মহাবীর বারকী খান নওমুসলিম গোল্ডেন
হোর্ডের সার্থক অধিপতি  অবিসংবাদিত।
মোঙ্গলীয়দের প্রথম নন্দিত নেতা ইসলামের-
সুশীতল ছায়ায় নিজেকে করেছিল মহিমান্বিত।

বারকীখান মুসলিম বিশ্বের তরে আজীবন
স্বজাতির বিরুদ্ধে রণকৌশলে লড়াই করে।
মামলুক সুলতান বাইবার্সের সাথে মিত্র গড়ে
আমরণ বীরদর্পে যুদ্ধ-কূটনৈতিকচাল খেলে।

স্বজাতি মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে কখনো কখনো
তিনি সরাসরি তুমুল যুদ্ধে পরেন জড়িয়ে।
কূটনৈতিকচালে কখনো মোঙ্গলদের ভিতর
বিভেদ তৈরীকরে মেরুদণ্ড ফেলেন ভাঙিয়ে।

মোঙ্গলীয় উচ্চপর্যায়ের রাজসভা যোগদিতে
ইউরোপ থেকে রাজধানীতে করলেন পদার্পণ।  
বুখারা শহরের মধ্যদিয়ে যেতে মরুযাত্রী সুফি
দরবেশ সাঈফ উদ্দিনের সাথে হলো দর্শন।

ইসলামের বিশ্বাস সম্পর্কে বারকীখান সুফি
দরবেশের নিকট মনেপ্রাণে করলো শ্রবণ।
ইসলামের পুতঃপবিত্র শান্তির বাণীতে মুগ্ধ ও
আত্মবিশ্বাসী হয়ে ইসলাম ধর্ম করলো গ্রহণ।

খলিফা মুস্তাসিম বিল্লার পুত্র বক্কর-রুকনুদ্দীন
কারখের শিয়া বসতিতে করে ছিল হামলা।
শিয়া মতাদর্শী আল-কামির প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে
শুরু করে চক্রান্ত, নিয়েছিল শিয়াদের বদলা।

উজির আল কামি অপদার্থ খলিফাকে সেনা
বাহিনীর সদস্য কামানোর দিল কুপরামর্শ।
ইলখানাতের শাসক হালাকুখানের কাছে পত্র
লিখে বাগদাদ দখল করতে পাঠাল মতাদর্শ।

শিয়া সম্প্রদায়ের সহয়তা দুর্ধর্ষ হালাকু বাহিনী
বিপুল সৈন্য নিয়ে বাগদাদ করে তীব্র আক্রমন।
অপদার্থ খলিফা আল-মুস্তাসিম বিল্লাহ ভোগ-
বিলাস আমোদ-প্রমোদ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত তখন।

হালাকুখান বাগদাদ শহর মাটির সাথে মিশিয়ে
দিবে, কখনো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
ভাই বাটুখানের আকস্মিক মৃত্যুতে বারকীখান
রাষ্ট্রীয়কর্মে ব্যতি-ব্যস্ততায় কোন খবর পায়নি।

বাগদাদে গণহত্যার রক্তগঙ্গা বয়ে যাওয়ার
খবর, যখন বারকী খানের নিকট পৌঁছল।
হালাকুর "রক্তের তিলক" পরানোর প্রতিশোধ
নিতে চরম ক্ষুব্ধতার সাথে অঙ্গীকার করলো।

হালাকু মুসলমানদের সমস্ত শহর ধ্বংস ও
খলিফাসহ অনেক বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
আল্লাহর সাহায্যে সকল ধবংস ও নীরিহ-
মানুষের রক্তের বদলা নিব আমি অনায়াসে।

বারকীখান তার প্রতিজ্ঞা যথাযথ ভাবে রক্ষা
করে ছিলেন ইসলামের শির সমুন্নত রাখতে।
স্বজাতি আরব ক্রুসেডার পশ্চিমা খ্রিস্টানদের
সাথে করে যুদ্ধ শুধু ইসলামের স্বার্থ রক্ষার্থে।

অন্তরে প্রচণ্ড ক্ষোভ তবুও হালাকুকে শায়েস্তা
করতে সরাসরি যাচ্ছিল না দ্বন্দ্বে জড়াতে।
পদক্ষেপ না নিলেও ক্রুসেড- ইহুদীর চক্রান্তে
মুসলিম ভূমি দখলদারিত্বে থাকবে এগোতে।

বারকীখান অভিনব কায়দা আঁটিলেন ফন্দি,
হালাকুকে করবে তীব্র ভাবে গতিরোধ।
টেম্পলার - ক্রুসেডারদের চরম শিক্ষা দিতে
পোল্যান্ডে করলো হামলা, হলো অবরোধ।

বারকীখানের ধোলাই খেয়ে পোপ নীতিমালা
বাধ্যতামূলক ভাবে করলো জারি।
মোঙ্গলদের সাথে সম্পর্কের ফলশ্রুতিতে
খ্রিস্টান দুনিয়া থেকে একঘরে করবে তারি।

বারকীখানের অভিযান খুবই চমকপ্রদ ফলপ্রসূ
হয়, হালাকুর মেরুদণ্ডে পচন ধরতে শুরু হয়।
নীতিমালায় টেম্পলার ক্রুসেডার আর্মেনীয়া
জর্জিয়া হালাকুকে পরিত্যাগ করতে বাধ্য রয়।

বারকীখান চালাকি করে ইলখানাত-গোল্ডেন
হোর্ডের সীসানার কিছু অংশ আপত্তি করেন।
হালাকু অনিচ্ছাসত্ত্বেও  সৈন্যসামন্তের কিছু
অংশ সীমান্তে স্থানান্তর করতে বাধ্য হলেন।

আরব ভূমির আক্রমণ বিমুখী করতে বারকী
সীমান্তে আরো বেশী গুপ্তহামলা দিল বাড়িয়ে।
উপায়ান্তর না পেয়ে হালাকু সিরিয়ার পশ্চাতে
ককেশাসের দিকে ঘোড়ার মুখ দিল ঘুরিয়ে।

হালাকু খানের পরবর্তী দূরদর্শী পরিকল্পনা
ছিল মিশর করতে আক্রমণ।
মঙ্কিখানের আকস্মিক মৃত্যুতে কিতবুকাকে
দায়িত্ব দিয়ে বাহিনীসহ করুলতাই করে গমন।

কিতবুকা আইনজালুর প্রান্তরে মামলুকদের
নিকট অতি-শোচনীয়ভাবে হলো পরাজিত।
বারকীখানের কূটনৈতিক দূরদর্শীতায় তখন
টেম্পলার ক্রুসেডার'রা সাহায্য করে রোহিত।

বারকীখান ভাল করেই জানতেন রক্তপিপাসু
হালাকু অবশ্যই প্রতিশোধ নিতে হবে অগ্রসর।
মামলুকদের পক্ষে এ রক্তগঙ্গার ঝড়-
রোধকরা মোটেও হবেনা কখনো সম্ভবপর।

বারকীখানের গুরুত্বপূর্ণ  কিছু সিদ্ধান্ত বিহীন
অসম্ভব মুসলিম ভূমিরক্ষা করার উপায়ন্তর।
মোঙ্গলীয়দের মৃত্যুর পরোয়ানা লিখতে হবে
বারকীখানের অন্যথা কখনো হবেনা রূপান্তর।

বারকীখানের সুবর্ণ সুযোগ ছিল মোঙ্গলদের
সাথে দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা বড় সাম্রাজ্য গড়ার।
মোঙ্গলদের ঝড়োগতির সম্মূখে ধূলোর মতো
উড়িয়ে যেতো দুনিয়ার সমস্ত শক্তির সমাহার।

এতো লোভ-লালসা এতো সফলতা এতো-
প্রাপ্তি তবুও সিদ্ধান্তে ছিলেন তিনি অনড়।
ইসলামের মূল্যবোধ ও নিরীহ মুসলমানদের
রক্ষায় মোঙ্গলদের মরণপত্রে করেন স্বাক্ষর।

মঙ্কিখানের মৃত্যুর পর গ্রেটখান হওয়ার জন্য
শুরু হলো করুলতাইয়ে সভা।
সভা শুরুতেই হালাকুর বাগদাদ আক্রমণের
নিন্দা করে ছিলেন তিনি ও ঘোর বিরোধিতা।

হালাকুর উদ্দেশ্য ছিলো কুবলাই খানকে
গ্রেটখান করতে নির্বাচিত।
বারকীখান নিজেকে গ্রেটখান করতে পারতো
নির্বাচিত কিন্তু ইসলামের স্বার্থে করলো রহিত।

মুসলমান ও ইসলামের স্বার্থ রক্ষায় অভিযান
গুলো পরিচালনা করার রাস্তা হতো সংকুচিত।
মর্দেবারকীখান তাই নিজে গ্রেটখান না হয়ে
আরিক বুকাকে করে ছিলেন তিনি মনোনীত।

দুটো বিশাল শক্তিশালী দল বিভক্তের কারণে
করুলতাই সদস্য গ্রেটখান নির্বাচনে হল ব্যর্থ।
গ্রেটখানের চেয়ার দখলদারিত্বে কুবলাই -
আরিকবুকার ভীষণ দ্বন্দ্ব, রক্ষার্থে নিজস্বার্থ।

কুবলাই দ্বন্দ্ব-যুদ্ধের কারনে নরপিশাচ হালাকু
খানকে করতে পারেনি কোনরূপ সাহায্য।
বারকীখান সীমান্তে গুপ্ত হামলা বাড়িয়ে দিলে,
হালাকু সীমান্ত রক্ষার ব্যস্ততা ছিল অনস্বীকার্য।

কিছু বছর পর আরিক বুকা পরাজিত হলে,
হালাকু আইনজালুতে হামলার সুযোগ পায়।
শক্তিশালী এলিট বাহিনী রণসজ্জায় সজ্জিত
করে মিশর অভিমুখে প্রতিশোধ নিতে যায়।

কূটনৈতিক চালের আর কোন অভিনব পন্থা-
না থাকায়, আজারবাইজানকে বানাল দুর্গ।
পূর্বস্বত্ব-দ্বন্দ্ব নিরসনে মর্দেবারকীখান সরাসরি
মুখোমুখি হলো হালাকুর, দৃষ্টিভ্রমই ছিল মূর্খ।

শেষ পর্যন্ত দুই বৃহৎ শক্তিশালী মোঙ্গল বাহিনী
তেরেক নদীর তীরে মুখোমুখি হয়ে পড়লো।
সংঘটিত তুমুল যুদ্ধে হালাকু নির্মম পরাজয়ের
আত্মগ্লানি চরম ভাবে আচ্ছাদন করতে হলো

পরিস্থিতি যেন, আইনজালুর চেয়েও গোল্ডেন
হোর্ড-ইলখানাতের দ্বন্দ্ব হলো বেশীগুরুত্বপূর্ণ।
বারকী আমরণ নিজেকে ঢাল হিসেবে করেছে
ব্যবহার, ইসলাম ও মুসলমান বাঁচানোর জন্য।

ইসলাম নিবেদিত প্রাণ, মুসলিম জাহান  ও
মোঙ্গলদের মধ্যে প্রাচীর সেজে রক্ষা করে।
নিবেদিত এই বীর যুদ্ধ অভিযান চলাকালে
অসুস্থতার কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

মুসলিম জাহান ও মোঙ্গলদের মধ্যে মহাবীর
সেনানী বারকীখান বাঁধা হয়ে যদি না দাঁড়াত।
শক্তিশালী বর্বর মোঙ্গল বাহিনীর হাতে হয়ত
মুসলমান নয়, ঘোটা পৃথিবীও ধবংস হতো।

(সংকলিত) জানু ১৭, ২০২২