আমাদের পেশায় শিকল, আমাদের স্বপ্নে ধূলি,  
আমরা দুইশো টাকা টিফিন ভাতা প্রাপ্ত উপহাসের কুলি!
সিংহাসনে বসে যারা হাসে—  
তাদের চোখে এই অন্নহীন দিনরাত এক ধ্রুপদী তামাশা
আমাদের খিদের পেটে মুড়ি ভেজানো চায়ের কাপ,  
রাষ্ট্র ভাবে, তাতেই বুঝি গরিবের স্বপ্নে ঝরে তৃপ্তির রূপ।  

পাঁচশো টাকা ছেলের স্কুলের খরচ?  
এ তো বাতাসের এক ফানুস, তাতে পিষ্ট স্বপ্নের গায়ে মরচে ধরেছে দারুণ!
দুই সন্তান হলে, মেলে এক হাজার,  
এ যেন বাঘের সামনে মাংসের ঠোঙা ধরার প্রতারণার খেলা!  
স্কুলের ফি, বই-খাতার দাম,  
এই শিক্ষার ভরাডুবি দেখে রাষ্ট্র তোমার একটুও করেনি লাজ?  

চিকিৎসার নামে দাও পনেরো শো ভাতা,  
রোগের থাবায় জীবন টালমাটাল, আর তুমি দিচ্ছো নিঃস্ব রিক্ত  খাতা!
হাসপাতাল, ওষুধ, ডাক্তার, রোগীর লাইন,  
আমাদের জীবন, সেই পনেরো শো টাকায়— বাঁধা এক লাইন।  
রাষ্ট্র, তুমি কি জানো, এ আমাদের জীবন নয়,  
এ জীবন যেন বিশ্বস্ত কুকুরের মতো একটা চেনা খাঁচায় পড়ে থাকা কায়ক্লেশ।  

কর্মচারীর বেতন বিশ থেকে পঁচিশ হাজার,  
তাতেই সংসারের চাকা গড়াতে বলে সাদা লবণ!
মাস শেষে হিসেবের খাতা মহাশূন্যে, ফাঁকা,  
এদের জীবনই যেন একটা ধোঁকা , দোকানীর হাসিটাও বাঁকা।  
তবু রাষ্ট্রের মন্ত্রীরা বিলাসবহুল চেয়ারে, হাওয়া খেতে ঘোরে এয়ারে!
আর আমাদের পাঁজর ভাঙা; তবুও কেউ দেখে না!
ভেবেচিন্তে নেয় না কারোর মাথা।  

আমাদের জীবনটা একই জায়গায় থমকে আছে,  
পদোন্নতি? সে তো মরুভূমিতে মেঘের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে!
যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা সব মিছে মোহ,  
তেলবাজির দেশে শুধু দক্ষতার পথেই গহীন বাঁধা!
আমাদের মেধা রিক্ত, অভিজ্ঞতা আজ মৃতপ্রায়—  
পদোন্নতির পথ তো দূরে সরানো এক স্বর্ণলতার পাত্র।

আমরা অর্ধপেটা খেয়ে আসি অফিসের ফাটলে,  
আমাদের ঘামেই দেশের চাকা ঘোরে তার পূর্ণতলায়
রাষ্ট্র, তবু তুমি চেয়ে থাকো, টাকা নয় কোনো গাছের পাতা,  
আমাদের এ ব্যথার খাঁজ যেন তোমার শোবার এক গদি নাতা।  

তুমি কি জানো, এ মাটির নিচে দমিত বেদনা জমছে অবিরত?  
এই বৈষম্যের পাথর সরাতে কবে আসবে মুক্তির বাতাস?  
ব্রিটিশরা গেছে, তবু শোষণের সে রূপরেখা অমলিন,  
আমরা যে শুধু সরকারি দাস— আমাদের রক্তের শিকড়ে চাবুকের কাঁটা রেখা।  

হে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, বড়কর্তা
তোমাদের রঙিন আবরণে রয়ে গেছে কালো দাগ,  
কবে ভাঙবে এ অন্যায়ের শৃঙ্খল ভাঙার লাল খাগ?  
বিশ্বস্ব কুকুরও পায় এক টুকরো খাবার,  
মানুষ আমরা, আজও পিঁজড়ে বন্দী, প্রাচীরের নিচে মচকে থাকা পাথর।  

তুমি যদি না শোনো, যদি না দেখো আমাদের চাহনি,  
জেনে রাখো, একদিন দমিত মানুষের বুকে উঠবে প্রবল কাহিনী  
শোষিত বঞ্চিত মুখের রক্তাক্ত গল্পের ভাঁজে জমেছে যে তপ্ত জ্বালা,  
সে তো একদিন নেমে আসবে চিৎকারে, দাবিয়ে দেবে এই শোষণের মলিন চারা।

____________ রশিদ ভাই।
ছয় দশ চব্বিশ