খুব ভোরে আমাকে জাগানো হলো;
ঘুমরোগের চোখের দৃষ্টিতে স্বল্প আলো;
পথের দু'ধারের অক্সিজেনের অভিভাবকেরা আড়চোখে দেখে নিচ্ছে,
পথের বিশাল দেহকে মনে হচ্ছে সাঁকোর লাইন,
হাতে একটা সংসার টিকে থাকার চিরকুট;
চিরকুটে কোনো প্রেমক ভাষা নেই,
এটা তেল থেকে নুন অব্দি ট্রেনের সাইনবোর্ড,
রসুনের বানানে ভুল অক্ষর থাকলেও পরিমাণে শক্ত সংখ্যা,
চালের দেয়ালে আর্টের কালিতে বিশুদ্ধ নির্দিষ্ট নাম ।
আমি চালের দোকানে গিয়ে দাম কষতে শুরু করি;
পাশের গলির দোকানের টেলিভিশন কথা বলে-
বন্যায় ডুবে যাওয়া কয়েকটা জেলার নাম নিয়ে,
চোখ থেকে ঘুম উড়ে যায় টিভির পাতায়,
কন্ঠনালী পর্যন্ত ডুবে যাওয়া বাবার মাথায় দেখি নবজাতকের আসন;
আমি টাকা গুনে আবার চালের দোকানে যাই,
তারপর আবার খুঁজতে থাকি হকারের ঠিকানা,
পত্রিকার পাতায় কোনো শিরোনাম খুঁজে পাই না বন্যার্ত মানুষদের নিয়ে!
পত্রিকাগুলো পরিপূর্ণ হয়ে আছে বিজ্ঞাপন নিয়ে,
শিরোনামগুলো দেখে মনে হয় এই দেশে গতকাল কোনো ঘটনা ঘটেনি;
অথবা বন্যায় ভেসে যাওয়া জেলাগুলো এই দেশে অবস্থিত নয়,
কিংবা সাংবাদিকগুলোর জ্ঞানে এই জেলাগুলোর নাম জানা নেই!
আমি আলু কিনে ঘরে ফিরি;
তেল কিনতে গিয়ে আমার চোখে ভেসে উঠে কুড়িগ্রামের ভেসে যাওয়া দৃশ্য,
চাল কিনতে গিয়ে আমার মনে পড়ে দিনাজপুরে চুলোগুলো আর জীবিত
নেই ।
তারপর আর আমার ঘুম ধরে না;
আমি রসুনের টাকায় ক্ষুধার্ত মানুষের অবয়ব দেখতে পাই,
দামি চালের পিঠে না চড়ে;
সর্বহারা মানুষের পিঠে ভরসার হাত রাখতে সবাইকে আহবান করি,
আমার সাধ্যের অভাবে আমাকে মৃত নাম দেয় মনুষ্যত্ব,
অথচ সাধ্যে থাকা মানুষগুলো ঘুমিয়ে থাকে বিবেক বিক্রি করে,
ওদিকে ক্ষুধার বেলায় অশ্রু গিলে বানভাসি,
আশ্রয়ের দরজায় খিল লাগিয়ে দেয় বিত্তবান মুখগুলো,
সাধারন কিছু মানুষ আগামীকালের কথা না ভেবে-
সর্বস্ব দিতে প্রস্তুত হয়ে পড়ে বন্যার্তদের জন্য ।
এবার আপনি জেগে উঠুন;
ভাবুন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের দিন যাওয়ার চিত্র,
আপনিও মানুষ;
তারাও আপনার মতো নাম,
তাদের হাসিতে তুলে ধরুন আপনার চেষ্টা,
আপনার মনুষ্যত্বের বিনিময়ে তারা আবার বেঁচে উঠতে পারে; হাসিমুখে ।