তুমিই বলো,
আমি কোথায় যাবো?
মাঝরাতে জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখি
আকাশের বুক ফুঁড়ে ফেলে আসা
দিনের ফালি ফালি হতাশা ঝুলে আছে।
মনে হয়,
আমি সেই হতাশার এক টুকরো
—একটা ম্লান, কুয়াশাময় মানুষ,
যার জীবন এক চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত।
ছাদে উঠে বাতাসে ভাসতে ভাসতে মনে হয়
নিজেকেই ছুড়ে ফেলি নীচের কালো রাস্তার পাঁকে।
বইয়ের তাকের দিকে তাকালে মনে হয়,
অর্ধেক পড়া সব বইপত্র গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলি।
শব্দ, বাক্য, গল্প—সবকিছু ফুরিয়ে গেছে।
ভেতরের জ্বালা মিটাতে বইয়ের ছাই মেখে আঁকিবুকি করি দেয়ালে।
মনে হয়, লেখকেরা সবাই প্রতারক,
আর আমি—এক পরিত্যক্ত পাঠক।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়
ভিড় ঠেলে ছুটে যাই কোনো অপরিচিত শহরে।
সেখানে কেউ চিনবে না আমাকে।
মুখোশ পরে এক নতুন গল্প লিখি,
যেখানে আমি হয়তো কোনো রাজপুত্র
—যার হারানোর কিছুই নেই।
কিন্তু পা বাড়ালেই দেখি সেই একই পথ।
যতই পালাতে চাই, ততই সেই পুরোনো গলিপথ আমায় টেনে ধরে।
ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে মনে হয়,
ঘুমের মধ্যেই কোনো এক স্বপ্নজগতে হারিয়ে যাই।
সেখানে দিন নেই, রাত নেই।
কেবল নিরবচ্ছিন্ন শূন্যতা।
তবুও, সেই শূন্যতাও কি মুক্তি দেবে?
একসময় সেই শূন্যতাও ভারী হয়ে ওঠে।
কি করি,
কোথায় যাই!
কাগজে কলমে লিখতে বসি,
কিন্তু হাত থেমে যায়।
শব্দগুলোও এখন আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
মনে হয়, কলম ছুঁড়ে ফেলে দিই।
অথবা নিজের রক্ত দিয়ে লিখি এমন কিছু,
যা পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে হার মানাবে।
কিন্তু সেই সাহস কোথায়?
আমি তো কেবল এক বোবা প্রান্তর,
যেখানে কোনো শব্দই ধ্বনিত হয় না।
শহরের বুকে গুমোট সন্ধ্যা নামে।
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ঝাপটানো পতঙ্গ দেখে মনে হয়
আমিও তাদের মতো ছুটে যাই এক প্রখর আগুনের দিকে।
শেষবারের মতো পুড়ে গিয়ে নিজেকে শেষ করি।
কিন্তু আগুনও আজকাল বড় নিষ্ঠুর।
জ্বলে না। ছাই হয় না।
আহ্, কোথায় যে যাই এবার।