জ্বীনজাতি পাপ করিতেন রাশিরাশি, হিসাব
নিকাশের ছিলনা কোন খতিয়ান।
জাগতিক মোহের প্রতি ছিল গভীর আসক্ত,
প্রভুর প্রতি ছিলেন নাফরমান।
পাপিষ্ঠ জ্বীনজাতির অতিমাত্রা পাপবোধ
ও নাফরমানির জন্য প্রভু হইলেন ক্ষিপ্ত।
ভবিষ্যৎপ্রজন্মের উত্তরণেও থাকিত জ্বীন
জাতি জঘন্যতম পাপীতাপী ও অভিশপ্ত।
সৃষ্টির স্রষ্টা স্বমূলে ঐ অসভ্য জ্বীন জাতিকে
ধবংস করিতে পাঠাইলেন ফেরেশতাকুল।
সমগ্র পাপিষ্ঠদের ধবংস করিয়া ছোট্ট একটি
শিশুর প্রতি হইল তাহাদের মায়া অপ্রতুল।
ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটির কার্লফের সুগভীরে
লুকায়িত ছিল কুফরির অন্ধকার।
আদি-অন্ত জানিতেন পরম সৃষ্টিকর্তাময়,
তবুও উম্মোচন করিলেন না রহস্যাদ্বার।
ফেরেশতাগণ শিশুটিকে উর্ধ্বাকাশে পালনের
জন্য নিতে চাহিলে, আর্জি কবুল হয় স্থির।
অবুঝ শিশুটিকে লালন পালন করিয়া তৈরী
করিলেন ইসলামিক মহাবীর।
আরাধনা জ্ঞান-গরিমা ও জানার পরিধি
ছিল তাহার অত্যন্ত ব্যাপক।
প্রভুর সাধনা ও প্রার্থনায় ভূষিত হইল এক
দিন ফেরেশতাকুলের উধর্বস্তরের সাধক।
সময় পরিক্রমায় অর্জিত হইল একদিন,
তাহার সাধনার অতুলনীয় সম্মান ও স্বীকৃতি।
স্বীকৃতির ফলশ্রুতিতে তিনি হইলেন,
অবিসংবাদিত ফেরেশতাকুলের সভাপতি।
সম্মানের উচ্চশিখরে আরোহণ করিয়া শুরু
করিল লুকায়িত কুফরির উন্মোচন।
আভিজাত্য ও দাম্ভিকতায় পর্যবসিত হইয়া,
প্রভুর অংশীদারিত্ব অন্তরে করিল উপস্থাপন।
সুদীর্ঘ ছয়লক্ষ পঁচিশহাজার বৎসর প্রার্থনার
অভিজ্ঞতায় ইবলিশ হইয়া ছিলেন দীক্ষিত।
লাওহে মাহফুজে ছয়হাজার বৎসর ফেরেশতা
সহ সিজদারত অবস্থা ছিলেন প্রার্থনায় মত্ত।
সিজদা সমাপ্তির পরক্ষণে দৃষ্টিগোচর হইল,
সিজদাকৃত স্থানে রহিয়াছে চিরকুট।
অবশ্যই তোমাদের মধ্যে একজন হইবে
অভিশপ্ত, পাইবে সে আমার নান্যতের মুকুট।
ইবলিশ করিলেন প্রশ্ন, বল হে প্রভু আমায়,
কে সেই জন হইবে নান্যতের অভিশপ্ত।
সঠিক ভাবে সঠিক পথে সংশোধিত করিব
আমি, আলোর পথে হইবে সে স্বয়ংদীপ্ত।
সংশোধিত না হইলে তাহাকে দিব আমি
অবশ্যই উপযুক্ত কঠোর (শাস্তি) জবাব।
প্রভুর ক্ষমতায় অংশীদারিত্ব প্রকাশিত
হইল, তাহার দাম্ভিকতার ছিল কু-প্রভাব।
প্রভুর ছিল নির্দেশ, অভিমত করিতে ব্যক্ত,
অভিশপ্তের শাস্তি কি রকম দিব আমি তাহারে?
ইবলিশ ব্যক্ত করিল অভিমত, জাহান্নামের সর্ব
নিঃকৃষ্টতম কঠিন শাস্তি রাখিও তাহার তরে।
প্রভু তাহার অন্তরের কালিমা উম্মোচন ব্যতি
রাখিয়া প্রদান করিলেন নির্দেশ।
অভিশপ্তের শাস্তির সংরক্ষিত তোমার লিপিবদ্ধ
অভিমত, দেখাইবে হইলে প্রয়োজন বিশেষ।
সাঈয়াদুল মালাইকা অভিশপ্ত হইবার ইঙ্গিতের
পাইয়া ছিলেন চিরকুট।
আত্ম-অহমিকা ও দাম্ভিকতা না হইল
বোধগম্যতা, করিলনা কার্লফের কলুষিতা বয়কট।
মাটির তৈরী আদম (আঃ) কে সিজদা করিতে
প্রভু দিলেন চুড়ান্ত নির্দেশ করিতে পালন।
দম্ভপূর্ণ আত্ম-অহমিকায় ও দাম্ভিকতা প্রভুর
নির্দেশ অমান্য করিয়া, করিল সে অবজ্ঞা জ্ঞাপন।
সঙ্গীসর্ভগণ প্রভুর নির্দেশ পাওয়া মাত্রই কাল
ক্ষেপণ না করিয়া সিজদায় পড়িলেন লুটাইয়া।
সিজদা হইতে উঠিয়া দেখিলেন ইবলিশের গলায়
নান্যতের মালা জ্বলিতেছে জ্বলজ্বল করিয়া।
প্রভুর জিজ্ঞাসা, আদম (আঃ) কে কেন করিবে
না সিজদা প্রদান, রহিয়াছে কি কারণ?
প্রত্যুত্তরে ইবলিশ জানায়, আমি হইলাম আগুনের
তৈরী, আগুনের ধর্ম হইল উপরের দিকে উড্ডয়ন।
প্রভুর নিকট করিল সে আর্জি, বণীআদম কে
আমরণ ধোঁকা দেওয়ার আমি চাই মহাশক্তি।
প্রভুর নিকট আর্জি হইল কবুল, ঈমানী ব্যক্তির
হইবেনা কোন ক্ষতি, প্রার্থনায় পাইবে চিরমুক্তি।
মুসা (আঃ) কে অনুনয় করিয়া বলিল, তুর পাহাড়ে
প্রভুর সাক্ষাতে বলিও ক্ষমা করিয়া দিতে আমায়।
প্রত্যুত্তরে জানায় প্রভু, ক্ষমা পাইবে সে,
আদম (আঃ) এর কবরে করিতে হইবে সিজদা।
তিরস্কার করিয়া বলিলেন, জীবন দশায় আমি
আদম (আঃ) কে করি নাই কভূ সিজদা প্রদান।
মৃত আদম (আঃ) এর কবরে মাথানত করিবার
প্রস্তাবনা করিলাম আমি প্রত্যাখ্যান।
প্রভু কে বলিলেন, তোমার বড়ত্বের কসম,
বণী আদমকে আমরণ পথভ্রষ্ট আমি করিবই।
প্রভুর বাণী, আমার বড়ত্বের কসম, বণী আদম
ক্ষমা চাহিলে, আমরণ ক্ষমা আমি করিয়া দিবই।
জাহান্নামের অগ্নিকারার বিদগ্ধতার প্রতি,
রহিয়াছে তাহার রীতিমত ভয়ভীতি ও শঙ্কা।
জান্নাতী হইবার জন্য কার্লফে সংরক্ষিত আছে
মুক্তির সনদ দোয়া, তাই ছিল না কোন ডঙ্কা।
রোজ কিয়ামতের শতবৎসর পূর্বে পড়িতে
চাহিবেন মুক্তির দোয়া কিন্তু যাইবেন ভুলিয়া।
ইবলিশ করিবেন ছোটাছুটি ও আত্মচিৎকার,
আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করিবেন তুলিয়া।
কর্মদোষে পরিহিত হইল পাপিষ্ঠ ইবলিশের
গলায় নান্যতের অভিশপ্ত মালা।
দাম্ভিকতা আত্মঅহংকার অভিষিক্ত করিল মুমূর্ষু
ভোগান্তি, নিঃকৃষ্টতম অগ্নিকারার কঠিন জ্বালা।
(সংকলিত ) ডিসেম্বর ১, ২০২০ খ্রিঃ