রাজু পাঁড়ে কে মনে কি আপনার ? আমার আজ বেশ মনে পড়ছে । কি বললেন চেনেন না আপনি? অবশ্য না চেনাটাই স্বাভাবিক । কারণ আপনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অরণ্যক' উপন্যাসটি পড়েননি । আর পড়েননি বলেই চেনেন না । কিন্তু আপনার পড়া খুব দরকার । কারন লেখকের বিহারের পূর্নিয়া জেলায় আরণ্যবাসর সমন্ধে তিনি যে গল্প ফেঁদেছেন তাতে গল্পের চরিত্র ভানুমতিকে জানার চেয়ে আপনার রাজু পাঁড়েকে জানা বিশেষ জরুরী । যদিও উপন্যাসটিতে রাজু পাঁড়ে কে নিয়ে বড় জোর একটি অধ্যায়ে লিখেছেন উপন্যাসিক । তারপরেও আপনাকে রাজু পাঁড়েকে জানা দরকার । রাজু পাঁড়ে পেশাতে একজন কৃষক । কিন্তু তার বিশেষত্ব হল তিনি কবিতা লেখেন । এবং সেই কবিতা গুলো অনেকটা আপনার মত মন গড়া শব্দ এবং উপমায় পরিপূর্ণ । আপনি যদি রাজু পাঁড়েকে প্রশ্ন করেন , ' আচ্ছা রাজু,সূর্য কোথা থেকে উদিত হয় ? ' রাজুপাঁড়ের সটান উত্তর, 'উই পোকার ঢিবি থেকে' । আপনি উত্তর শুনে হাসবেন । এবং আপনার হাসি দেখে রাজু পাঁড়ে বিস্মিত হবে । কারন রাজু প্রতিদিন সকালেই লক্ষ্য করেছে যে বিশাল একটা উই পোকার ডিবির পেছন থেকেই সূর্য উদিত হয় । কিন্তু আপনি হাসছেন কারন আপনিও জানেন এবং দেখেছেন যে সূর্য পূর্ব দিক থেকে উদিত হয় । আর এখানেই প্রকাশ পায় আপনার আর রাজু পাঁড়ের ঞ্জানের ফারাক । এর পরে হয়তো আপনি রাজু পাঁড়ে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, 'ধুর বোকা , সূর্য উই পোকার ঢিবি থেকে উঠতে যাবে কেন ? এই দ্যাখ সূর্য ওঠে পূর্ব দিক থেকে ।' রাজ পাঁড়ে যদি মুক্ত মনা হয় তাহলে দেখবেন রাজু পাঁড়ে আপনার কথা বিশ্বাস করেছে এবং যুক্তিহীন ভাবে তর্ক করছে না । কিন্তু রাজু পাঁড়ে যদি কুটিল মনা বা Narrow minded হয় তাহলেই আপনি ফেঁসেছেন । কারন সংকীর্ণমনাদের যতই আপনি প্রমান দেবেন তত আপনি সমস্যায় জড়াবেন । আর আমার এই আলোচনা সংকীর্ণমনা অল্প শিক্ষিত স্বঘোষিত কবি লেখকদের নিয়েই । কম্র বর্দ্ধমান আন্তর্জালিক সামাজিক নেটওয়াকিং সাইটগুলির বদৌলতে বাড়ছে ছোট-বড়-মেজ কবিদের সংখ্যা । নিসন্দেহে এটা বাংলা সাহিত্য ভান্ডারের ই লাভ । কিন্তু সমস্যা হল এর ওর দেখাদেখি কবিতা লিখছে তো ঠিকই কিন্তু কবিতা পড়ার ধৈর্য্য তারা দেখাচ্ছে না । ফলে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগই লেখা অপরিনত এবং ত্রুটি পূর্ণ । তাই দরকার একনিষ্ঠ সাহিত্যচর্চা নিদেন পক্ষে কিছু না হোক একটু পড়া । কারন আমরা যদি না পড়ি না জানি তাহলে দেখা যাবে আমাদের উত্তর কিংবা লেখা রাজু পাঁড়ের মতই ত্রুটিপূর্ণ । এপ্রসঙ্গে খ্যাতনামা কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য স্মরনীয় । পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম থেকে প্রকাশিত 'সচলায়াতন' নামক একটি পত্রিকার একটি কলামে লিখেছেন যে তিনি যদি কোনো লেখার আগে না পড়েন তাহলে তিনি এক লাইনও লিখতে পারবেন না । আর তাই তিনি হাতের কাছে যা পেতেন তা ই পড়ে ফেলতেন । একথা স্বীকার করতেই হয় যে সৃজনশীলতা হাতে কলমে শেখানো যায়না শুধু যা করা যায় তাহল একটু ধরিয়ে দেওয়া যায় । আর কিছু না । আর বোধহয় তাই পৃথিবীতে কবিতা লিখতে শেখানোর কোনো নির্ভর যোগ্য প্রতিষ্ঠান নেই । কিন্তু ওই যে বললাম ধরিয়ে দেওয়া যায় । আর এই ধরিয়ে দেওয়া কিংবা ভুল শুধরে দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় ঘোরোয়া সাহিড্য আড্ডায় । কিন্তু এই ব্যস্ত জীবনে সেই সুযোগ কোথায় ? তবে আশার কথা যে ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন কবিতা পোর্টালের মাধ্যমে সেই ভুল সংশোধনের সুযোগ আবার ফিরে পাওয়া গিয়েছে । কিন্তু এখন ব্যপার হল সেই সুযোগের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না । না , সেই সুযোগের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না । কারন সিংহভাগ মন্তব্যকারী প্রশস্তিমূলক দায় সারা মন্তব্য করেন 'বাহ, খুব সুন্দর ।' 'অসাধারণ' এই সব গোছের । ফলে দেখা যিনি কবিতা লিখছেন তিনি সঠিক গাইডেন্স পাচ্ছেন না । আর দিন দিন পরিণত হচ্ছেন এক অপুষ্ট কবি কিংবা লেখকে । তাই আসুন আমরা সবাই মিলে আরো বেশি লেখা পড়ি এবং লেখা যতটা সম্বব গঠনমূলক মন্তব্য করি । এর ফলে দেখা যাবে আমরা নিজেরাও দিন দিন পরিনত হচ্ছি এবং অপরকেও পরিনত হতে সাহায্য করছি ।
আলোচনাটি ৭০৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের সময়: ০৩/০৫/২০১৭, ০৪:৫৪ মি: