আমাদের বাবা-
স্কুলের গণ্ডি না পেরিয়েও পরিবারে ছিলেন অন্নের অভিভাবক,
বইয়ের অংক না কষেও তিনি চাষাবাদের অংকে ছিলেন : শিক্ষক!
বাবার বাবা তাকে আকাশ ডাকতেন,
আর মা দিতেন রগচটা স্বভাবের হিসেবপাতা;
শ্রমের ভাগীদারে একমাত্র ছোট ভাইয়ের হাত ভরসা হয়ে আসেনি!
তবুও;
দিনশেষে বাবার নামে সুসংবাদ আসেনি 'কর্মঠ' স্বীকৃতিতে।

আমাদের বাবার জীবনে আমাদের মা আসেন;
বাবা খুঁজে পান ঘর্মাক্ত রোদে মাথার উপরে ছায়া,
অবহেলার দেয়ালে তৈরি হয় ভালোবাসার সেবা,
কান্না মোছার একটা নির্ধারিত নির্দিষ্ট কাপড়ের আঁচল!
আমাদের বাবা দুঃখ লুকাতেন মায়ের হাসিতে,
কিন্তু-
আমাদের মা দুঃখকে আরেক দুঃখ দিয়ে ঢাকতেন!

বাবার মা ছিলেন রোদের মতো;
যিনি ঘাম ঝরাতে জানে প্রতিদানে বিকেল দিতে জানে না,
যিনি অভিযোগের পাণ্ডুলিপি লিখতে জানে নিজ মেধায়,
যিনি সন্তুষ্টির প্রেসক্রিপশন দিতে জানে না যত্নের সেবায়,
যিনি ক্ষুধার বেলায় অশ্রুজল নামাতেন আমাদের মায়ের প্লেটে!

আমাদের যে বাড়িটাই আমরা এখন বাস করি;
বাবা মাথায় করে মাটি তুলতেন মা দিতেন কেটে; পুকুর থেকে রাতের বর্ণে!
দিনে বাবা থাকতেন ক্ষেতে মা ব্যস্ত থাকতেন সংসার কাজে,
রাতের আঁধারে তারা মাটি দিয়ে ভরাট করতেন ঘরের ভিটে,
তৃপ্তি ভরা গালে পেতেন না খেতে লাগতো যখন খিদে!

বাবার মা আমাদের মায়ের জন্য ছিলেন মধ্যদুপুর,
ছায়াতে পা ফেলতে মা ছিলেন অনভিজ্ঞ,
ধৈর্য্যতে তার নাম উচ্চারিত প্রতিবেশীদের আলাপে,
ঘামের ওজনে বাবার মাপ ছিলো যুক্তিগত;
বাবাকে আমরা তার মায়ের জন্য প্রতিবাদে কন্ঠ রাখতে দেখিনি,
বাবার মায়ের উঁচু উচ্চারণে বাবার উত্তরে যোগ হতো ভদ্রাক্ষর!

আমাদের মায়ের শরীরের পাতা ভরে গেছে অসুখের নামে,
তবুও ঔষধে লিখে রাখেন আমাদের দশ হাত কিংবা একশ আঙ্গুলের সুস্থতা,
আমাদের কিছুর প্রয়োজন হলে আমরা মায়ের সামনে হাত বাড়াই,
কিন্তু-
আমাদের বাবার কিছুর প্রয়োজন হলে;
তিনি দাদীর কবরের কাছে গিয়ে হাত তুলে রাখেন,
আমাদের আকাশ দেখতে ইচ্ছে হলে আমরা বাবার কপালে চোখ রাখি;
আমাদের বাবার আকাশ দেখতে ইচ্ছে হলে,
তিনি আমাদের দিকে শিশুর মতো তাকিয়ে থাকেন!