আমাদের পায়ে আছে বাধা এক অদৃশ্য দড়ি
বিষহীন সরু সাপের মতন — মুহূর্তেই করতে পারি
ছিন্নভিন্ন রাতের আঁধারে যেমন বখাটে ফেলে ছিড়ে
বিপন্ন তরুণীর ভয়ার্ত শাড়ির অবাধ্য আঁচল, কিন্তু,
অভ্যাসের বশে পরে আছি দড়ি, ছিড়তে না-পারি,
নারীর অলংকারের মতো মায়া জড়ানো এই বাঁধন ;
পুষে রাখি পরম যত্নে মৃত শাবক আকড়ে থাকা
বানরের মতো।  চারদিকে ঊর্ণাজাল হয়ে আছে উন্মুখ,
অসীম আক্রোশে ম্রীয়মান সত্তার কফিনে পেরেক
ঠুকে আবদ্ধ করে রাখে প্রবীণ দক্ষ দারুশিল্পী যেন।
আওয়াজ আজ থেমে যায় জনস্রোতে  উচ্ছসিত
বহুরঙা মাথাওয়ালা মানুষের একান্ত স্বার্থ রক্ষায়,
না-জানি কখন মূল্যবোধের হুল উচিয়ে তেড়ে আসে
বিষাক্ত উন্মাদ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য আটপেয়ে বিচ্ছু
দোপেয় ছদ্মবেশে দিবালোকে আমার দরজার কাছে,
উন্মত্ত ক্রোধে জনতার ভীরে আবার যত্ন করে দেয়
পড়িয়ে সে অদৃশ্য দড়ি,  ছেড়েও ছাড়তে না-পারি!
এভাবেই পায়ে পায়ে ঘোরে মৃতদের অতৃপ্ত ছায়া
মনে হয় বাতাসের মতো ওরা সবখানে প্রবেশের
পেয়েছে একচ্ছত্র অধিকার,  জীবনের জটিল
অলিতে গলিতে,  নবদম্পতির সুখদ বাসর ঘরে,
মুমূর্ষুের ওষুধের বাক্সে,  পার্কের ঝোপের আড়ালে,
আপনজনের হাসি কিংবা কয়েদির নির্দয় ফাঁসি -
সবখানে নিঃশ্বাস ফেলে দেয়ালে বেয়ে নিঃশব্দে
হেঁটে যাওয়া গিরগিটির মতো, এ জীবন অনিশ্চিত
ডাব বিক্রেতার বৃদ্ধাঙ্গুলি কিংবা নাপিতের ক্ষুরের
নিচে আরাম প্রত্যাশী কোমল গলার মতো।
নিয়মের ঠুসি মুখে দিয়ে জাবর কাটি পরম নিশ্চিন্তে
গা ঘষতে ঘষতে বিশাল খামারের বলদের মতো,
আমাদের এই সারল্য দেখে মাথাওয়ালারা ঘুমাতে
যায় এসির টেম্পেরেচার ১৮ কিংবা ২০ এ রেখে।
তারপর একদিন অধিকার চেয়ে যদি দুরন্ত সিংহের
মতো নেমে আসি পথে,  ঘুম উধাও কৃকলাশ তেড়ে
আসে হাতে জলকামান, টিয়ার গ্যাস আর নিয়ে
অব্যর্থ রাবার বুলেট! শান্তির চিন্তায় সমগ্র অনুগত
শ্রেণি বলকানো ভাতের মতো অশান্তিতে পড়ে ফেটে
নিরস্ত্র, নিরুপায় আমাদের মতো একেকটা দড়ি ছেঁড়া
ষাঁড়ের উপর,  অথচ কতদিন বাজারের সকল পণ্য
,  হাসপাতালের ফ্লোরে পশুর মতো শুয়ে থাকা
রোগী ,  তাপদাহে পুড়ে যাওয়া কর্মঠশ্রেণির মুখ,
নিরপরাধ কয়েদির নিরুপায় আত্মসমর্পণ, পলকে
পলকে জীবনের অবসিত মান দেখেনি বিরান বনে
পাখির ডাকের মতো স্নিগ্ধ শান্ত প্রশান্তি কতকাল,
তবুও এমন তো উদ্ভ্রান্ত হয়ে ওঠেনি কখনো  মাথা
মাথাওয়ালাদের,  যেন হাড়ির নিচে লেগেছে উত্তাপ
তাই তারা নেমে আসে বলকানো ভাতের মতো
খামারের গরুর মুখে ঠুসী আর গলায় লাগাতে দড়ি।