পৃথিবীর বিভীষিকা নৃশংস চেঙ্গিস সমগ্র পৃথিবীর
মানবজাতি এক-নবমাংশ করে ছিলো কচুকাটা।
নশ্বর পৃথিবীরতে এক মুসলিম সেনাপতির ভয়
প্রকম্পিত করতো দুৃর্জেয় চেঙ্গিসের পাষণ্ড বুকটা।
অন্তরে ছিলো অপ্রতিরোধ্য ভয়, সর্বদাই পিছুপিছু তাড়া করতো মৃত্যু-অগ্রদূত জালালুদ্দিন খাওয়ারিজম শাহ।
অভিশপ্ত নরপিশাচ প্রাণভয়ে যুদ্ধ ময়দানে থাকতো
মধ্যেবর্তী, সম্মূখে দিতো নিজপুত্র আত্মরক্ষার চেষ্টায়।
মুসলিম বিশ্বের বাঘ খাওয়ারিজম শাহের হুংকার
চেঙ্গিসের নিকট আতংকের দামামা বাজতো।
দুর্ধর্ষ ভয়ংকর চেঙ্গিস ভয়-আতংকে এ মুসলিম
বাঘের সম্মুখে সর্বদা বিড়াল হয়ে থাকতো।
চেঙ্গিস অবলীলায় বলতো পুরো পৃথিবীর বুকে
একজনই খাওয়ারিজম শাহ তার একমাত্র প্রতিপক্ষ।
অল্প বয়সী এ তরুণ যতোই দেখেছে ততোই মনে হচ্ছে,
তার মতো একটি পুত্র হলে সে হতো অপ্রতিরোধ্য।
চেঙ্গিস তার জীবন দশায় সর্বদাই সুলতান
খাওয়ারিজম শাহের প্রসংশা ছিলো পঞ্চমুখ।
আক্ষেপ একটাই যদি তার মতো একটি পুত্র সন্তান থাকতো, তার বীরত্বে পরিপূর্ণ হতো সমগ্র বিশ্ব জয়ের স্বর্গীয় সুখ।
মঙ্গোল বাহিনীর কান্দাহার অবরোধ, সুলতান
একাই কচুকাটা করেছিলো হাজারোধিক সৈন্য।
অবরোধকারী একটি সৈন্যও জীবন বাঁচাতে পারেনি,
প্রত্যেক সৈন্যের দেহ-মস্তক করেছিলো ছিন্ন।
মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খান জানতো খাওয়ারিজম বেঁচে থাকলে মঙ্গোল সাম্রাজ্য অনিবার্য ধ্বংস, করিবে আক্রমণ।
চিরতরে দুনিয়ায় বুক থেকে নিঃচিহ্ন করতে সমগ্র মোঙ্গল সৈন্যের বিশাল বাহিনী করে আয়োজন।
মঙ্গোল আক্রমণে প্রতিপক্ষ গড়তো প্রতিরোধ নয়তো
করতো পলায়ন, আক্রমণাত্মক দুঃসাহস দেখাতোনা কেউ।
খাওয়ারিজম শাহ প্রতিরোধ চিন্তা না করে ক্ষিপ্র গতিতে
করে অতর্কিত আক্রমণ তুলে রণঢেউ।
সুলতান অস্ত্রের ঝনঝনানিতে কচুকাটা করলো
অধিক সংখ্যক মঙ্গোল সৈন্য অন্যরা করলো পলায়ন।
একের পর এক বিজয় মুসলিম বিশ্বের দ্বারে দ্বারে
জয়জয়কার ধ্বনিত হলো গৌরবের সু-মহান রণাঙ্গন।
কোন এক বসন্তে পরোয়ানের ময়দানে গণিমত
মাল নিয়ে বেধেঁ ছিলো তুমুল দ্বন্দ্ব কথোপকথন।
সেনাপতি সাইফুদ্দিন আগরাক অর্ধভাগ সৈন্য নিয়ে
গভীর রাত্রে গোপনে দল ছেড়ে করলো পলায়ন।
চেঙ্গিস এ দুর্বলতার সুযোগে বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে করলো অতর্কিত লোমহর্ষক আক্রমণ।
সুলতান অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে বীরদর্পে মঙ্গোলদের কচুকাটা করে রক্ত বন্যা বয়ে দিলো রণাঙ্গন।
সৈন্য যখন নিঃশেষ প্রায় কালক্ষেপণ না করে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাঁধা ডিঙিয়ে চেঙ্গিসকে করলো আক্রমণ।
বুকের পাঁজরে টান দিয়ে ঘোড়া থেকে আঁচড়ে ফেলে তরবারীতে করলো প্রহার ঘনিয়ে আসতে মরণ।
রক্ষিত ইস্পাতের পাত দ্বারা কোনমতো ঠেকিয়ে
সুলতানের সাথে সম্মূখ যুদ্ধ এড়াতে করলো পলায়ন।
জীবন দশায় এরূপ কাপুরুষোচিত ঘটেনি কোন
বীভৎস ঘটনা, বীরদর্পে করতো সম্মূখ আক্রমণ।
চেঙ্গিস কখনো সুলতানের সাথে পেরে উঠবেনা, তাই
লেলিয়ে দিলো সমস্ত সৈন্য বাধ্য করতে পরাজয় বরণ।
কোন এক মুহূর্তে হবে দুর্বল, একা কতোক্ষণ চালাবে
রণাঙ্গন, দুর্বলতার হাতছানি করবে আলিঙ্গন।
ক্লান্ত অবসন্ন সুলতান বুঝতে নেই বাকি, তাকে হত্যার
সুযোগ পেয়েও চেঙ্গিসের নির্দেশ তাকে চায় ধরতে জীবিত।
কালবিলম্ব না করে এক ক্ষিপ্র গতির ঘোড়া চেপে
কচুকাটা করতে করতে উঠে যায় সুউচ্চ টিলা অতিদ্রুত।
একশত আশি ফুট সুউচ্চ টিলা থেকে উত্তাল খরস্রোতা
সিন্ধু নদে ঘোড়া সহ দিলো ঝাপ।
উত্তাল সিন্ধু সাঁতরায়ে উঠে যায় ওপারে, চেঙ্গিস শুধু অবাক
দৃষ্টিতে অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলো এতো বাপের বাপ।
সুলতান খাওয়ারিজম শাহ ওপার থেকে চেঙ্গিসের
দিকে তাকিয়ে দিলো এক বিকট অট্টহাসি।
নিমিষেই অট্টহাসির আওয়াজ পৌঁছে গেলো চেঙ্গিসের
কানে, ধরা দিলো তার ব্যার্থতার করুণ গ্লানি।
আল্লামা জাললুদ্দীন রুমি বলেন, সুলতান জালালুদ্দিন
কোন দিন অট্টহাসি দেয়নি তার জীবনে।
অট্টহাসি এ যেন তার ঘৃণা ক্লেশ হচ্ছিল বহিঃপ্রকাশ
অস্বচ্ছ চাদরে ঢাকা সময়ের প্রয়োজনে।
সুলতান খাওয়ারিজমশাহ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ধর্ণা
দিয়েছে বড়বড় মুসলিম শাসকদের সৈন্য দিয়ে করতে সাহায্য।
চেঙ্গিস খানের নাম শুনামাত্রই রক্ত হতো হিম, স্বাক্ষাত
মৃত্যু, ঘুরিয়ে নিতো মুখ করুণ রহস্য।
আরব সাগর থেকে ইরাক, ইউরোপ থেকে চীন সমগ্র
চলতো দুর্দমনীয় চেঙ্গিসের ত্রাসের রাজত্ব।
কবলিত সাম্রাজ্য প্রতিরোধ যুদ্ধের দুঃসাহস দেখালে
বুদ্ধি ভ্রংশ বলে বিবেচিত, করতো নিরুৎসাহিত।
ঘৃণা ক্লেশ নিয়ে ধুঁকেধুঁকে মাত্র বত্রিশ বসন্তে
শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো এ মহান রণবীর।
মুসলিম ও মঙ্গোদের মধ্যে জুলকারনাইন মতো বাঁধা
হয়ে তৈরী করেছিলো অগ্রযাত্রা মুক্তিপথ মহাপ্রাচীর।
(মূলসূত্রঃ সানযাক-ই-ওসমান)
জুলাই৭, ২০২৪