এই একুশ শতকের আধুনিকায়নের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে দাড়িয়ে
আমি কমলিনী আপনাদের বলছি...
একটি সাম্প্রদায়িক প্রেমের আখ্যান ;যেখানে হৃদয়ের,
মানবতার কোন মূল্য নেই।
আপনাদের কাছে প্রশ্ন, আধুনিক পৃথিবীতে আজও
কিসের ধর্মান্ধতা, কিসের বিভাজন
দেশ -মানুষের মাঝে কেন এত বিভেদ?
আছে এসবের কোন উত্তর!
ভালোবাসার কোন ধর্ম-বর্ণ হয় না
শুধু মানুষ হতে হয়।
ভালোবাসলে হতে হয় দুটি সত্ত্বাকে সমুদ্র
অথবা আকাশের মত উদার।
তেমনি আমি, না ভুল বললাম, আমরা
ভালোবেসেছি মনুষ্য তৈরি দু'টি
ভিন্ন দেশ, ধর্মে জন্ম নেওয়া মানবতাপ্রেমী
ধর্ম-বর্ণহীন প্রেমীয় অন্তর।
আপনারা জানেন,
কবিতা আমাদের জীবনের প্রথম প্রেমের নাম
দু'জন দু'জনার পরিচয় কবিতায়,
আর কবিতাকে কণ্ঠে ধারণ করতাম বরাবর
সংসার যাপনের মত করে।
আমরা কখনো জানতে চাইনি একে অপরের
দেশ-জাতপাত উঁচুনিচুর কথা
কাব্যিকতার মোহনায় কখন যে মিশে গেছি
বিশ্বাস করুন; বুঝতে পারিনি।
আজ যখন জানতে পারলো সমাজ পরিবার
আমাদের স্বর্গীয় প্রেমের কথা
টেনে আনলেন সবাই সমাবেত হয়ে ধর্মকে;
এঁকে দিলেন অনুশাসনের সীমারেখা।
অথচ এই সমাজ, পরিবার প্রতিদিন লক্ষকোটি
কন্যার দায়মুক্তির প্রার্থনা করেন
মাথা ঠোকেন ধর্ম নামক পাথুরে দেয়ালে
তোমরা বাহবা পাওয়ার যোগ্য।
মধ্য এশিয়ার সমস্ত চন্দ্র, গ্রহ, তারা
সবাই জানে আমাদের কথা
কারো আপত্তি না থাকলেও আপত্তি আছে
দুটি দেশের, দুটি ধর্মের।
কথা বলুন,
মানবতা, ধর্মাবতার আপনারা সবাই চুপ কেন?
কোথায় গেল মুখের বুলি
বলুন, আমরা ভালোবেসে কি দোষ করেছি ?
চুপ থাকবেন না আপনারা।
আমি মানি না সেই প্রথা, বিশ্বাসকে
যা মানুষকে আলাদা করে
মানুষের কাছ থেকে, দেয়াল তোলে বন্ধনে
ধিক্ এমন হীনমন্য বর্বরতাকে।
আমি কোন বিশেষ শ্রেণি, ধর্ম, প্রথার
বলি হতে চাই না
স্বাধীকার চাই, চাই ভালোবাসার নিশ্চিত অধিকার
শুধু মানুষ হতে চাই।
আপনাদের বলছি, ধর্ম প্রণেতাগণ অহিংসার
কথা
বলে যান অকপটে জনে-জনে
প্রয়োজনে টুটি চাপুন স্বার্থাঘাত হলে; না'হয় আপনাদের লোকে মানবে কেন?
আপনাদের লজ্জা করে না ? আপনারা অকপটে
সাম্যের নিঃস্বার্থের কথা বলেন!
অসাম্প্রদায়িক বলেন নিজেদের, কোথায় থাকে তখন
এসব ধর্ম-জাতকুলের বেষ্টনী?
বিশ্ব মানবাধিকার,
আপনি যে সমান অধিকার দিয়েছেন বিশ্বমানবতায়
তা লঙ্ঘিত হচ্ছে পৃথিবীজুড়ে
আপনার বসবাস বই-পত্রের ভাঁজে ভাঁজে
সর্বত্র অমানবিক আস্ফালন বিস্তৃত।
আজ যে মৌলবী, পুরোহিত সমস্বরে বলছেন জাত গেল, জাত গেল;
সেদিন কোথায় ছিল আপনাদের কট্টর মনোভাব
যেদিন একসাথে গেয়েছিলাম জাতীয়সঙ্গীত।
আজ দোহাই দিচ্ছেন পিতামহের পালনকৃত তথাকথিত
মনুষ্য সৃষ্ট কিছু নিয়ামবলীর
বার বার বলছেন, এসব চলবে না।
এ পাপ এ অন্যায়।
আমরা সেদিন দক্ষিণেশ্বর সদাজাগ্রৎ চক্ষুযুগলের সামনে
বিয়ে করেছিলাম স্বকীয়- ইচ্ছায়।
বিশ্বাস করুন, প্রসাদে, ফুলেল অর্ঘ্যে আমরা
কোন ধর্ম খুঁজে পাইনি।
সেদিন একটি চায়েরভাঁড়ে চুমুক দিয়েছিলাম অবলীলায়
আমার বা তার একবারও
মনে হয়নি সে অন্য ধর্মের, অন্য দেশের
তারচোখে শুধু প্রেম দেখেছি।
জানেন আপনারা,
সে আমায় ঠাকুর কিনে দিয়েছিল সেদিন
শ্যামবাজার এসে কানে কানে
আমায় রুদ্র, হেলাল হাফিজ, নজরুল শুনিয়েছিলো
বলেছিল তুমি আমার রাজলক্ষ্মী।
আজ আমার ঘর থেকে আমায় বলছে,
কুলোটা, চরিত্রহীনা, আরো কতো_কি
মেয়েটা জাত মেরেছে, মুখে চুনকালি দিয়েছে
লাজ শরমের মাথা খেয়েছে।
ধীরে ধীরে বলবে গোটাদেশ। এই ফিসফাস
চলতেই থাকবে দিক-দিগান্তর
পুজা মন্ডপে, অন্নপ্রাশনে, বিয়েবাড়িতে শুধু আমায়
নিয়েই আলোচনা চলবে বহুকাল।
তারপর একদিন স্বীকৃতি মিলবে আমাদের এই...
নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আলোকরশ্মি বিশ্বচরাচর
না'হয় আরেকটি হিরোশিমা সংঘটিত হবে আরেকবার
তবু এ'বাধন ছিড়বে না।
আপনাদের কাছে অনুরোধ ; আপনারা বিশাল করুন
আপনাদের গোড়ামীর কঠিন হৃদয়কে
মনুষত্যের পরাজয় সন্নিবেশিত হবে, কড়া নাড়বে
সম্প্রদায় নামক কট্টর দরজায়।
আমি কমলিনী, আমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড
বিশ্বমোড়ল আপনাদের কাছে নালিশ
আপনারা দেখুন, সবার উপরে
আজও মানুষ সত্য হয়নি!
- ইমরান শাহ্
শব্দবৃত্ত= ৬+৪, ৪+৪