তোফাজ্জলের করুণ প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন রাজশাহী
রচনাঃ ২৭-০৯-২০২৪ ইং

প্রথমেতে আল্লাহর নামে ধরি কলম খানি,
লিখতে গেলে ঝরে শুধু দুই নয়নের পানি।
এক পরিবার মা ও বাবা তাদের দুইটা ছেলে,
নাসির উদ্দিন,তোফাজ্জল নাম হৃদ কুঠরির জেলে।

বরগুনারই পাথরঘাটা চরদুয়ানী গ্রামে,
কত সুখের সংসার ছিলো তাদের ধরাধামে!
মাসুদ কামাল তোফাজ্জল ভাই এক নামে সব চিনে,
বন্ধুদের তার কাটতো না ক্ষণ তোফাজ্জলকে বিনে।

সেই এলাকার অর্থশালী শহিদ চেয়ারম্যান ধনী,
আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন শক্তিশালী উনি।
তোফাজ্জল ভাই তারই সনে কর্মে মত্ত থাকতো,
তন্নি নামের একটা মেয়ের নজর সে হায় কাড়তো।

আসা-যাওয়ার মধ্যখানে প্রেমের লেনাদেনা,
চেয়ারম্যানের এই কন্যারই হয় হৃদয় প্রেমে কেনা।
দুই জনার হয় ভালোবাসা আস্তে আস্তে গভীর,
তন্নি,মাসুদ প্রেম-সাগরে মন উতলায় অধীর।

পাঁচ বছরের ব্যবধানে বাবা মাকে হারায়,
হায়রে কপাল এতিম হলো অশ্রু চোখের তারায়!
কত ব্যথা বুকের মাঝে বলবে সে কার সনে?
বেঁচে থাকার একটা সম্বল তন্নি যে তার মনে।

জানাজানি হলো শেষে তাদের প্রেম-কাহিনি,
আক্রমণে চেয়ারম্যান পাঠায় গুন্ডার এক বাহিনী।
প্রেমের দায়ে গণপিটুনি মস্তকে তার আঘাত,
মস্তিষ্ক তার নষ্টরে হায় জীবন চলায় ব্যাঘত!

পাগল হলো রাস্তায় ঘুরলো মরণ নাসির ভাইয়ের,
হায় অভাগা তোফাজ্জলের উৎস যে শেষ আয়ের!
শেষ সম্বল তার ভাবি ছিলো মারতো কথার ঝালে,
ভরণ-পোষণ পেটের খাবার জুটতো না তার ভালে।

পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরে আবোল-তাবোল বলে,
হায়রে পেটে নাইরে দানা সুন্দর দেহ গলে!
দশটা টাকা,বিশটা টাকা,পঞ্চাশ টাকা চাহে,
নোংরা মাটি, কাদা, ধুলোয় পাগলামি গান গাহে।

শেষের বেলা সেপ্টেম্বরের সতেরো তাং রাতে,
রওনা দিলো ঢাকার পথে পাগলামি তার সাথে।
ভোর বিহানে পৌঁছে ঢাকায় নাই পেটে তার দানা,
দ্বারে দ্বারে ঘুরে হায়রে পায় না কোথাও খানা।

আঠারো তাং সন্ধ্যা রাতে ভার্সিটি সে যায়রে,
কপাল পোড়া চুরির দায়ে চোর বলে মার খায়রে।
তোফাজ্জল কয় হাত জোড় করে আমি তো চোর নাকো,
ফজলুল হক হল বাসিন্দারা শুনলো না বাত তার তো।

ক্ষুধার জ্বালায় পেট জ্বলে ভাই দাও না কিছু খেতে,
করুণ স্বরে তোফাজ্জলে কয় জোড়া হাত পেতে।
খাবার দিলো, পানি দিলো, দিলো খেতে সময়,
ভাবে মাসুদ ভদ্র তারা ভদ্র ঘরের তনয়।

খাবার খেয়ে পায়নি রেহাই মিথ্যা অভিযোগে,
ডাণ্ডা বাড়ি পায়ে হাতে যন্ত্রণাতে ভোগে।
হাতের উপর ডাণ্ডা দিয়ে দুইজনা দুই ধারে,
বুটের চাপা লাথি গুঁতা দিয়ে তারে মারে।

সহনীয় নয় জ্বালাতন প্রথম প্রেমের স্মৃতি,
পড়লো মনে তোফাজ্জলের জীবন হেথায় ইতি!
ভালোবেসে পাগল হলো কষ্ট শুধু পেলো,
পাহাড় সমান দুঃখ নিয়ে ভুবন ছেড়ে গেলো!

এত কষ্ট সয় না প্রাণে লোকজনে সব কাঁদে,
তোফাজ্জলকে ভালোবাসায় বাহুডোরে বাঁধে।
কেঁদে কেঁদে চায় জনতা হত্যাকারীর সাজা,
হোক প্রেমিকা, ছাত্রসমাজ, চেয়ারম্যান কিংবা রাজা।