হঠাৎ দেখা
ইন্তিখাব আলম
প্রথম পাঠঃ- অপশন ছিল না
যাত্রাপথে কৃষাণ গঞ্জ স্টেশনে নেমে চায়ে চুমুক দিয়েছি সবে মাত্র,
মেয়ে আমার জানালার পাশে বসে স্টেশনে মানুষের আনাগোনা দেখতে ব্যস্ত।
ট্রেনটি মিনিট পনেরো দাঁড়াবে ---
দুটো জলের বোতল, কয়েকটা বিস্কিটের প্যাকেট,
কিনে নিচ্ছি মেয়ের জন্য।
অনেক টা দূর যেতে হবে, মেয়েকে নিয়ে দার্জিলিং,
জলদা পাড়া, ভ্রমণে বেড়িয়ে পরেছি, পূজোর ছুটিতে।
হঠাৎ অন্তরের মধ্যে একটা ভয়মিশ্রিত চিৎকার দিয়ে উঠল,
দূর থেকে দেখলাম খুব পরিচিত রমণী আমার দিকেই আসছে।
হাতে একটি লাগেজ, পরনে সালোয়ার কামিজ,
গা বেয়ে হলুদ রঙের ওড়না চলে গেছে।
ভালো করে লক্ষ করলাম চোখে গোল চশমা,
পাশ থেকে ১০ বছরের বাচ্চা মা মা করে ডাকছে।
অবশেষে বুজলাম, পরিচিত রমণী আর কেউ নয়,
প্রায় ১৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আমার প্রেম,
আমার জুহি।
পুরানো ব্যর্থতা, লজ্জা থেকে বাচঁতে,
চোখে চোখ পড়ে যাবার ভয়ে
খবরের কাগজ মিলে ধরে নিজেকে আড়াল করার প্রয়াস।
সেই শেষবারের মতো রেস্টুরেন্টে বিদায় দিয়ে এসেছিলাম , তারপর কেটে গেছে পনেরা টা বছর।
পেপারের আড়াল থেকে তাকে দেখার ইচ্ছে হলেও,
সাহস করে উঠতে পারেননি।
এরপর অন্যায়ুন্সমেণ্ট, ট্রেনটি এবার ছেড়ে যাবে।
ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠল,
ট্রেনে উঠে সীটের কাছেই আসতেই দেখলাম,
পাশের সিটটা জুহির।
মনে হলো, হৃদয়ে মধ্যে জোড়ে কেউ ধাক্কা মারলো,
চোখে চোখ পড়ল, ইতস্তত কাটিয়ে মেয়ের পাশে গিয়ে বসলাম।
অনেকক্ষণ নিস্তব্ধতা কাটিয়ে জুহি জিজ্ঞেস করল,
কেমন আছো?
অনেক দিন পর তাই না,
ভাবেনি কোনদিন এইভাবে দেখা হবে।
আমি বললাম পনেরো বছর তিন মাস সাত দিন,
শেষবার দেখা হয়েছিল ২৫এ সেপ্টেম্বর, ২০০৫।
কলকাতায় cc2 তে সেকেন্ড ফ্লোর।
আবার কিছুক্ষণ নিরবতা ,
আমি জিজ্ঞেস করলাম,
এই বুঝি তোমার ছেলে? কি নাম?
বলল, হ্যা, সৌম্যদ্বীপ সেন।
মেয়ে পাশ থেকে বলে উঠল, বাবা, বাবা এতো তোমারেই নাম।।
জুহি বলল, এই বুজি তোমার মেয়ে? ওর মা আসে নি?
আমি বললাম, ওর মা তিন মাস আগে ক্যান্সারে মারা গেছে।
তাই ছুটিতে মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি,
জুহি বলল তোমার মেয়ে দেখতে খুব মিষ্টিতো,
ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে আমার মেয়ে কে দিয়ে বলল, কি নাম তোমার সোনা?
আমার নাম( অনেক ভেবে) সুচরিতা সেন, আমাকে সবাই জুহি বলে ডাকে।
# চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে পাশে থাকবেন বন্ধুরা ।।