আমি তোফাজ্জল বলছি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন
রচনাঃ ২০-০৯-২০২৪ ইং
জানো প্রিয়তমা,
কতটা ভালোবাসতাম তোমাকে?
তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি?
কতটা তোমার প্রেমের পাগল ছিলাম?
তুমি জানো না, তা জানতে চাও?
আমি শক্ত করে মুষ্টি ধরে দু-চোখ বন্ধ করে পাথরের মত নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো,
আর তুমি একটা ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমার বুকটা চিরে দেখো, আমার শরীরে প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোমারই নাম, শুধু তোমারই নাম জপ করছে।
তুমি ছাড়া আমি একা। পরকালেও চাই তোমার দেখা। তুমি ছাড়া নিঃস্ব আমি, জানে আমার অন্তর্যামী।
বিশাল মরুভূমি পানিশূন্যতায় যেমন,
বিশ্বাস করো, তুমিহীনা আমার জীবন ঠিক তেমন।
তুমি ছাড়া বাঁচার কোনো হয় না মানে,
ক্ষতবিক্ষত হৃদয়, জানে আমার আল্লাহ জানে।
আমাকে ছেড়ে চলে গেলে, ঘর বাঁধলে অন্যের বুকে!
দেখো প্রিয়া, মরুভূমির মধ্যখানে তীব্র খরার রৌদ্র তাপে তোমরাই প্রতীক্ষায় মরছি ধুঁকে ধুঁকে।
কী নিষ্ঠুর নির্মম ভাগ্য আমার!
তুমি নাই তাই
অভিমান করে মা বাবাও চলে গেলো আমায় একা করে।
ভাই ছিলো একটা, সেও চলে গেলো, শুধু তুমি নাই বলে।
তুমিহীনা বেদনারা বাসা বাঁধে বুকে, মা বাবাহীন যন্ত্রণায় ছটফট করি প্রিয়জন বিয়োগের শোকে।
ভালো লাগে না কিছুই, পাগল হয়ে গেলাম।
রাস্তায় ঘুরি, আর শুধু পেটের খাবার খুঁজি।
আর কোনো চিন্তা নাই, আমি নিঃস্ব, এতিম অসহায়।
জানি না কোন চক্রে গেলাম ঢাকা ভার্সিটির বারান্দায়?
যেখানে শিক্ষিত হায়নারা আমাকে হিংস্র প্রাণীর মতোই খাবলে খাবলে খায়!
সেখানে ওদের নাকি মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে।
তারা আমাকে চোর সন্দেহে ধরে ফেললো।
আমাকে অনেক মারলো, রক্তাক্ত করে দিলো।
কিন্তু আমি কী বলবো?
আমি তো তাদের মোবাইল ফোন নিই নি।
তারা আমাকে বিশ্বাসই করলো না। আমিই নাকি তাদের মোবাইল ফোন নিয়েছি। আমার পেছনে নাকি অনেক বড় গ্যাং আছে।
আমি খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম।
তারা আমাকে মারার পর ডাল ভাত সবজি খাবার খেতে দিলো। আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তাই না করিনি।
আমি তাদের দেওয়া ভাত খেলাম। কিন্তু জানতাম না এটাই আমার শেষ রিজিক। এরপর তারা আমাকে মেরে ফেলবে।
ডাল, ভাত খাওয়ার পর তারা আবার আমাকে মার শুরু করলো।
আমার হাতের উপর একটা মোটা লাঠি দিয়ে দু'পাশ থেকে দুইজন মিলে ডলতে শুরু করলো।
তাদের মোটা ডাণ্ডার আঘাতে আঘাতে আমার পা দু'টোর মাংস খসে পড়লো।
শুধু তাই নয়, তারা আমাকে এভাবে মেরেই ক্ষান্ত হয়নি। নিষ্ঠুর পাষাণের ন্যায় আমার গোপনাঙ্গেও আঘাত শুরু করলো। আমার দমটা মনে হচ্ছে আটকে গেলো।
মনে হচ্ছে আজরাইল আমার বুকের উপর বসে সাত আসমান, জমিন, পাহাড় চাপা দিয়ে বত্রিশ বন্ধনের ভেতর থেকে প্রাণপাখিটা ছিনিয়ে নিচ্ছে।
আমি তাদের হাত পা ধরে মিনতি করছি, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি চোর না, আমি চুরি করিনি।
কিন্তু তারা এতই নিষ্ঠুর, এতই নির্মম, এতই পাশবিক, আমার কোনো কথাই শুনছে না।
আর শুনলোও না।
আচ্ছা, বলো তো,
একটা মাটির মানুষ এত অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে কি কখনো বেঁচে থাকতে পারে?
পারে না, তাদের পাশবিক নির্মম অত্যাচারে পৃথিবীতে বাঁচার অধিকার হারিয়ে ফেললাম। অসহনীয় কষ্টের মধ্য দিয়ে করে চলে গেলাম ওপারে।
হয়তো খবরটা এতক্ষণ তোমার কাছে পৌঁছে গেছে।
দু'ফোঁটা চোখের জলও ঝরছে।
কেঁদো না, মুছে ফেলো চোখের পানি।
কেঁদেই বা লাভ কী বলো? এটাই ছিলো আমার প্রাপ্য।
যা ছিলো বিধাতার কলমের কালিতে লিপিবদ্ধ।
কিন্তু একটা কথা বিশ্বাস করো প্রিয়তমা,
বিশ্বাস করো, আমি চোর ছিলাম না, ছিলাম না ডাকাত।
আজ তোমাকে পেলে হয়তো আমার এমন দুর্গতি হতো না।
আমার বিপদের সময় তুমি আমার পাশে থাকতে, আমাকে সাহায্য করতে, সহযোগিতা করতে, দিতে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।
আজ তুমি নাই, তাই আমার বেঁচে থাকারও কোনো মানে নাই। নাই কোনো অধিকার।
তুমি ভালো থেকো, সুখে থেকো।
আর মহান আল্লাহর কাছে দু-হাত তুলে একটা দোয়া করিও,
পৃথিবীতে যেনো কোনো মায়ের কোলে আমার মতো প্রেম-পাগল কোনো অভাগা সন্তান জন্ম না নেয়।