প্রতিশ্রুতি
সময় স্রোতে ম্লান স্বীকারোক্তি, না শোনা প্রেমের গানের মতো,
রেখে দেওয়া সিনেমার শেষটুকুর মতো, অনুপলব্ধ আবেগের উচ্ছ্বাসের মতো,
অপাঙ্ক্তেয় রয়ে যায় কত প্রতিশ্রুতি ;
কত অব্যক্ত অনুভব কেঁদে কেঁদে মরে যায়
ধূসর ছাইয়ের মতো, বিধবার মিলনের আশার মতো অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাসে উবে যায়।
জীবন নদের ক্লেদাক্ত জল,
নয়, এ যে ব্যথার নীলোৎপল—বেদনা-বৃন্তে প্রস্ফুটিত একটি শতদল।
সুখের ছদ্মবেশে কোন মাহেন্দ্রক্ষণে দুঃখ এসে, বলেছিল কথা সলজ্জ কপট হাসি হেসে।
আকাশ অলিন্দে সে রাতে প্রণয়ের রাগে চোখে মুখে কী যে ঘোর লাগে–
কিছুই আর—
পারিজাত, স্বর্গের মন্দার কেঁদে কেঁদে শ্রান্তদেহে ফিরে গেছে ;
দেখিনি কিছুই তার।
শতাব্দীর সুরভিত রাত - কালের স্নিগ্ধ মৃত্যু-শীতল হাত আমার হৃদয়ে রেখে
অলির গুঞ্জরিত সুরে আমার প্রাণে দিয়েছিলে তুমি বিষাদের তিক্ত বিষ মেখে—
বলেছিলে , আমাদের প্রতিটি রাত এখন এমন করেই হবে অনন্ত অফুরন্ত রাত!
পূর্ব আকাশে উদিত সূর্য আর পূর্ণিমার চাঁদের মত অভ্রান্ত সত্য জেনে– ধরেছিলাম তোমার হাত:
নিশ্বাসের প্রতি যত অবিশ্বাস, তারও বহুগুণ অবিশ্বাস নিয়ে চলে গেছ —
চলে গেছ ধ্রুব সত্যের মতোই প্রতিশ্রুত সেই অনন্ত রাতের অযুত জ্যোৎস্না নিয়ে!
আমি এখন আরব্য রজনির জিন ভূতের সাথে প্রতি রাতে তোমার গল্প করি -
ওরা তবু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে প্রতিরাতে আমার সান্নিধ্য উপভোগের জন্য হাজির হয়ে যায় চেতনার বিরামহীন নাট্যশালায়
আর?
তুমি ?
তোমার প্রতিশ্রুতি যেন মোমের তাজমহল - লেগেছে আগুন তাতে আমার মৃত্যুর প্রথম প্রহরে —
কিংবা প্রতিশ্রুত হয়েই মরে গেছি আমি!
ধসে পড়া সিংহাসনের দিকে পরাস্ত নৃপতির চোখে চেয়ে থাকি আমি অফুরন্ত সম্ভাবনার সেই রাতের দিকে —
যেখানে নিরন্তর সত্য আর অবান্তর মিথ্যের পথ দুই দিকে গেছে সরলকোণে বেঁকে!
অপার্থিব অনুভবের অনুরণনে অজস্র অশ্রুর অবদমন — কত কাল?
হৃদয় গৃহহারা পথিক, সে শ্রান্তির জলে হাবুডুবু খাবে কত রাত জ্যোৎস্নাহীন হয়ে?
আঘাতের অসহ্য আঘাতে লণ্ডভণ্ড — মুহূর্তের ভিক্ষা চেয়ে কতক্ষণ নিজের ভেতরে নিজেকে আবদ্ধ করা যায়!
মায়া হরিণের হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে নিয়ে গেছে এমন কত প্রতিশ্রুত নির্দয় শিকারি —
কে যেন কোথায়, কেঁদে কেঁদে কয়, আর নয় —আর নয় ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকা শিশিরের সংশয়।
মুক্তি চাই, মুক্তি চাই— প্রতিটি মানুষের হৃদয় মুক্তি চায়
তবু সমূহ বিপদের মতো চেতনার সিংহদ্বারে অজস্র প্রতিশ্রুতি অপেক্ষায় রয়—
আর বজ্রকঠিন হাসি হেসে শুধু একটি কথাই কয়,
মুক্তি নাই — কোথাও মুক্তি নাই!