হৃদয়সখা হে আমার,
ভবনদী ছলাৎছল ছলাৎছল, আমার জীবনদেবতা টলমল।
অনির্দেশ্য জীবনের যাত্রাপথ।
জলবিহারে কোনো কাজল-নয়না জলপরী হয়তো তড়িৎচকিত দৃষ্টিক্ষেপণে বলে যেতে চায় সুপ্ত হৃদয়ের গুপ্তকাব্য।
সেই গুপ্তকাব্যের খলনায়ক সেজে, সমস্ত পিছুটান ফেলে হৃদয় যেন হরণ করতে চায় সেই মনোহারিণী রাজকন্যাকে।
রূপের তড়িৎচুম্বকীয় আবেশে উড়ুউড়ু মনের শুকপাখিটা।
সুন্দরের পূজারি, শুকসারি, "এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়।"
জীবনদেবতা কিন্তু থামে না...ভাসতে ভাসতে জীবনদেবতা ভেড়ে নতুন খেয়াঘাটে, ভালোবাসার পাখিরালয়ে।
হৃদয়ের স্বর্ণমোহর বিলিয়ে খেয়াঘাট ছাড়ে।
পিছুটানে কে যেন আর্তনাদ করে ওঠে- 'যেও না প্রাণসখা, আমায় ছেড়ে। দাঁড়াও, একটিবার থামাও তোমার জীবনদেবতা।'
পাগলপারা মন-শুক এক ডাকেই, এক নামে পিছুটানে যেন সংবিৎ ফিরে পায়।
'মন চল নিজ নিকেতনে...'
'হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ' পথ ধরে বাধ্য ছেলের মতো ফিরে আসে চিরপরিচিত পাখিরালয়ে, মায়ার পিছুটানে।
পিছুটান না কি মরীচিকা?
'কে আছো কোথায়? কে ডাকলে মোরে বন্ধু এই পাখিরালয়ে?'
হন্যে হয়ে সারাদিন কিংকর্তব্যবিমূঢ় শুকপাখি খুঁজে বেড়ায় তার পথভোলা সুখসাথী।
দিনান্তে পরিশ্রান্ত শুকপাখি নিরাশার খড়কুটোয়, নতুন আশায় সাজায় ভালোবাসার পাখিরালয়।জীবনদেবতা থমকে দাঁড়ায় প্রেমহীন স্রোতহারা ভাটায়, সেই নির্জন পাখিরালয়ে।
হয়তো আবার আসবে উজান, স্বপ্ননীলা উজান, ফেলে পিছুটান।
হয়তো আবার খুঁজে পাবে শুকপাখি তার সুখসাথীকে।
হৃদ-মাঝারের চিরবন্ধনে তারে আগলে শুকপাখি নতুন করে ভাসাবে জীবনদেবতা স্বপ্নের নোঙর ফেলে।
সমস্ত পিছুটান ফেলে, ভাসতে ভাসতে ভবনদী পেরিয়ে হয়তো মিলবে অন্তিম ঠিকানা -
কোনো এক রূপকথার বৃন্দাবন, সুখের সুখভিলা, চিরশান্তির শান্তিনিকেতন।