আলগোছে তুমি যে বলেছিলে, “এই শোন না, লক্ষ্মীটি !
এত অঝোর বৃষ্টির দিনে, নিলে কেমন হয়, ফরাসী-ছুটি ?”

তুমি, বলেছিলে ...
না জেনেই আমার পরিকল্পনা ছিল অন্য - আমি দেখব যে
বৃষ্টির দিনে, চোখ ছাড়া, দৃষ্টিতে আরও কী দেখায় ভিজে

সকালে থেকে ভিজছে তারই সব প্রশ্ন গুলো ঠায় বর্ষাতে
আমি চাই তুমিও ভেজো | আজ ভিজবে কি আমার সাথে ?

তুমি তো দেখনি ...
রাস্তার জল-সমুদ্রে মুকুট-হীন শত ঢেউয়ের ছলছল রঙ্গ
তাতে বিলীন হয়ে, প্রতিবিম্বিত রঙিন জনপথ আজ অনঙ্গ
যে দিকেই এগোই, এগিয়ে যায় আমার অভিমুখিনী তরঙ্গ
আমি পথ হারাই, কাদা পায়ে, কাদাখোঁচার মতই নিঃসঙ্গ

জানো কি আমার ...
কাম্য, ধুসর ঢেউয়ে ভেসে আসা এক মদালসা রাজহাঁস
চোখে পিঙ্গল মদিরা নিয়ে মন্থরগামিনী লাল দোতলা বাস
থামবে ঘণ্টি বাজিয়ে, নামাবে কিছু ঢেউ তোলা ফর্সা পা
আমায় তুলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে এগুবে - ‘যা, যেথা যাবি যা’
দেখব সবুজ আসন উপচে রঙিন বর্ষাতিতে ভিজে মুখ
ভাঙ্গা জানালার সিট খুঁজব, এড়াতে পড়শির সুখ-অসুখ

আজ অফিসটা হবে ফাঁকা, খুলে রাখা যাবে জানালাটা
দেখে নিতে সরু গোবরাঠে, বেপরোয়া গাংশালিক কটা
পূবে হাওয়ায় নাচবে পর্দা, গুটিয়ে আস্তরের সাদা সায়া
ভিজে ডানা থেকে ঝাড়বে শালিক বৃষ্টির গা লাগা মায়া

তুমি আজ থাকবে না, কোকিলা, হাসবেও না অকারণে
বলবে না, “চুপচাপ বসে কেন, কোনও কাজ নেই বুঝি ?”
টেলিফোনটা হবে আজ আমারই, একান্ত এই কোনে,
তোমার সাথে জরুরি কথা বলা যাবে ঢালা, সোজাসুজি

কিন্তু বলব কী ভাবে নিভৃতে, চেয়ে বৃষ্টিতে একনাগাড়ে
দেখেছি আসতে পথের ধারে টেলিফোনের টানা তারে
সারি সারি বৃষ্টির স্বচ্ছ বিন্দুর হিল্লোল ; হাওয়ায় নড়বড়ে
ভিজে চড়ুই তাতে দেয় চুমুক, বসে উচ্ছৃঙ্খল কাতারে

কিন্তু এমনই হয় যদি, আমাদের শব্দের প্রবাহিত তরঙ্গ
কাঁপিয়ে টেলিফোনের তার, ঝরিয়ে দেয় বৃষ্টির ফোঁটা
উড়িয়ে দেয় চড়ুই এর দল, করে দেয় তাদের ছত্রভঙ্গ
আর, তাদের প্রত্যাখ্যানে ছিঁড়ে যায় ভিজে নরম তারটা

তাহলে কি ভাবে গড়ব এই ভিজে দিনের নিবিড় সম্পর্ক
হাতে ধরা টেলিফোনের ছোঁয়ায়, থামিয়ে অসার বিতর্ক

তাই তো বলছি ...
“শোন, কথা শোন, বাড়িতে থেকো না, কোকিলা, লক্ষ্মীটি !
এসে অফিসে দ্যাখো, আমি এসেছি শুধু, তোমায় দেখাতে বৃষ্টি |”

(বরষার আয়োজন)
----------------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৫ জুলাই ২০১৪