একটি অপূর্ণ অভিমান সেঁটে থাকে ঘুমন্ত শহরের গায়ে,
ফাল্গুনের বাতাসে উড়ে আসে শিমুলের রক্তরাঙা দীর্ঘশ্বাস।
যে রাতে চেতনাহীন রাস্তায় থমকে যায় প্রণয়ের শ্লোক,
বিপ্লবী পোস্টারগুলো বিবর্ণ হয়ে লেপ্টে থাকে দেয়ালে—
সেই রাতে নগরীর কংক্রিট ভেদ করে
নিঃশব্দে জেগে থাকে ফাল্গুনের রাতের চাঁদ।
পলাশের ডালে ডালে বসন্তের উদাসীনতা,
নবপত্রের উচ্ছ্বাসে চাপা পড়ে যায় ঝরে পড়া পাতাদের হাহাকার।
যে শিশির রাতভর স্বপ্নে মগ্ন ছিল,
ভোরের আলোর ছুরিতে সে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকে—
অবাঞ্ছিত একটি কচুরিপানার মত,
বৃষ্টিহীন নদীর নোনাজলে।
তবু ফাল্গুনের উন্মত্ততায় শহর জাগে,
মাইক আর মিছিলের স্লোগানে শ্বাসরুদ্ধ গলিগুলো
আজও ফেলে আসা ইতিহাসের খোঁজে হাঁটে।
পোড়া ইটের গায়ে জড়িয়ে থাকে
একটি নীল রঙা ওড়নার সুরভি,
যে ওড়নায় বসন্তের প্রথম প্রেমের শপথ ছিল একদা।
সেই প্রেম, যে এখন শব্দহীন কান্নায়
ভিজে যায় রাতের একাকী জানালায়।
যে ফাগুন একদিন আগুনের শিখা হয়েছিল—
আজ সে ফাগুন হাওয়ায় উড়ে যাওয়া
কাগজের পত্রিকার পাতায় ঠোঁটদাগের দুঃখ।
এদিকে অলিগলির নিভে আসা বাতিগুলো,
যেন প্রেমিকের চুম্বনবঞ্চিত ঠোঁটের মতো নিঃসঙ্গ।
আর আকাশের ঐ একফালি চাঁদ
নগরীর ক্লান্তির পাশে নীরবে বসে থাকে,
ফাল্গুনের গভীর রাতের এক অনন্ত সাক্ষী হয়ে।