একটি নাটকের আঁধারে লেখা--
দুঃসাহসিনীরা
লীনা দাস(29/1/2019)(কাব্য চারুলতা)
দিদিমণি,৮ইমার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবসে চাই একটা নাটক করতে।
গতানুগতিক ধাঁচের বাইরে,'পিরিয়ডস'
নিয়ে।
চোখ কপালে তুলে দিদি বলেন,
"আলোচনা লেখালেখি যাকে নিয়ে কঠিন তাকে নিয়ে নাটক?"
দিদি ভাবেন পিতৃতন্ত্রের নিঃশব্দ নির্দেশ
যে মেয়েরা ভাঙতে চাই নাটক করে
চোখ খুলে দিতে চাই যে দুঃসাহসীরা
আসল বীরঙ্গনা বোধহয় এরাই!
প্রতিদিন সন্ধ্যায় লাল চা আর মুড়ি সহযোগে চলে নাটকের খসড়ার মহড়া।
মেয়েদের কথোপকথন থেকে ধীরে ধীরে রূপ পায় নাটকের সংলাপ।
নাটক জুড়ে থাকে সদ্য তরুনীদের বয়ঃসন্ধিতে ঋতুমতী হওয়ার স্মৃতি।
সাথে আসে ঐ কটা দিনের অনেক কথা
তারই সূত্র ধরে আসে নিষেধের ফরমান
ঠাকুর ঘরে যাওয়া বারণ,শ্যাম্পূ না করা
তারা নাকি অশুচি!
কি সুনিপুন মুন্সিয়ানায় ওরা রচনা করে
ঋতুস্রাবকে নিয়ে কুসংস্কারের জাল,
পিতৃতন্ত্রের শিরায় শিরায় থেকে যাওয়া,
মেয়েদের প্রতি থেকে যাওয়া এক ঘৃণার
নির্মম চেহারা।
নাটক মঞ্চস্থ হল যথা সময়ে
'পিরিয়ডস'নয়,তরুনীরা বলতে চেয়েছিল অন্য রক্তের দাগের গল্প,
বলতে চেয়েছিল কী দ্বিচারিতা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়!
আনন্দ-উৎসব হয় মাতৃত্বকে নিয়ে অথচ,অথচ তার প্রক্রিয়ায় যে নারীরক্তের অবিচল চলে ক্ষরণ,
সেই ক্ষরণকে নোংরা অশুচি অনায়াসে দেওয়া হয় তকমা!
গভীর দুঃখের সাথে জানাচ্ছি,নাটকটি চলেনি!
হ্যাঁ হ্যাঁ এই একুশ শতকেও কতখানি মনে অন্ধকার থাকলে,
কতখানি পিতৃতন্ত্রের মতাদর্শ জড়িয়ে থাকা থাকলে
কতখানি অবমাননা ও ঘৃণা কাজ করলে---
কিছু দর্শক বলে উঠতে পারেন,
লজ্জায় সংকোচে মাথা হেঁট তাদের।
একটা বিশ্রী নোংরা কেলেঙ্কারি ঘটনা যেন!
তবে কি ওরা হেরে গেল?
না কি আপাদমস্তক নাড়িয়ে দিতে পারার সুরুয়াত?
না কি বসন্ত এসে গেছে---
দমকা বাতাসে উড়তে থাকুক প্রশ্নগুলো!