স্বপ্নের-দরিয়ায় জীবন-তরী বাইতে বাইতে কে যেন ডেকে উঠলো পিছন থেকে,"কি বন্ধু! চিনতে পারছো?
মনে পড়ে বেলেমাঠের ধারে দুজনে একদিন কত জোৎস্না মেখেছি।
আমবাগানে বোশেখ ঝড়ে কত আম কুড়িয়েছি। খেলাঘরের খেলায় দুহাতে কত সোনা রোদ্দুর ঘেঁটেছি।
মনে পড়ে তোমার যখন আঠারো, আমি অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়।
তুমি আমার হাত ধরে নিয়ে গেলে বেথুয়াডহরীর অরণ্যে, কখনও বা রায়চকে নদীর পাড়ে।
দিনান্তের একটুকরো গলন্ত রোদ্দুর ছিটকে পড়েছিল তোমার মুখে।
আমি বিস্ময়ে কত স্বপ্ন হাতড়েছিলাম সেই অমল রোদ্দুরের ঝর্ণায়, পড়ন্ত আলোর স্রোতের বিপরীতে। কিন্তু আজ এ কি দশা তোমার!"
আমি বললাম ,"যুগবদলের স্রোতে সময় নেই বন্ধু! এখন ব্যস্ত সমাজের চোরা স্রোতে ভেসে যাচ্ছি খড়কুটোর মতো অলীক সুখের টানে।
জীবন-তরী ছুটে চলে স্বার্থের হাল বেয়ে অনিশ্চিতের বেনামী বন্দরে।
তবুও স্রোতের বিপরীতে ছুটে মাঝে মাঝে আজও খুঁজে বেড়াই সেই অপু দুর্গাকে?
আচ্ছা! রহমত কেমন আছে বলতে পারো?
সুধা নাকি অমলকে এখনো ভোলেনি? বেণীমাধবের বাড়িতে সেলাই দিদিমণি কি চলে গেছে?
আসলে এই প্রেমহীন,প্রাণহীন পৃথিবীতে আজ যে ওদের বড়ই দরকার।
বরুণাদের ভিড়ে হারিয়ে যায় মনের মানুষ । ভালোবাসা খুইয়ে বেদনার অতলান্তিক সাগরে ঘুরে মরি বিরহের বার্মুডা ট্রায়াঙ্গেলে।
পরাণ মাঝি হাঁক দেয়-'অন্ধকার, এ কোন ঘোর অন্ধকার! ভালোবাসাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়? ওই কে যাও স্রোতের বিপরীতে? লণ্ঠনটা একটু বাড়িয়ে দাও !' ...."
- বন্ধু! আমি এসেছি স্রোতের বিপরীতে সেই লণ্ঠন নিয়েই।
চেয়ে দেখো সেই স্রোতের বিপরীতেই কেমন ফিরে এসেছে তোমার ভালোবাসার হারানো উর্মিমালা, তোমার প্রাণভোমরা।
হতাশার মরণকূপ ছেড়ে ওঠো এবার;
জীবনের বিপরীত স্রোতেই এক মন আশার আলোকমালায় সাজিয়ে তোলো বর্ণময় ভালোবাসার এক স্বর্ণময় জলটুঙি।
স্বপ্নের দুনিয়ায় আঁধারভেদী আশাবাদী আকাশবাণী শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমটা ভেঙে গেল।