নির্জনতার পায়ের আওয়াজ শুনি দূর থেকে।
একটা পাথর নড়ে ওঠে আমার বুকের ভেতর।
আলোর মতো ক্ষয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের মেঘ,
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার এক রূপালি ঘুমের নিচে।
আমি হাত বাড়াই, চাঁদের অর্ধেকটা ছিঁড়ে নিতে চাই;
কিন্তু আঙুলে লেগে থাকে কেবল ভাঙা ঘাসের গন্ধ।
শরতের মাঠে উড়ে যাওয়া ঘুড়ি মনে করিয়ে দেয়
যে আমি ভুলে গেছি বাতাসের ওজন।
তোমার মুখের মিষ্টি আলো,
যা একদিন ছিল পৃথিবীর একমাত্র প্রার্থনা,
এখন তা বেঁচে থাকে কেবল কাঠফাটা দুপুরে,
ফ্রেমে বাঁধানো ভাঙা ছবির মতো।
শহরের পিচঢালা রাস্তায়,
হাজারো অজানা শব্দ কানে বাজে।
মনে হয়, যেন কেউ তোমার নাম ডাকে—
মনে হয়, যেন কোনো এক গলির শেষে
তুমি দাঁড়িয়ে আছো,
এক হাতে ধরা এক কাপ কফি আর অন্য হাতে পুরোনো চিঠি।
কিন্তু বাস্তবতা ঠোঁট কামড়ে হাসে।
সিগারেটের ধোঁয়ার মতো
সবকিছু মিলিয়ে যায়।
আমি জানি, ভালোবাসা আসলে একটা মৃত নদীর মতো।
তাতে পানি নেই,
তবু আমরা দাঁড়িয়ে থাকি তার কূলে—
চোখ বুজে শ্বাস নিই,
ভাবি যেন এই নদীই একদিন আমাদের বাঁচাবে।
কিন্তু আসলে, বাঁচায় কেবল শূন্যতা।
বুকের পাঁজরে পাথরের ভার নিয়ে
হেঁটে যাই স্টেশনের দিকে।
প্রতিটি পা ফেলার সাথে
শুনতে পাই তোমার হাসির ছায়া।
তোমার ছায়া আমাকে চেনা ভুলে যেতে বলে।
আমি ভুলতে চাই,
কিন্তু স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে রোদেলা দুপুরের ঘ্রাণ।
কীভাবে ভাঙা যায় এই শিকল?
পাহাড়ের ঢালে বৃষ্টির মতো ঝরে যেতে চাই।
নির্জন কোনো রাতে,
তোমার মুখে উঠে আসা ক্লান্ত চাঁদটাকে
শেষবার ছুঁয়ে যেতে চাই।
অতঃপর, আমি নিজেকে বিলিয়ে দেবো
এই জল্লাদ নগরের অন্ধকারে।
তবু একটাই প্রার্থনা—
তুমি যদি কখনো ফিরে আসো,
তাহলে মেঘের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা আলো নিয়ে এসো।
আমার পাথর হয়ে যাওয়া বুকের ভেতর
একটা ফুল ফুটুক,
যা কোনোদিন শুকাবে না।