তুমি যখন,
উল্লাসে ছিঁড়ে ফেলে জামা, দাবড়ে শীর্ণ বুক
আঙ্গুল রেখে বাঁকা ঘোড়ায়, নামিয়েছ বন্দুক
দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছ মাছিতে; দেগেছ নিশানা
কালো রুমালে বাঁধা অন্ধ, আধমরা লাশখানা
পেয়ে পোড়া বারুদের গন্ধ বাতাসের প্রশ্বাসে
কুঁকড়ে এগিয়েছে তোমারই দিকে, অবিশ্বাসে
তুমি তাও অবিচল, বন্দুক স্থির, লক্ষ্য অব্যর্থ
কান ফাটানো আওয়াজে এক মুহূর্তের অনর্থ
করেছে অর্ধনমিত বন্ধুত্বের অভিজ্ঞান, পলকে
নলচের নীল ধোঁয়ায়, লালচে আগ্নেয় ঝলকে

তুলে তার মাথা, নেতিয়ে পড়া, মৃত্যুর আলসে
জানিয়েছ অভিনন্দন, রক্তাক্ত হাতের কুর্নিসে

তখন,
আমি সবে পা দিয়েছি আমার একমাত্র উনিশে
শরীরটা বাঁধা মাটিতে, মন উড়ু উড়ু আকাশে
বুকের পাঁজরে যত অনাবিল আবেগের উচ্ছ্বাস
‘কিছুতেই দমব না !’, দৃঢ় মুঠোয় আত্মবিশ্বাস
যৌবনের সূর্য মধ্যাকাশে, দূর অস্ত্ তার অস্ত
বন্ধুত্বের বাড়ানো হাত, হোক যতই অনভ্যস্ত
প্রেম, চেতনার দিগন্তে ডুমুরের ফুলের কল্পনা
সুবাসিত না-খোলা খামে বন্ধ ফুল এক অচেনা
তাই চাকরি, উচ্চাশা, সংসার চিন্তা সরিয়ে দূরে
একাগ্রচিত্তে ‘বন্ধুই সব’, এ’কথা রেখেছি ধরে

কিন্তু,
ওই কান ফাটানো আওয়াজে, মুহূর্তের অনর্থে
উড়ে গেল শান্তির পায়রারা পাক খেতে আবর্তে
সত্য অসত্যের তুলকালাম রণে আমরণ যুঝে
নিরীহ নিরপেক্ষ মানুষেরা প্রাণ দিল চোখ বুজে

আর
আমি এগোলাম একধাপে উনিশ থেকে উনত্রিশে
নিটোল অতীত হয়ে ভঙ্গুর, ভবিষ্যতে গেল মিশে
অনাগত বঁধু নাবালিকা, যে ছিল সম্পূর্ণ অপরিচিতা
অপেক্ষায় রয়ে গেল সেই অনাকাঙ্ক্ষিত বাগদত্তা

কেন
পাষাণ হয়ে গেল যা প্রথম প্রাণে ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ?
দশটা বছর লাগল ভুলতে শুধু সেই একটা মুহূর্ত ?

কেন
বন্ধুত্বের বলি নিয়ে বিধাতা করে তার শেষ পরিহাস,
যখনই এক বন্ধুর রক্তে লেখা হয় অন্যের ইতিহাস ?

------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৫ জুন ২০১৪