৷৷ কালো পরী ৷৷

বাতিঘরের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় একা এক ভবঘুরে
হাতে নিয়ে এক কলসি ৷ কী যে চায় ওতে নিতে ভরে
দিনের সূর্য উঠলেই সে চমকে উঠে করে শাপ-শাপান্ত
সারা দিন চেয়ে আকাশের পানে, বকে বকে হয় ক্লান্ত

ঠিকরে পড়া রোদের ছটায় ধাঁধিয়ে ঝলসে যায় দু’চোখ
তবুও লোকটার গোঁ নামে না, চেপে ওঠে রগচটা রোখ
অস্ত যখন যায় সূর্য, তখন তার চোখে আসে জল ভরে
কলসিটা বুকে চেপে কত হাসি হাসে আহ্লাদে আবদারে

বাতিঘরে জ্বলে উঠলেই বাতি, ছুটে যায় সে সাগর জলে
স্নান করে ধুয়ে নিতে চায় দিনের উত্তাপ চোখের কোলে
তারপর দুহাতে ধরে কলসি, বসে আগলায় ঐ বাতির তল
যেখানে শুভ্র আলোর অভ্র স্ফুলিঙ্গ ছিটিয়ে পড়ে অনর্গল

সারা রাত বসেও জানে না সে কেটে গেল কোন প্রহরটা
শুধু কলসি ভরে নিতে চায় ওই আলোর যত ছিটেফোঁটা
বোঝে না সে জরাজীর্ণ মাটির কলসিটায় আছে শত ছিদ্র
তাই সে কলসি ভরে আলো ধরে, রয়ে রাতভোর বিনিদ্র

কেউ জানে না, লোকটা রোজই দেখে রাত্রির কালো পরী
আলোর ফোয়ারায় স্নান করে ভোরে জাগে বড় মনোহারী
লোকটা তাই তো  ভাবে প্রিয় অন্ধ কাজলা মেয়েটির কথা
চোখের অদেখা কালো রং নিয়ে নেই যার কোন মাথাব্যথা

ভেবেছে লোকটা, ঐ আলো ধরে দেবে মেয়েটিকে নাইয়ে
রংটা না হোক না ফর্সা, নয়নের দৃষ্টি যদি তাই দেয় ফিরিয়ে
তখন কাজলা প্রশ্ন করে করুক, “আমি কেন এত কালো ?”
বলবে সে হেসে, “হবে না রে আর, এর চে’ ভাগ্যি ভালো”

“আমার ভরসায় থাকিস নে মেয়ে, দরকার তোর ভাগীদার
যা তুই হয়ে জলকন্যা, সমুদ্রে পেতে নিতে তোর সংসার”
কাজলা চোখে চেয়ে যদি বলে মেয়েটি, হয়ে চপল, মুখরা
“ধরো সমুদ্রের সাথী না মানে, চায়, হোক মোর রঙ গোরা ?”

লোকটা ভেবে চিন্তে দেয় উত্তর ; বলে, সামলাতে আস্কারা
“ফিরে আয় না, তোকে দেখিয়ে দেব এক আলোর ফোয়ারা
দেখবি জ্বলে বাতিঘরে, জাহাজকে পথ দেখানোর এক বাতি
আঁধার-কালো রঙ ধুয়ে করে ফর্সা, সে আলোয় নেয়ে রাতি”
...

(গল্পটা এখানেই শেষ হত, কিন্তু ...)
ভয় একটাই, আলোয় নেয়ে, মেয়েটিও যদি হয়ে যায় রাত্রি
সমুদ্রের সে ও ভবঘুরেটা হন্যে হয়ে খুঁজবে কি একই পাত্রী ৷৷

----------------------------------
ইন্দ্রনীর / ৩ অগাস্ট ২০১৪