তোমার কবরের পাশে রেখেছি ধান,
সোনালি শীষে ঢাকা তোমার স্মৃতি
যেন মাটির গভীরে ঘুমিয়ে থাকা এক স্বপ্ন।
যদি মাটি না হতে, আজও ঝংকৃত হতো
তোমার কণ্ঠের বিদ্রোহী সুর।
দুশো বছর আগের কৃষক-বাড়িতে
রাত্রির নিস্তব্ধতা চিরে জেগেছিলে তুমি,
চোখে আগুন নিয়ে উচ্চারেছিলে শপথ:
'কেউ খাবে, কেউ খাবে না—তা হবে না, তা হবে না।'
লাঙল ছেড়ে হাতে তুলে নিয়েছিলে
বিদ্রোহের দীপ্ত তরবারি,
রক্তে রাঙিয়েছিলে বাংলার সবুজ মাটি।
বাইরের আকাশে ঝনঝন করেছিল ইংরেজের অস্ত্র,
শাসকের চোখ ছিল তীক্ষ্ণ, তবু তারা শোনেনি
তোমার হৃদয়-ফাটা আহ্বান।
তুমি ছিলে বজ্রকণ্ঠ,
তুমি ছিলে জেগে থাকা প্রতিরোধ।
তুমি চলে যাবার পর
দুশোটা বসন্ত, বর্ষা, গ্রীষ্ম গড়িয়ে গেছে
কিন্তু তোমার লড়াই আজও থামেনি
প্রতিটি চাষির হাতের মুঠোয় জেগে আছে তোমার সাহস
প্রত্যেক মার্চের বাতাসে আজও বাজে
তোমার লাঙলের ধার
তোমার বিদ্রোহের তাপ
তোমার স্বপ্নের স্বাধীন মাটি,
যে মাটিতে তুমি বুনেছিলে প্রতিরোধের বীজ।
তোমার লক্ষ্য ছিল ন্যায়,
তোমার পথ ছিল সংগ্রাম,
তোমার প্রেম ছিল এই মাটি।
তুমি জীবন দিয়েছিলে শোষিতের অধিকার রক্ষায়,
তাই তুমি নুরুলদিন,
তাই তুমি ইতিহাস।
যারা স্বাধীনতার ছদ্মবেশে চেয়েছিল ক্ষমতা,
তারা আজ রাজপ্রাসাদে—
নতুন শাসকের পোশাকে পুরনো শোষণ,
তাদের ভোজসভায় ভাসে চাষির রক্ত,
তবু তোমার লাঙলের ধার
আজও বিদ্ধ করে অন্যায়।
ইংরেজ রেখে গিয়েছিল শাসনের বেড়ি,
আমরা গড়েছি লোভের দুর্গ।
তারা লুটেছিল ধান, নদী, জীবন,
আমরা লুটে নিয়েছি স্বপ্ন, অধিকার, আশা।
সেই রাতে তুমি রক্ত দিয়ে লিখেছিলে প্রতিবাদ,
তুমি ফিরে আসনি,
তবু তোমার কণ্ঠস্বর থামেনি।
বাংলার বাতাসে আজও ঘুরে বেড়ায়
তোমার দ্রোহের অমর ঘোষণা—
'আমি নুরুলদিন বলছি,
জাগো বাহে, কোনঠে সবায়!'