দেখে নিও কলকাতা
একদিন আমাদের বিচ্ছেদ হবে।
তোমার অশ্রু আমাকে বিদায় দেবে
তুমি যেন জীবনানন্দের কবিতা, রোদ্যার ভাস্কর্য,
ভিনসেন্টের আঁকা ছবি কিংবা লিওনার্দোর মোনালিসা।
তুমি স্থবির আমি চলমান।
আমাদের এই যাওয়া আসার মাঝে
যেন অধিক কিছু থেকে যাবে।
তিলোত্তমা,
একদিন আমাদের বিচ্ছেদ হবে।
তুমি শহরের স্নিগ্ধ বাতাস
আমি খোলা জ্বালানা
তোমার তটস্থ ফেনিল ব্যস্ততায়
স্রোতের মত ধেয়ে আসে অন্ধকার।
তুমি সব বোঝো!
যেমন গাণিতিক টেবিলের অসম্ভব সমাধান,
পিথাগোরাসের উপপাদ্য,অর্থনীতি রাজনীতি,সমাজনীতি,মাক্সবাদ,নারীবাদ,
শিল্প সাহিত্য,ইতিহাস, ভুগোল,আস্তিকবাদ,নাস্তিকবাদ,
শুধু ঠিক বুঝলে না
মনো জগৎ থেকে বেড়ে উঠা আমার মন।
কথা ছিলো কলকাতা,
শীতের ভোরে চিৎপুরের রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটবো
জীবন দেখতে দেখতে চলে যাবো গঙ্গায়।
বইপাড়া,গড়ের মাঠ,প্রিন্সেপঘাট,গড়িয়া হাটের মোড়,
ধর্মতালা,নন্দন কিংবা গিরিশ মঞ্চে আর যাওয়া হবে না।
দেশপ্রিয় থেকে ট্রামে উঠে
আর জীবনান্দের জন্য দুঃখ হবে না।
দেখে নিও কলকাতা
একদিন আমাদের বিচ্ছেদ হবে।
তোমার অশ্রু আমাকে বিদায় দেবে
তুমি সহস্র বছরের চেনা নারী।
সৌন্দর্যের দ্যুতি লুকানো হীরে কিংবা পান্না।
কথা ছিলো তিলোত্তমা
রোদ দুপুরে তোমার শহরে ভিঁজে বাড়ি ফেরা
সুতানুটি গ্রামে পুর্তগিজ দস্যু আর ইংরেজ বেনিয়ার ছড়ি
ঘোরানো লাল চক্ষুর গল্প শোনা।
কথা ছিলো কলকাতা,
পায়ে হেঁটে কুয়াশা ভেজা এসপ্লানেডের ফুটপাত দিয়ে
সোজা মেট্রোরেল।
হাওড়া ব্রিজ দিয়ে ব্রহ্মপুত্র দেখা।
তোমার শহরের অলি গলি প্রেমের গন্ধে মিশে যায়
চোখ ধাঁধিয়ে যায় নিয়ন আর সোডিয়াম আলোর রোশনায়।
প্রিয় কলকাতা
তবুও আমাদের বিচ্ছেদ হবে।
বস্তা ভর্তি আবর্জনার মতো গ্যালারি জুড়ে
তোমার আমার স্মৃতিরা সব থেকে যাবে মস্তিষ্কের শিরা উপশিরায়!
তোমার শহরে হাতে হাত রেখে পুজো হয়।
আর ঠিক বিসর্জনের মতোই নিমিষেই
মানুষ মানুষকে ভুলে যায়।
তোমার শহরে মানুষ মানুষের ভীড়েই মানুষ হারায়।