একে একে সবাই এলো
গণমুক্তির স্বপ্নে ভাসলো
প্রতিটি মুখে আশা আর প্রত্যাশা ছিল,  
মুক্তির কথা, সমতার গান—  
তবে সেই গান ছিল মধুর বিষ।  
তারা বললো, “আমরা সবাই এক, মুক্তির পথ আমাদেরই,  
আবার আসবে নতুন ভোর,  আর এই পৃথিবী হবে সত্যের আলোয় আলোকিত”  

কিন্তু, পথ তো ছিলো কাচের মতো, ক্ষীণ
যতই পা ফেললো, ততই ভেঙে গেলো
তাদের শক্তি ছিল, তবে ভেঙে পড়া শাখা!
আসলে এটা একটা অন্ধকার বন  
যেখানে মুক্তির আলো কখনোই পৌঁছায় না।  
ওরা স্বপ্নের মেঘে ভেসে গেলো
আর সেই পথে এলো ধোঁকার ঝড়!  
এখানে আর সত্যের বীজ ফলবে না,  
এখানে কেবল ভ্রান্তির বীজ বেড়ে উঠবে।

মুক্তির পথ খুঁজতে খুঁজতে তারা রক্ত দিয়ে রক্ত নিলো,  
যতটুকু বাঁচানোর কথা বললো,  ততটুকু ক্ষত আরও গভীর হলো।  
গাছের শিকড়ে বিষের সুর—  
এটা আর ফল দিতে পারে না
শুধু মরিচিকার মতো ছায়া দেয়
এটা ভেজাল পৃথিবী তৈরি করে
এখানে স্বপ্নের পাখি উড়তে পারে না
এখানে কেবল খোকারা গাছের ছায়ায় পড়ে থাকে।  

মুক্তির চকচকে সিংহাসন আজও একইরকম, উঁচু
কিন্তু, সেই সিংহাসনের নিচে দূষিত পানির পুকুর—  
যতই সোনালি দেখতে, ততই ময়লা পানি।  
এখানে অথৈ জল,
যেখানে স্বপ্নের নৌকা ডুবে যায়
এটা এখন আর নদী নয়,  
এটা এখন গুম হয়ে যাওয়া স্মৃতির স্রোত।  
এখানে স্বাধীনতার মূর্তি দাঁড়িয়ে,  
কিন্তু তার পায়ে বাঁধা গিঁট!
এটা শুধু ছায়ার মতোই সোজা,  
এটা শুধুই ভ্রান্তির পথ।

একদিন,
এরা সবাই একসাথে ঝলমলাতে চেয়েছিল
তাদের গায়ে ছিল সুন্দর মাটি
কন্ঠ ছিলো সুমধুর!
গেয়েছিল মুক্তির গান।

আর এখন?
রক্তার্জিত মাটি তেলতেলে হয়ে যায়
এটা আর কোনো গর্বের পাহাড় নয়
এটা এখন ভেজাল মাটি—  
যেখানে যতই পা ফেলবে, ততই পিছলে যাবে।  
যাদের প্রত্যাশা ছিল আকাশে
তারা মাটি খুঁড়েও মাটি খুঁজে পেলো না,
ওরা যা পেলো, তা ভুল পথের মাটি,  
গভীর শূন্যতায় তৈরি হলো, গর্ত।

তাদের বিশ্বাস ছিল এক জ্বলন্ত প্রদীপ,  
আজ সেই প্রদীপ বাতাসে নিভে গেছে!  
এখন কেবলই অন্ধকার ঘর।  
এরা বলেছিল, “আমরা এক,  
আমরা পথ খুঁজে পাবো!”  
কিন্তু তারা ভুলে গেছে,  
যতটুকু একতা ছিল, ততটুকু ভ্রান্তি ঘিরে ধরেছিল।  

এখন?
তাদের পায়ের নিচে কাঁটাতারের বেড়া—  
এটা আর কোনোভাবেই সত্যের পথ নয়,  
এটা স্রেফ, মিথ্যার সড়ক—  
যেখানে সবাই একই দিকে চলে
কিন্তু, কখনোই গন্তব্যে পৌঁছায় না।  

তাদের সিংহাসন, তাদের ঝান্ডা—  
এসবকিছু- শুধুই ভাঙা কাঁচের মুকুট।  
লোকেরা যতবার বিশ্বাস করলো
প্রতিবারই মিথ্যা তাদের বুকের ভিতর ঢুকলো,  
তাদের কোনো গর্জন নেই, অর্জনও নেই,
এটা শুধুই শূন্যতার চিৎকার।  
তাদের স্বপ্ন, জগদ্দল পাথর হয়ে গেছে,  
এটা আর কখনোই রূপকথার মতো হয়ে উঠবে না।  

একতা;
যদি না থাকে,
মুক্তি;
কখনোই আসবে না।  
এই স্বপ্নের ধাঁধা চলতেই থাকবে,  
আর আমরা?
পথের হারানো যাত্রী হয়ে  
ভুল পদক্ষেপে চলতে চলতে  
মুক্তির খোঁজে,  
সত্যের খোঁজে
হাজারো চক্রে ঘুরবো,  
এভাবে ঘুরতেই থাকবো অনন্তকাল
কিন্তু, কখনোই গন্তব্যে পৌঁছাবো না।