আমার ছোট্ট বোন, বাবা মা খুব আদর
করে নাম রেখে ছিল দিলরুবা।
সে খুবই শান্ত নরম প্রকৃতির ভদ্রস্বভাব,
হৃদয় জুড়ে ছিল মায়াভরা।

আমি তাচ্ছিল্য করে সব সময় ডাকতাম
তারে ভেটকি নাম ধরে।
বোনটি আমার ধীরেধীরে বড় হয়ে আমাদের
বাড়ী ছাড়ে, অন্যের ঘর আলোকিত করে।

বোনটির কথা মনে হলে প্রতিনিয়ত অশ্রুজলে
হই সিক্ত, কান্নায় দু’নয়ন ভরে।
বোনটি আমার খুব ধৈর্যশীলা, প্রকৃতির
নির্মম পরিহাসে আজ অসহায়ত্ববোধ করে।

আজকের দিনে বেশী বেশী ছোট্টবেলার
কত কথাইনা মনে পড়ে।
আমার ভয়ে থাকত ও খেত আড়াল হয়ে,
তবুও দেখামাত্রই ধমক দিতাম ছুঁড়ে।

দাদু আমার বহুযত্ন করে সবসময় তাকে
দিল্লি নাম ধরে ডাকত।
প্রকৃতির কড়ালগ্রাসে কোথায় হারিয়ে গেলো
সেই দিন, কোথায় তারা, এক সাথে থাকত।

খুব ছোট্টবেলা থেকেই তার ভয়ভীতি ও
অনুশোচনা শক্তি ছিল একটু বেশী।
জোরে ধমক কিম্বা পিটুনি খেলে ভয়ে মুখ
তার নীলবর্ণ ধারণ করে শক্ত হয়ে যেত পেশী।

কোন কিছুর বায়না ধরার সাহস ক্ষমতা
কখনো ছিলনা কেন জানি তার।
বেশী প্রয়োজন মনে করলে দু'চোখের
কোনায় ঝরত অশ্রুধার।

প্রতিবেশী বাচ্চাদের হাতে মারধোর খেলেও
জোর গলায় বলতে পারত না কিছু।
কান্নাকাটি করে বিচার দিত, ঘুরত শুধু
মা'র পিছু পিছু।

এখন শুধু অন্তর পুড়ে হৃদয় কাঁদে, অন্তরে
থাকে ভীষণ শূণ্যতা।
বোনটি ছিল অনেক আদরের সবার যেন
চোখের মণি অন্তরের আত্মা।

ভগ্নীপতি আমার ছিল সুপ্রতিষ্ঠিত সহজ
সরল বন্ধুর মতন।
সবকিছুতেই পরামর্শ নিত আমার প্রয়োজন
হলে যখন তখন।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস একদিন মৃত্যুদূত
এসে হাজির হলো কেঁড়ে নিতে জীবন।
দুনিয়ার মায়া মমতা সাঙ্গ করে, সবার কাছ
থেকে বিদায় নিয়ে পাড়ি জমায় ছেঁড়ে এভুবন।

বোনটি আমার পাষাণচাপা দিয়ে হলো নির্বাক,
মনের আকাশে ভেসে বেড়ায় অমোঘ মেঘ।
সকলের মধ্যখানে থেকেও নিজেকে নিঃস্ব
অসহায় মনে করে অন্তরে তার তীব্র আবেগ।            

জানুয়ারি১০,২০২১ খ্রিঃ