ক্লান্ত শরীরে যখন বাসায় ফিরতাম
তুমি এসে ব্যাগটা নিয়ে আঁচল দিয়ে ঘাম মুছে
পাখার নিচে বসিয়ে এক গ্লাস জল দিয়ে বলতে
ওগো! ফ্রেশ হয়ে নাও, তোমার জন্য আজ
টাকি মাছের ভর্তা আর মলা মাছের ঝোল করেছি।
খাবার শেষে দখিনের বারান্দায় গোপনে
পাতা বিড়ির ধোঁয়া ছাড়তাম,
তুমি খানিকটা রাগতে, বদ অভ্যাস ছাড়বে না!
সিগেরেট না ফুঁকলে নিজেকে পুরুষ মনে হয় না
বলে ললিতাকে টেনে পাশে বসাতাম,
তারপর অনেক অনুরোধ করে, কান ধরে বলতাম
আজকের পর আর না।
কিছুক্ষণ গল্প আর ললিতার মিষ্টি কন্ঠে
রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে দুজন বিছানায় যেতাম।
ফের ভোরে ললিতার ঘুমন্ত ললাটে
আলতো করে ছোট্ট চুমো এঁকে আমি বের হতাম।
এখন আমাকে ভাবায়,
অফিসের চাহিদা মেটাতে যখন খুব ব্যস্ততায় নিজেকে বলি করি
তখন ললিতা কি করে সময় কাটায়?
ঘরে টিভি তো দুরের কথা খবরের কাগজ নিতে পারতাম না,
শুধু ললিতাকে বাটন মোবাইল দিয়েছিলাম
সংসার চালাতে এতোটাই হিমশিম যে সাধ্য ছিল না।
ডাক্তারবাবু বলেছিল ললিতা কখনও মা হতে পারবে না,
তাতে একটু কষ্ট বা বিচলিত হয়নি।
সেইদিন হঠাৎ বুকের ভিতর মুছড়ে উঠলো!
ললিতাকে একের পর এক কল দিয়েই চললাম
কেউ হ্যালো বলেনি।
কর্তাবাবুকে বললাম আমাকে ছুটি দিতে হবে
কর্তাবাবু ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো কেন?
বলতে পারিনি যে ললিতা ফোন ধরছে না
বাসায় যেতে হবে।
ডেস্কে বসে ফোন করেই যাচ্ছি। ইচ্ছে হচ্ছিল
উড়াল দিয়ে যাই, ললিতা আজ এমন করছে কেন?
এতোক্ষণে অন্তত দশের অধিক কথা হতো
কিন্তু আজ!
পর-পুরুষের সাথে! ছিঃ ছিঃ এইসব কি ভাবছি!
ঘড়ির কাটা ছয়ের ঘরে যেতেই আমি বের হয়ে গেলাম,
মাস শেষ তাই পকেটে সীমিত পয়সা বলে লোকাল বাসে।
প্রায় অজ্ঞাণের মত বিছানায় পড়ে আছে
ললিতার শরীর এতোটাই গরম যে ধরা যাচ্ছে না,
কি করবো বুঝতে পারছি না!
ললিতার মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে হাজার তিনেক টাকা পেলাম।
সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কি সব পরিক্ষা করে ললিতাকে নিয়ে গেল নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।
যে মেয়ে তেলাপোকা দেখলে ভয় পেতো তাকে কতগুল যন্ত্র আর নল দিয়ে রেখেছে!
ডাক্তার বাবু জানালো তার ফুসফুস নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
ভোর সাতটা, নার্স ডেকে বললো ধ্রুবো কে?
দৌঁড়ে গিয়ে বললাম আমি!
ধ্রুবো বাবু! দুঃখিত যে ললিতা আর বেঁচে নেই।
২২:০৫
১৪/০৫/১৮ইং