কাক

হাঙরের মতো হা করে আছে বিরাট গহ্বর,
লকলকে জিভে চেটেপুটে খায় লেদ মেশিনটা
রৌদ্র ঝড় জলে মরিচাধরা লোহালক্কড়,
ভবনবল্লভীতে গাছের কড়কড়ে স্বরে ভেঙে পড়ে
রোদ-ঝলসান একজোড়া কাকের ডানা —
ক্লান্তিতে সে এই কংক্রীটে যখন আসে নেমে —যেন
হাওয়ার ধাক্কায় বুড়ো পাতা ঝরে পার্কের রাস্তায়।
কাক— এই কাক —
লৌহডানায় যান্ত্রিক নিয়মে অনেক উপর থেকে দেখে
নীচে পড়ে আছে শহরটা পতিতার শাড়ির মতন,
বিষাক্ত লালায় নদীগুলো আচ্ছন্ন হয়ে আছে
রোগক্লান্ত নগ্ন শিশুর অপুষ্টিতে ভোগা দেহের মতো।
কাক — এই কাক —
দেখে স্তূপে স্তূপে জমে আছে কলঙ্কের বোঝা অলিতে গলিতে,
স্তুপ ঘেঁটে ঘেঁটে দেখে রোজ,  যত জঞ্জাল সব অহেতুক —
খাবার কোথাও নাই। হাপরের মতো ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায়
অট্টালিকার পলেস্তারাখসা চিলেকোঠায়, মৌন ধ্যানীর মতো
নিশ্চুপ বসে বসে ভাবে —অপ্রয়োজনের এতো আয়োজন।  
এই কাক—
অনেক ভিজেছে গলিত পঁচা খাবারের আশায় কত ডাস্টবিনে
অনেক আষাঢ়ে,  অনেক শ্রাবণে।  অনেক পুড়েছে নগরীর
ঝলসে যাওয়া গ্রীষ্মে বস্তির টিনের চালে, আয়নার মতো
মসৃন পিচঢালা রাস্তায়,  ভারতে,  মিশরে, এথেন্সে,  মেসোপোটেমিয়ায়—
আরও কত স্থানে কত যুগ যুগ ধরে।  

কাক—এই বার্ধক্যে নত কাক —
চোখ বুঝে ঝিমোয় বাদুরের মতো পাতাশূন্য এই মহানিম গাছে।
চোখে তার রোদের রূপালী ঝলকের মতো তারুণ্য আর নেই,
নখে আর নাই প্রথম যৌবনের বলিষ্ঠ প্রত্যয় — ঠোঁটে তার নেই আর
শক্তি আগের,  কেবল আছে ক্লান্তি দেহমন জুরে আর অবসাদ,
অবসাদ, অবসাদ— পাহাড়!