চিলের ডাক শুনি সারাটি দুপুর, অতি ক্রুর
মাটিতে নামে না তারা অজ্ঞাত কী হুতাশে
তাদের বিবর্ত চক্র ছড়িয়ে যায় দূর, বহুদূর
নিঃশব্দ ডানায়, মেঘাচ্ছন্ন আকাশে ভেসে

শুনি শিয়ালের চিৎকার, রাত হয় যত স্থবির
অনিদ্রায় জ্বালা করে দৃষ্টি হীন দু’ আঁখিপাত
ঠাওরাতে চাই সময়ের অন্ধকূপ কত গভীর
বিলম্বিত হতে থাকে রাত, আসে না প্রভাত

গাড় আঁধার করে মেঘ ঢলে  পৃথিবীর বুকে
বিদ্যুৎ-দ্যুতিতে নিশ্চল হাওয়ায় ওঠে জমে
বুকে চাপা রুদ্ধশ্বাস | তার বারুদী গন্ধ শুঁকে
মৃত্যুর নেশা পেয়ে বসে মধ্যবর্তী দুই যামে

অরণ্যে উলঙ্গ গাছের কঙ্কাল হয় ঊর্ধ্ববাহু
ভ্রূণের ভঙ্গিতে কুঁকড়ে করি আত্মসমর্পণ
নেমে এসে ধরা গ্রাস করে আকাশের রাহু
ধুসর নিস্তরঙ্গ সমুদ্র, নিশ্চল সময়ের দর্পণ

আকাশে উড়ন্ত চিল, নীচে বিচলিত শিয়াল
এক ক্রুর নভোচারী, অন্য নিশাচর, ক্রুরতর
ঝরিয়ে বিষাক্ত লালা, রাঙিয়ে চোখ লাল
কী অন্বেষণে হন্যে তারা দিনের অষ্টপ্রহর

জানি না ওরা নিকট আত্মীয় কি – না কি দূর
কী করেই বা করি বিচার, ওরা আপন না পর
সবাই যে যার নৃশংস উৎসবে মত্ত ভরপুর
বন্ধ্যা পৃথিবীর বেআবরু বুকে আগ্রাসী যাযাবর

জানি, ওরাও লোলুপ আমারই মত কামনায়
‘কখন নামবে বৃষ্টি, হবে জীবন মরণের প্রণয়’
অধীর অস্থির হয়ে আছি সবাই বর্ষার লালসায়
জেগে জেগে কাটে না অষ্টপ্রহরে এ দুঃসময়

হটাত রাতে শুনি অগুনতি ব্যাঙের ঐকতান
মদ্দা ব্যাঙেরা, অন্ধকারে অদৃশ্য ঝোপঝাড়ে
আজ হয়েছে সমবেত, সরব - করি অনুমান
“বৃষ্টি আসছে, বৃষ্টি !”, শুনি উল্লাস সমস্বরে

উতলা উর্বরা মাদী ব্যাঙ তা শুনে চায় রমণ
আনাচেকানাচে, চকিতে নামিয়ে অবগুণ্ঠন
হয় নির্লজ্জ ; চায় আগামী প্রজন্মের প্রজনন
“নামো বারি, নামো হে, কর কামনা প্রশমন”    ||
--------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৮ জুলাই ২০১৪