পতাকা, বলো—তোমার জন্ম কোথায়?
মানুষের বুকে, নাকি মাটির রক্তে?
তোমার রঙিন কাপড়ের তলে
শুয়ে আছে কত প্রাণের গল্প,
যা কেউ পড়ে না,
শুধু উড়তে দেখে।
তুমি কি জানো, পতাকা
তোমার ছায়া যতটা প্রশস্ত
ততটাই সংকুচিত মানুষের হৃদয়?
তোমার তলে দাঁড়িয়ে রাজারা হাসে,
আর প্রজারা কাঁদে।
তুমি জানো না,
তোমার প্রতীক হয়ে উঠেছে শোষণের নতুন পাঠ।
তুমি কেন পোড়ো, পতাকা?
তোমার কাপড়ে কি জমেছে মানুষের রক্ত,
যা ধুতে পারে না সময়ের স্রোত?
তোমার রঙ মাড়িয়ে যায় ক্ষুধার্ত পায়ের দল,
তুমি তো তাদের বোঝো না।
তোমার বোঝা উচিত ছিল—
তারা তো তোমার জন্যই প্রাণ দিয়েছিল।
পতাকা, তুমি কি ঈশ্বরের চেয়ে বড়?
তোমার জন্য কেন মসজিদ ধ্বসে যায়?
কেন মন্দির জ্বলে ওঠে?
তুমি কি সত্যিই ঈশ্বরের প্রতীক,
নাকি মানুষের তৈরি বিভেদের ইতিকথা?
আমি শুনেছি,
তোমার রং নাকি স্বাধীনতার ভাষা,
তবে কেন সেই রঙে আঁকা হয় লড়াইয়ের মানচিত্র?
তুমি কি বুঝতে পারো,
তোমার তলে যে শিশুটি ঘুমায়,
তার চোখে ক্ষুধার চেয়ে বেশি কিছু নেই?
তুমি উড়ো পতাকা,
কিন্তু বাতাসের সঙ্গে মিশে বোঝার চেষ্টা করো
তোমার তলে পিষ্ট মানুষগুলো কী ভাবছে?
তারা তোমাকে ভালোবাসে,
তুমি তাদের কী দাও?
মিথ্যা আশা, বিভক্তির জাল,
আর শোষণের গান!
পতাকা,
আজ আমি তোমার বিচার চাই;
তোমার প্রতীক যদি মানুষকে জ্বালায়,
তবে তুমি কি সত্যিই পবিত্র?
তোমার রঙে যদি কেউ পোড়ে,
তবে তুমি কি স্বাধীনতার প্রতীক?
মানুষের পৃথিবীতে মানুষ মরছে,
অথচ তুমি নির্বিকার, তুমি উড়ছো!
তোমার উড়ান কি সত্যিই গর্বের,
নাকি তা মানুষের হাহাকারের ওপর ভর করে?
পতাকা, বলো—
তোমার তলে কি একদিন মানুষ বাঁচবে,
না তুমি কেবল এভাবে উড়তেই থাকবে,
যখন,
মানুষ থাকবে কঙ্কাল হয়ে মাটির নিচে?