চীনের ঝিন রাজ বংশীয়দের নির্মম অত্যচারে
মঙ্গোলীয় খান গোত্রীয় লোকজন ছিল অতিষ্ঠ।
চেঙ্গিস খানের পিতা ইয়ুগেয়েই খান, খান
গোত্রভিত্তিক নেতৃত্বে ছিল ক্ষমতায় আবিষ্ট।
ঝিন রাজ বংশীয়রা ইয়ুগেয়েইকে ক্ষমতাচ্যুত
করিয়া অন্য গোত্রকে দিল রাজ্য করিতে শাসন।
বালক চেঙ্গিসের বিয়া বাড়ীতে খাবারের সহিত
বিষ মিশাইয়া ইয়ুগেয়েইয়ের জীবন করিল হরণ।
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী বিয়ার পর চেঙ্গিস খান
তিন বৎসর ছিল শশুর বাড়ী।
পিতৃ গৃহে আসিয়া দেখিলেন তাহার মা' ভাইদের
উপর নিজ গোত্র করিতেছে অত্যচার আহাজারি।
নিজস্ব পোত্রের নির্মম অত্যচার হইতে বাঁচিবার
জন্য মা' ভাইবোন সহ তাহারা করিল পলায়ন।
লোকালয় হইতে দূরে গভীর অরণ্যচরে
তিন বৎসর করিল অতি মানবেতর জীবন-যাপন।
চেঙ্গিস খানের সৎ বড় ভাই বারগাত চেঙ্গিসের
গর্ভধারণী মা'কে জোড় পূর্বক করিল বিয়া।
মা'য়ের এহেন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখিয়া
বালক চেঙ্গিস খানের মাথায় রক্ত গেল উঠিয়া।
এই ভাবে আপত্তিকর নির্যাতিত পরিবেশে
মা'য়ের সংসারধর্ম চলিল বেশ কিছু দিন।
সময় সুযোগে চেঙ্গিস তাহার ভাইকে লইয়া সৎ
ভাইকে করিল হত্যা মা'কে করিল স্বাধীন।
পলায়ন কালে অরণ্য ব্যষ্টিত এলাকা "তয়ুছিদ"
গোত্র প্রধান বাবার বন্ধুর হাতে পরিল ধরা।
তিন বৎসর সবাই মিলিয়া কৃতদাস খাঁটিবার পর
রাজরক্ষীর ছেলে চিলাউন সাহায্যে পলায়ন করা।
দূরবর্তী এলাকা মা' ভাইবোনকে লইয়া করিল
পলায়ন অতঃপর শুরু করিল শক্তি অর্জন।
স্ত্রী (বর্তী)কে করিল আনয়ন, মা'য়ের "মেরকিত"
গোত্রীয় লোকজন করিল বর্বরোচিত আক্রমণ।
যুদ্ধে পরাজিত চেঙ্গিস বাহিনী করিল পলায়ন,
মা'সহ স্ত্রী(বর্তী) ও অন্য মেয়েদের করিল হরণ।
এক বৎসর খুশিমত করিল ব্যবহার, চেঙ্গিসের
বাপের বন্ধুর সহায্যে উদ্বার কার্ষ করিল সমাপন।
পাশবিক নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর (বর্তী) স্থান
ছিল হৃদয়ের মধ্যখানে আপন ভূবন।
কালক্রমে শক্তিতে হইল পরাক্রমশালী তাহার
রণকৌশলে ভীত সন্ত্রস্ত ব্যাঘ্র সিংহের গর্জন।
দুর্ধর্ষ চেঙ্গিস খান "মেরকিত "গোত্র শাসিত
রাজ্যের সমস্ত জনগনকে করিল কঁচুকাটা।
জীব কিম্বা উদ্ভিদ ছিল না দৃশ্যমান জিদের
বশবর্তীতে করিল শূণ্য মরুভূমি ঢেঁকিছাঁটা।
একের পর এক রাজ্য দখল করিয়া হইয়াছে
বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক।
যুদ্ধ বিগ্রহে অকাতরে ঘটাইয়াছে রক্তপাত,
অসংখ্য প্রাণ করিয়াছে নাশ জঘন্য পাশবিক।
ইতিহাসে ঘৃর্ণীত নিন্দিত অভিশপ্ত ও কলংকিত
নোংড়া রক্ত পিপাসো একটি নাম চেঙ্গিস।
ঘৃর্ণাভরে নামের উপর থুথু ছিটায় মানুষ নামের
কলঙ্ক, মৃত্যুর সাথে রহিত হইল তাহার কুর্নিশ।
ইতিহাসে চেঙ্গিস কালো অধ্যায় সৃষ্টিকারী ও
কালো মানুষ হিসাবে আজও বিশ্বখ্যাত।
তবুও প্রথমা স্ত্রীকে মনে প্রানে আপন ভূবনে
অফুন্ত অকৃত্রিম অনিন্দ্যরূপে ভালোবাসিত।
নবজাতক ভূমিষ্ঠ হইলে নিজ পরিচয়ে
সন্তান (জুচি) হিসাবে উৎসর্গ করিল পরিচয়।
সাম্রাজ্য সমান চারভাগ করিয়া জুচি সহ
সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত হয়।
জুচি সাম্রাজ্য পরিচালনা কালে চেঙ্গিস খানকে
করিত না কোনরূপ সাহায্য সহযোগিতা।
চেঙ্গিসের বিরুদ্ধে লিপ্ত ষড়যন্ত্র চেঙ্গিস অবগতি
পাইয়া কোমর ভাঙ্গিয়া করিল নির্মম হত্যা।
রাজ রক্ত মাঠিতে পড়িলে রাজ পরিবারের
হইবে অমর্যাদা তাই তলোয়ারে কাটেনি।
নির্মম পাষাণ চেঙ্গিস সার্থ রক্ষায় নিজ পুত্রকে
হত্যা করিতে বুক তাহার বিন্দু মাত্রও কাঁপেনি।
চেঙ্গিসের বংশধর ধর্মান্তরিত হইয়া পবিত্র
ইসলাম ধর্ম করিলেন গ্রহণ।
ভাইগণের মধ্যে ছোট্ট খাটো যুদ্ধে হইয়া পরিল
দুর্বল তাই রাজ্য বিস্তারে ছিলনা কোন মন।
জুচির ছেলে বাটু খান দুর্ধর্ষ হিংস্র ও তীক্ষ্ণতা
দাদা চেঙ্গিস, রাজ্য করিয়া ছিল বিশাল বিস্তার।
আদর্শ ন্যায় নীতিতে ছিল শক্তিমান রাজ্য
বিস্তারে কভূ করিত না চেঙ্গিসের মতো অত্যচার।
দুর্ভেদ্য চীনের মহাপ্রাচীর ভেদ করিয়া চীনে
একমাত্র চেঙ্গিস বাহিনী করিয়া ছিল প্রবেশ।
চীনের কিছু এলাকা খণ্ড রাজ্য করিয়া ছিল
হস্তগত শাসন কার্য করিয়া ছিল মনোনিবেশ।
চেঙ্গিস খান ও জালালের মধ্যে বীরদর্পে সংঘটিত
তুমুল যুদ্ধে জালাল সাঁতরাইয়া করিল পলায়ন।
নদীর ওপার হইতে তরবারি উঁচু করিয়া
ইঙ্গিত করিল বহন আবার হইবে দেখা রণাঙ্গন।
ধন্য তুমি মায়ের সন্তান যে মা গর্ভে তোমার মতো
বীর সূর্য সন্তান করিয়াছে ধারন।
আমি ধন্য হইতাম যদি থাকিত তোমার মতো
একজন বীর অসাধারণ আমার পুত্র সূর্য সন্তান।
দিগবিজয়ী বীর চেঙ্গিস খান তাহার ইতিহাসে
ছিলনা কোন পরাজয়ের ছোঁয়া।
সুশৃঙ্খল ক্ষিপ্তগতি সম্পন্ন তাহার সেনাবাহিনী
পৃথিবীর ইতিহাসে বিড়ল ছিলনা মৃত্যুর পরোয়া।
নরঘাতক পৈশাচিক চেঙ্গিস খান পাঁচ কোটির
চাইতেও বেশী মানুষ করিয়া ছিল নির্মম হত্যা।
বহুদেশ করিয়াছে ধবংশ, হইয়াছে ভিড়ান ভূমি
জন্মিয়াছে বন জঙ্গল রাখেনি কোন মানবআত্মা।
চেঙ্গিস খানের নর ঘাতকতায় মৃত্যুর মিছিলে
পৃথিবীরূপ রূপ রেখা গিয়া ছিল পাল্টিয়া।
সায়েন্স রিচার্স অনুযায়ী বায়ু মণ্ডলীয় কার্বন ড্রাই
অক্সাইড সাতশত মিলিয়ন টন গিয়াছিল কমিয়া।
ইরাকী লেখক রশিদ-আল-দীনের লিখনিতে
চেঙ্গিসের ইরাক আক্রমণে হইয়া ছিল কসাইখানা।
পচিশ লক্ষের জনগোষ্ঠী মারিয়া আড়াই লক্ষ
করিল,পরিপূর্ণ হইতে লাগিল বৎসর পঞ্চাশখানা।
চেঙ্গিসের অতি আদুরে কন্যা জামাতা তপুজার
নিশাপুরের এক তীরন্দাজ করিয়া ছিল হত্যা।
রক্ত পিপাসু অশুভ আত্মা চেঙ্গিস খান বদলা
নিতে জনগণ ও জীব আত্মা করিয়া ছিল শূণ্যতা।
মানুষের মাথার খুলি দিয়া তৈরী করিয়া ছিল
এক ভীতিপ্রদ পিরামিড ভয়ংকর রূপ।
চেঙ্গিস রাজ পরিবারের শরীরে আঁচড় কতো
ভয়াবহ পরিণাম করিয়া ছিল প্রকাশ সরূপ।
চীন সাম্রাজ্য ছিল দশ কোটি জনগনের ঘন
বসতিপূর্ন একটি শান্তিপূর্ণ সুন্দর দেশ।
চেঙ্গিসের নৃশংস হত্যাকান্ডে জনগণের সংখা
নামিল ছয় কোটি নিদারুণ বর্বরোচিত ক্লেশ।
রোমান সাম্রাজ্যের অঞ্চলিক হিসাব অনুযায়ী
আড়াই গুণ বড় ছিলো চেঙ্গিস খানের সাম্রাজ্য।
বিশ্বের এক-চতুরাংশ ভূমি করিয়া ছিলো
দখল সংযোগ ঘটাইয়া ছিলো শত শত রাজ্য।
ব্যক্তিগত জীবনে চেঙ্গিস একজন চরিত্রহীন
নরপশু প্রকৃতির অভিশপ্ত ঘৃণিত দুর্ধর্ষ লোক।
বিশ হাজার নারীর লুটিয়া ছিল সম্ভব, চেঙ্গিসের
নোংড়ামী দেখিয়া পশুও প্রকাশ করিত শোক।
সন্তান বেশী জন্মদান বীরত্বপূর্ণ কাজ চেঙ্গিস
খান করিতেন মনে প্রাণে বিশ্বাস।
চেঙ্গিস খানের স্ত্রীর সংখা ছিলো পাঁচ শতাধিক,
সন্তান ছিলো অধিক বীরত্বপূর্ণতার বহিঃপ্রকাশ।
মনের হরষে চেঙ্গিস খান শিকারে যাইয়া বন্য
শুকুরকে করিল ধাওয়া।
অশ্বপৃষ্ট হইতে পড়িয়া বুকে পাইল তীব্র ব্যাথা,
অবনতি ক্রমে অনন্তলোকে হইল যাওয়া।
রাজ দরবারের আড়াই সহস্র লোকের বহর
করিল চেঙ্গিস খানের সৎকারের ব্যবস্থা।
একশত ঘোড়ার বহর বাহিনীর মাধ্যমে সমাধি
স্থল করিল নিশ্চিহ্ন, বুঝিবার রহিল না আস্থা।
সৎকার ব্যবস্থা সম্পাদনকারী আড়াই হাজার
জনবল ও পথিমধ্যে অবলোকনকারী জনগণ।
নির্মমভাবে হইল গণহত্যা, অজ্ঞাত করিতে
সমাধি, শনাক্তের আশংকা নিশ্চিহ্নীতকরণ।
চেঙ্গিসের সমাধিস্থলে চল্লিশজন অনিন্দ্য সুন্দরী
নারী, আটাত্তরটি জয়কৃত রাজার মুকুট ছিলো অর্পণ।
প্রচুর পরিমান স্বর্ণমূদ্রা তলোয়ার সাথে রাখিল
পরজনমে করিবে ব্যবহার প্রয়োজনে যখন তখন।
চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পরও মঙ্গোলীয়রা থামেনি
জয় করিয়া ছিলো মধ্যপ্রাচ্য ও পার্শ্বস্থ রাজ্যভূমি।
জ্ঞান গরিমা শিক্ষা সংস্কৃতির লীলাভূমি মধ্যপ্রাচ্য
ঐক্য নেতৃত্বের অভাবে পরিণত হইল সহকর্মী।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঘন্য বর্বরোচিত
অভিশপ্ত সাম্রাজ্য চেঙ্গিস খান করিয়াছেন রচনা।
কোটি কোটি মানুষের তাজা রক্তের যেন লাল
গালিচা সাম্রাজ্যে বিছাইয়াছে করিতে অভ্যর্থনা।
জুন ১২, ২০২১