নের কথা শ্রদ্ধাভরে জানাইলেন ইউসুফ (আঃ)
পিতাজী ইয়াকুব (আঃ) এর সহিত।
পিতাজী হয়ত বুঝিয়া ছিলেন স্নেহভাজন পুত্র
হইবেন নবী, প্রকাশ করিতে করিলেন রহিত।

ইয়াকুব (আঃ) খুব ভালোবাসিতেন পুত্র ইউসুফ
(আঃ)কে, করিতেন অনেক আদর।
পিতৃত্বের অধিক আদরদেখিয়া অন্য ভাইগণ
হইলেন ভীষণ হিংসাকাতর।

ভাইগণ মিলিয়া আঁটিলেন কুটকৌশল, ইউসুফ
(আঃ)কে করিবেন হত্যা বনের ভিতর।
সত্যিই একদিন হত্যা করিতে দিলেন ফেলিয়া  
অরণ্য বেষ্টিত অন্ধকার কূপের অভ্যন্তর।

রক্ত মিশ্রিত জামা কাপড় পিতা কে দেখাইয়া
বলিলেন, ভাই কে খাইয়াছে বনের বাঘ।
ইয়াকুব (আঃ) এর মনে আসিল অবর্ণনীয় কষ্ট,
বিশ্বাস হইল না পুত্রের অপমৃত্যু-রক্তের দাগ।

অরণ্য পথচারী বণিক পানি উত্তোলনের জন্য
কূপের ভিতর নামাইয়া দিলেন ঘটি-বালতি।
ছোট্ট ইউসুফ (আঃ) বালতিতে করিয়া উঠিলেন,
রক্ষা পাইল তাহার জীবন, হইল না কোন ক্ষতি।

বণিক হইলেন ভীষণ খুশি, বিক্রি করিয়া পাইবে
অধিক টাকা, হইবে মুনাফা অর্জন।
ক্যানন শহরে পিটাইয়া দিলেন ঢোল, ওজনের
সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা হইল মূল্য তাহার নির্ধারণ।

যথা সময়ে বণিকগণের হইল রমরমা সমাগম,
সম্বলহীন এক মহিলা করিলেন আগমন।
মহিলাটি শিশুর মুক্তির দল ভূক্ত হইয়া পূণ্যের
খাতায় করিলেন তাহার নাম লিপিবদ্ধ করণ।

বাদশা আজিজ মিশ্রী আনন্দে ক্রয় করিলেন
সমপরিমাণ স্বর্ণ মুদ্রা দিয়া।
পত্নীজুলেখা আনন্দিত হইয়া করিলেন গ্রহণ,
পালন করিলেন অন্তর ভরিয়া।

ইউসুফ (আঃ) হইলেন বড়, চতুর্দিকে সুনাম-
খ্যাতি ও রূপের ঝলকানিতে হইল উদ্ভাসিত।
অপরূপ সৌন্দর্য জুলেখা বিবির হইল দৃষ্টিভ্রম,
প্রেমাবেগে হইল তাহার হৃদয় প্রেম সুশোভিত।

অন্দর মহলে ডাকিয়া আসক্ত করিবার
সর্বাত্মক চেষ্টায়, কু-প্রবৃর্তি আঁটিতে চাহিল।
নিষ্পাপ ইউসুফ (আঃ) ধস্তাধস্তি করিয়া
প্রাণপণ চেষ্টায় কোন মতে যেন পালাইল।

জৈবিক চাহিদা চরিতার্থে ব্যর্থ হইয়া অগ্নি-
মূর্তি করিল ধারণ, কুটকৌশলে যেন ফাঁসাইল।
বাদশার নিকট পত্নীর অভিযোগ, জোরপূর্বক
ইজ্জত লুণ্ঠন করিতে সর্বাত্বক চেষ্টা করিল।

অনাকাঙ্ক্ষিত নিকৃষ্ট অভিযোগ শুনিয়া, তিনি
পাঠাইলেন ইউসুফ (আঃ)কে অন্ধকার কারাবাস।
বিজ্ঞ বিচারক জানিতে চাহিলেন, কি
প্রমাণ রহিয়াছে করিতে চাহিয়া ছিল সর্বনাশ।

অভিযোগকারী দেখাইল ধস্তাধস্তিতে ইউসুফ
(আঃ) এর জামা পিছনে রহিয়াছে ছিঁড়া।
বিজ্ঞ বিচারক বুঝিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দোষ,
জুলেখা বিবির নোংরামীর সকল পায়তারা।

তবুও বাদশা পত্নী জুলেখা নিজস্ব ক্ষমতা
বলে পাঠাইলেন পুনরায় অন্ধকার কারাগার।
কারাগৃহে থাকিয়া কষ্ট-যন্ত্রণা সহিয়া আসক্ত
হইয়া যায় যেন তাহার।

জুলেখার আশা-স্বপ্ন প্রস্ফুটিত না হইয়া
ব্যর্থতায় হইল পর্যবসিত।
ইউসুফ (আঃ)কে কারাবাস হইতে করিলেন
তিনি আপন মনে মুক্ত।

ইউসুফ (আঃ)কে স্পর্শ করিবার কোন ক্ষমতা
ছিলনা, কোন পাপবোধ কিম্বা অস্পৃশ্যতার।
পাপবোধ ও পাপিষ্ঠদের বিরুদ্ধে তীব্র জিহাদী
শক্তি করিতেন তিনি সর্বদাই ব্যবহার।

দেশ দেশান্তরের সমগ্র রাজা বাদশার পত্নী,
আপাময় জনগণ করিলেন ঘৃণা জ্ঞাপন।
বাদশা পত্নী কিভাবে কৃতদাসের সহিত
আসক্ত হইল, নিকৃষ্ট মনের হইল উম্মোচন।

বদনাম ঘৃণা-লজ্জা করিতে অপসারণ, সকল  
রাজপত্নী, সখীদের করিলেন আমন্ত্রণ।
ইউসুফ (আঃ)কে সম্মুখে হাটিয়া যাইতে বলিয়া
লেবু কাটিতে দিলেন করিয়া আয়োজন।

রূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হইয়া হইলেন অচেতন,
লেবুকাটা শেষে হাত কাটিয়া হইল রক্তক্ষরণ।
বিবি জুলেখা করিলেন “বচন” সর্বক্ষণ আমি
সাথে থাকিয়া কিভাবে করি বল সখি ধৈর্য ধারণ।

সর্বক্ষণ যদি হইত ইউসুফের দর্শন, কলিজা
কাটিয়া করিতা টুকরো তবুও না হইত চেতন।
অফুরন্ত সময় সাথে থাকিয়া আমি কিভাবে
বাঁধিয়া রাখিব বল এই অবুঝ মন।

বাদশা পত্নীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবার
পূর্বে ছিল তাহার কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
বিনা অনুমতিতে শরীরে না করিবে স্পর্শ,
সংরক্ষিত থাকিবে তাহার অটল কুমারীত্ব।

জুলেখা বিবি বাদশা আজিজ মিশ্রীকে
বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য করিলেন আবেদন।
ন্যায় পরায়ণ বাদশা অবনত মস্তকে বিনা
শর্তে কবুল করিয়া লইলেন তাহার প্রস্তাবন।

রাজ্য বাদশাহী ছাড়িয়া ইউসুফ (আঃ) এর রূপে
মুগ্ধ হইয়া নিজেকে করিলেন আত্মসমর্পণ।
জলপ্রপাতের স্রোতধারার মতো আত্মঅহমিকা
প্রতিপত্তি ভাসাইয়া দিয়া হইলেন অতি সাধারণ।

সতী সাবিত্রী জুলেখা ইউসুফ (আঃ)কে
বিবাহ করিবার প্রস্তাব করিলেন তিনি জ্ঞাপন।
সহধর্মিণী হিসাবে গ্রহণ করিয়া সংসার ধর্ম
ইউসুফ (আঃ) পালন করিলেন আজীবন।

সময় পরিক্রমায় বাদশা আজিজ মিশ্রী রাজ্য
বাদশাহী ইউসুফ (আঃ)কে করিলেন অর্পণ।
রাজ্য পরিচালনার অন্তবর্তী সময়ে আল্লাহপাক
ইউসুফ (আঃ) কে স্বপ্নে করিলেন সতর্কীকরণ।

রাজ্যের সমগ্র এলাকার উদ্ভিদ পোকা মাকড়
করিতেছে ভক্ষণ, লক্ষন হইল দুর্ভিক্ষ কাল।
আজ হইতে চারবৎসর পর, চার বৎসর হইবে
দুর্ভিক্ষের স্থায়িত্ব কাল, শুরু হইবে চরম আকাল।

খাদ্য মজুদ করিয়া রাখিবার পাইয়া ছিলেন,
তিনি সঠিক দিক নির্দেশনা।
মজুদকৃত খাদ্য দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা হইবে
ব্যবহার, করিবে রাজ্য সঠিক পরিচালনা।

যথা সময়ে সংগঠিত হইল চরমাকারে দুর্ভিক্ষ,
চারদিকে শুরু হইল হাহাকার।
ইউসুফ (আঃ) দশ ভাইয়ের একভাই আসিলেন
রাজকোষের সাহায্য প্রার্থনা ছিল তাহার।

ইউসুফ (আঃ) তৎক্ষণাৎ ভাইকে চিনিতে হইল
না কোন রকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব।
সাহায্য সহযোগীতা করিয়া অন্য সকল
ভাইদের সাথে আনিতে তিনি করিলেন উদ্বুদ্ধ ।

সঠিক সময়ে পিতা ইয়াকুব (আঃ) সহ সকল
ভাইগণের হইল আগমন।
পিতাপুত্র উভয় পরস্পরকে চিনিতে পারিয়া
আনন্দের হইল ভীষণ উত্তরণ।

পিতাজী পুত্রশোকে কাঁদিতে কাঁদিতে দৃষ্টি
শক্তি হারাইয়া বরণ করিয়া ছিলেন অন্ধত্ব।
কান্নায় দু'চোখের লোনা পানিতে সমস্ত বুকে
হইয়া ছিল ভীষণ ঘা যাহা ক্ষত বিক্ষত।

পুত্রের শরীরের সুগন্ধ পাইয়া তিনি করিয়া
ছিলেন সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ।
দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি পুনরায় পাইয়া ছিলেন
ফিরিয়া, সত্যিই আল্লাহর রহমতের প্রভাব।        
( সংকলিত )

ডিসেম্বর ০৫, ২০২০ খ্রিঃ