মানুষ, একসময় ছিল প্রকৃতির সন্তান,  
তার স্পর্শে ফুটেছিল ফুল, বনে বেজেছিল সুরের কোলাহল।  
কিন্তু সে ক্রমে হয়ে উঠল আগন্তুক,  
আপন মায়ের বুকে ছুঁড়ে দিল আগুনের শিখা—  
রাসায়নিকের বিষময় শ্বাস নিয়ে সে গড়ল নিজস্ব সাম্রাজ্য।  
পৃথিবী তখন তার স্নিগ্ধতা হারিয়ে যেতে বসেছে,  
অবশেষে, বনে নয়; কারখানার কুণ্ডলী ধোঁয়ার মাঝে লুকালো  
তার শেষ নিঃশ্বাস।
গাছেরা হয়ে উঠল মলিন ছবির মতো,  
যেন মৃত্যুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ঝরে পড়া একেকটা পাতা।  
নদীগুলো হারিয়ে ফেলল তাদের কাঁচের মতো স্বচ্ছতা,  
জলের ঢেউগুলো দোলা দিল না আর,  
তারা যেন বিষের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে কালের অন্ধকারে।  
প্রাণীরা হল নির্বাক দর্শক,  
যেন ছায়া হয়ে মিলিয়ে গেল পৃথিবীর বুক থেকে,  
যেন বাগানের শেষ ফুল ঝরে পড়লো তপ্ত সাহারার বালুতে।
মানুষ, সেই আগ্রাসী তিমির মতো,  
নিজেই নিজের আবাস ভেঙে ফেলল  
তার হাতে তৈরিকৃত রাসায়নিক তলোয়ার দিয়ে।  
আকাশের মেঘেরা কালো বিষে মিশে,  
মাটির নিচে জীবন নিভে যাচ্ছে আগুনের মতো ধীরে ধীরে।  
প্রকৃতি এক বৃদ্ধা মা, যার দেহে লাগিয়েছে বিষের কাঁটা—  
কোথাও নেই শান্তির বাতাস,  
সবটাই যেন বিষের অশ্রু ঝরানো মেঘের ভারী বোঝা।
আর মানুষ?  
সে তো একদিন বিলীন হবে নিজেরই কর্মফলে
পৃথিবীর বুকে সে হয়ে উঠবে স্মৃতির ধূসর রেখা,  
বিলুপ্তির পথে হাঁটছে প্রতিটি পা।  
তখন হয়তো তার স্থানে গজাবে নতুন সবুজ,  
কিন্তু সেই সবুযে আর হবে না মানুষের সৃষ্টি,  
এ-তো হবে প্রকৃতির নিজের প্রতিশোধ,  
যেখানে রাসায়নিকের ধোঁয়া আর থাকবে না  
থাকবে না কেউ কোনো মানুষের গল্প বলার মতো।
মানুষ;
সেতো তার মৃত্যুবীজ নিজ হাতেই রোপণ করেছে,  
বিষের সেই বীজ গড়ে তুলবে বিষাক্ত ফসল,  
যেখানে সে আর কখনোই দম নিতে পারবে না।  
রাসায়নিকের প্রতিটি কণা হবে তার জন্য অমোঘ রায়,  
প্রকৃতি ফিরে পাবে তার আপন শক্তি,  
কিন্তু তাতে থাকবে না মানবের কোনো ভূমিকা,  
মানুষ;
যখন বিস্মৃতির ছায়ায় হারিয়ে যাবে
তখন পৃথিবী আবার শ্বাস নেবে—  
কিন্তু সেই শ্বাসে থাকবে না মানবতার গন্ধ।