এই জীবন এই নদী, এক বহমান নদী।
গতিপথ পরিবর্তন করে অহরহ— কখনো কলকল্লোলে মুখরিত আনন্দধারা,  কখনো শুধুই দীর্ঘশ্বাস আর শূন্যতার চুকিৎকিৎ খেলা, স্বপ্নের কাটাকুটি খেলা।
পরাণ-নদীর তীরে ক্ষত-বিক্ষত আশার খেলাঘর। ঢেউয়ের প্রতিটি আঘাতে উৎসারিত বিরহানল; পাথরের বুকে মাথা কুটে মরে স্মৃতির ঢেউ, বেদনাবিধুর।
তোকে ভালোবেসে হৃদয়ের নোঙর ফেলে ভাসিয়েছিলাম ভালোবাসার তরী।
আলটপকা ঘূর্ণিপাকে, সে তরী তছনছ হয়ে গেছে জীবন-নদীর বাঁকে। এখন শুধু ভাঙা তীরের নিরন্তর বিলাপ, সমব্যথী ঊর্মিমালার করুণ গুঞ্জন ভগ্ন তরী আগলে ধরে নিঃসঙ্গভাবে বয়ে যায়।
নয়নের বারিধারা নদীর মতো কেবলই বয়ে চলে সাগরের অনন্ত শূন্যতার দিকে। সীমাহীন অশ্রুজল টলমল, বুকে বিরহের অতলান্তিক মহাসাগর।
ওই নদীর বুকে ভেসে যায় খাপছাড়া ঝরাপাতা- জিজ্ঞাসু মনে আকুল মন-মাঝি প্রশ্ন করে 'তবে কি সত্যিই চলে যেতে হয়? হৃদয়-বন্দরে আর কি কোনদিন তরী ভিড়বে না?'
পাড় ভাঙে জীবন-নদীর, ক্ষয়িষ্ণু হৃদয়ের অন্তঃপুরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে, যেন হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে স্বপ্নের মহীধর তোর অনুপস্থিতিতে।
তবুও, শূন্য নদীর মতো অনন্ত বয়ে চলা—হয়তো কোনো এক মিলন-মোহনায় আবার খুঁজে পাবো তোকে...
হয়তো জীবনে উঠবে আবার, স্বপ্নিল রাঙা ভোর,
নাচবে মন আনন্দ-তরঙ্গে, ঘুচবে বিষণ্ন ঘোর।
জীবন-নদীর বুকে আবার উঠবে উল্লাস-ধ্বনি,
হারাবে বিরহ-বেদন যত,  মনের খেদ-গ্লানি।
কে জানে বিধির কি রহস্যের জাদু-খেলা!
হৃদয়ের শূন্যঘরে তবুও, আশার প্রদীপ-জ্বালা।
তুই আমার আশার রাখি, স্বপনের রুপালি ভেলা,
তোর মাঝেই খুঁজে পাই, সুখের মণিমালা।

ভালো থাকিস, যেখানেই থাকিস...
'আবার হবে তো দেখা'...
হয়তো এখানেই, কোন নগরে, হয়তো অন্য কোথাও অন্য কোনখানে...
তবু দেখা হবে...

(রচনাকাল: ২০/০৪/২৫, কোন্নগর, বারো ঘাট, বাবার‌মন্দির)