বড়রা অনেকবার বারণ করেছে বেশি রাত করে ফিরতে, বা বন্ধুদের দল থেকে আলাদা হয়ে একা ঘুরতে।
একেই দিনকাল খারাপ, তায় কলকাতায় এখন দেওয়ালির বাজার ! “একেবারে সেফ নয় এখন মেয়েদের বেশি বেরনো !”, দাদা খুব প্রোটেক্টিভ তিতলির ব্যাপারে। আর এর উপর মা তো আছেই ! সারাদিন এখানে যেওনা-সেখানে যেওনা ইত্যাদি । তবুও ঘটে গেল ঘটনাটা !
গাড়িটা সম্ভবতঃ ওদের ফলো করছিল কিছুক্ষণ আগে থেকেই ! হাজরা-কালীঘাটের ঠাকুর দেখে বেরিয়ে, ফায়ার ব্রিগেডের কাছের অপেক্ষাকৃত স্বল্পজনাকীর্ণ লেন দিয়ে, লঘুছন্দে, ধীরেসুস্থেই হাঁটছিলো ওরা চার বান্ধবী। উৎসবের সুন্দর সাজে সাজা, উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভরপুর, আনন্দমুখর, ফার্স্ট ইয়ারের চারটি তাজা তরুণী ; চারটি ফুরফুরেপাখার প্রজাপতি যেন। স্বতঃস্ফূর্ত, উচ্ছল ।
হাল্কামেজাজী, মজাদার আড্ডার স্রোতে ভেসে যেতে যেতে, হাসির কলতানে গা ভাসিয়ে, ওরা একদম খেয়াল করেনি কখন ডাস্কি-ব্রাউন সেই এস্টিলোটা হঠাৎ করে ওদের পাশ ঘেঁষে ব্রেক মেরেছে !
তারপর আচমকা খুলে গেল গাড়ির দরোজা। বিদ্যুৎগতিতে ঘটে গেল সর্বনাশা সব ঘটনাপ্রবাহ ,
ওরা কেউ কিছু বুঝে ওঠবার আগেই !
দলের বাইরের প্রান্তে থাকা তিতলিকে মুখে রুমাল চেপে ছোঁ মেরে তুলে নিয়েছে ওরা গাড়ির ভিতরে, ঠিক যেভাবে হরিণের পাল থেকে বাঘ থেকে ছিনিয়ে নেয় তার শিকার !
তারপরেই হতবুদ্ধি, আতঙ্কে থুম মেরে যাওয়া তিন বান্ধবীকে পিছনে ফেলে গাড়ি ছুটেছে আলিপুরের দিকে ।
গাড়ির ব্যাকসিটে ছটফটানি। দুপাশে বসা দুই যুবকের শক্ত হাতের মুঠো থেকে প্রাণপণ যুদ্ধে নিজেকে মুক্ত করার বেপরোয়া চেষ্টায় ব্যস্ত মুখবাঁধা, হতচকিত, আতঙ্কিত তিতলি। নিজের কাঁপা বুকে হাতুড়ির ঘা শোনা ছাড়াও তার কানে আসছিল কোথায় কোন নির্জন-গোপন জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাকে তছনছ করা হবে, ইত্যাদি প্ল্যানিং।
প্রচন্ড বমি পাচ্ছিলো তিতলির গাড়ির ভিতরের ওই পাঁচটা ঝকঝকে, সম্ভ্রান্ত দুর্বৃত্তের পারফিউম, ঘাম ও অ্যালকোহলের উগ্র গন্ধের দমকে।
ঠিক এমনই সময় হঠাৎ ,
পথের সামনে ছেলে-ছোকরারা জ্বালালো একটা দীর্ঘস্থায়ী, উজ্জ্বল তুবড়ি । আর তার চোখ ধাঁধানো ফ্ল্যাশে চকিতে সামনের সিটের ছেলেটি ঘুরে দেখলো তিতলিকে একবার, মূহুর্তের আনমনা খেয়ালে ।
আর তারপরেই সেই বহুপরিচিত কণ্ঠস্বর !!
তবে এখন যেন একটু অপরিচিত। ঠান্ডা ও কঠিন ।
“ওকে নামিয়ে দে ”, বলল সে হঠাৎ ! বাকিরা অবাক ! গাড়ির মধ্যে থমথমে স্তব্ধতা ।
“ওকে নামিয়ে দে কুশাগ্র !” ভয়ঙ্কর স্বরে আদেশের পুনরাবৃত্তি এবার।
শুরুর শক কাটিয়ে তিতলির মুখের বাঁধন খুলে তাকে মাঝপথে নামিয়ে দিল ওরা।
আর তিতলি?!
“দাদা, তুই?!!!’’ নেমে যাওয়ার আগে একবার শুধু ফিসফিসে গলায় বলতে পেরেছিল তিতলি ।