চারুলতা,
আমাদের বিয়ের বয়স নব্বই দিন পেরিয়ে একানব্বইয়ে;
দিনটা বুধবার-
ঘড়ির কাঁটায় তখন বিকেল পাঁচটা,
দু'মাস সাত দিন পর দ্বিতীয় বার তোমার কোলে মাথা রাখার অধীর প্রতীক্ষা!
বিকেল পাঁচটা,
কমলাপুর রেলস্টেশন; বগি নম্বর বি/২৯,
হাতে রুদ্রের কবিতা সমগ্র,
বই থেকে চোখ তুলে সামনে তাকালাম,
আমার সমবয়সী দু'জন আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদের তীব্র উষ্ণতা নিয়ে,
ডানে একজোড়া চোখ;
যিনি হাসিমেখে তাকিয়ে আছেন হাতে ছোরা নিয়ে!
আমি পেছনে তাকালাম- কোথাও কেউ নেই,
সামনে থেকে একজন বলে উঠলেন-
কবিতা লিখবেন কাল্পনিক চরিত্র তুলে;
প্রিয় ঋতুকে তুলে সাজাবেন কবিতার লাইন,
কবিতা লিখবেন প্রকৃতি নিয়ে,
কবিতায় কাশফুল জনপ্রিয়তার কারণগুলো ব্যখ্যা করবেন!
আরেকজন বলে উঠলেন-
সত্য কিংবা বাস্তব ঘটনা কবিতায় তুলে ধরার বিষয় না,
তাতে পরবর্তী কবিতা লিখতে কলম ছোঁয়ার ভরসা নাও থাকতে পারে!
আমি কবিতা লিখেছিলাম ধর্ষিতার বিচার চেয়ে ,
খুন হওয়া সন্তানের বাবার অশ্রুর ওজনের গভীরতা নিয়ে,
শ্রমিকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া অসহায় চেহারাগুলোর পক্ষে!
তারপর ওরা কেটে নিলো ডান হাতের আঙ্গুলগুলো;
অতঃপর জিভ!
কাঁধের ব্যাগ থেকে কবিতার পান্ডুলিপি নিয়ে পুড়িয়ে দিলো,
সারা স্টেশন খুঁজে কিনেছিলাম তোমার প্রিয় বকুলের মালা;
ওরা সেই মালাও থেঁতলে দিলো বুটের নিচে,
তোমার নীল পছন্দ জেনেও কিনেছিলাম বেগুনি রঙের খুব কম দামের একটা শাড়ি,
ওরা সেটাকেও রেহাই দিলো না!
সত্য-
পৃথিবীর বিশুদ্ধ পবিত্র সুন্দর,
যে সত্য বলতে পারে না তার পরিচয় নেই,
যে সত্য বলতে পারে না সে বোবা,
যে সত্য বলতে পারে না তার ধর্ম নেই;
সত্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্মের নাম,
যে সত্য বলতে পারে না তার ঘুমে ভয়,
যে সত্য বলতে পারে না তার দেহ অসুখে জর্জরিত,
মানুষের পরিচয় সত্যে, মানুষ বাঁচে সত্যে।
একুশের ঘরে যে তোমাকে ধর্ষণ করেছিলো;
সে সত্য বলে স্বীকার করে না সে ধর্ষক,
তার পরিচয় নেই,
যার পরিচয় থাকে না সে মানুষ না!
মানুষ- তুমি, আমি,
আমরা সত্য বলতে পারি,
সত্য বলে আমরা এক হাসিতে উচ্চারণ করে বলি-
আমরা মানুষ, আমরাই আলো,
আমরা আগামী, আমরাই সত্য।