আমার ইশকুল জীবনের বন্ধু; গৌরব দাস।
ফলাফলে যাকে কেউ ছুঁতে পারেনি চেষ্টা কষে,
প্রিয় ব্যক্তির তালিকায় কেউ কেউ তার নাম গোপনে তুলে রাখতো;
আমি তাকে ডাকলাম জাতির ভবিষ্যত!
অবসর সময়ে যে হাসিমুখে সেলাই করতো মানুষের পায়ের হাঁটা,
বই কিনতে না পারা কাউকে তার সেই রোজগার তুলে দিতো;
অভুক্ত পথিকের সাথে খাবার ভাগাভাগিতে আনন্দ খেতো,
এবার আমি ডাকলাম আদর্শবান অভিভাবক!
যে ছেলেগুলো কৃতকার্যের লাইনে নিজেদের নাম না তুলতে পেরে ইশকুল ছেড়েছিলো;
তাদের পড়ার টেবিলে 'গৌরব দাস' কে দেখা যেতো হাসিমুখে সন্ধ্যার ঘরে,
দু'এক পয়সার বেতনে কেউ তার হাতে প্রতিদান মুষ্টিবদ্ধ করতে পারেনি,
এবার আমি নাম দিলাম মহান শিক্ষক!
ভালোবাসার সংসারে 'গৌরব দাস' যে মেয়েটির নাম লিখেছিলো,
বয়সের নামতায় লোকমুখে শোনা যেতো পঁচিশ!
মেয়েটির প্রিয় রঙ ছিলো সাদা,
তার আপাদমস্তকে রাজত্ব ছিলো সফেদ শাড়ির;
মেয়েটি ছিলো মুসলিম,
বিয়ের বয়সের তিনের ঘরে তার নামের পাশে যোগ হলো; বিধবা!
সম্পর্কের কথা স্বীকারে ইশকুলের খাতা থেকে নাম মুছে গেলো গৌরব দাসের,
মানুষের পায়ের হাঁটায় হাত স্পর্শে আর চোখ পড়েনি,
সন্ধ্যার ঘরে কেউ তাকে আর বিশুদ্ধ উচ্চারণে ডাকেনি ওস্তাদজী!
তারপর ঘরে ঘরে নেমে এলো একাত্তর,
মানুষের গন্তব্য হতে থাকলো মৃত্যুর দিকে;
ঘুমের বুক থেকে মেয়েদের ঠিকানা হলো নরকের দেয়ালে,
যেখানে ওড়না সাক্ষী দেয় ধর্ষণের ভয়ানক বিবরণ,
চিৎকার শব্দ নিভতে থাকে বুটের দাপটে!
যুদ্ধের বয়স শেষে-
আমরা প্রিয়জনে চোখ রাখতে পায়ের হাঁটা গণনায় থেমে যাইনি,
মানুষের স্তূপে পেয়েছি মৃত চোখ,
চেহারার ভাঁজে পেয়েছি হাসির অবয়ব,
শাড়ির আয়নায় দেখেছি ধর্ষিতার নিবেদিত সন্মান!
মানুষের স্তূপ খুলে গৌরব দাস একটা লাশে থমকে ছিলো,
ফাতেমা;
যার আপাদমস্তকে রাজত্ব ছিলো সফেদ শাড়ির!
আমরা তাকে গৌরবের কোলে লাল শাড়িতে ঘুমাতে দেখলাম,
গৌরব সবুজ ঘাস তার কপালে রেখে চিৎকার করে বললো,
"আমার লাল সবুজের দেশ, আমার বাংলাদেশ!"
এবার আমি নাম দিলাম; মানুষ।