২০২৪ সালের ১৫ জুলাইয়ের আগে আমার ধারণা ছিল,
এ সরকার আর যা-ই করুক ছাত্র মারতে পারে না।
৫২,৬৯,৭১,৯০ এর ঐক্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি।
শোষণ,বঞ্চনা, নিষ্পেষণে ভুলে গেছি বিগত স্ফুলিঙ্গের ইতিহাস।
আমার শহীদ ভাইয়েরা-বোনেরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে,আমার ধারণা ভুল ছিল।
১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে আমি ঝাঁকে ঝাঁকে শিক্ষার্থীকে একত্র হতে দেখেছি।
আমার মনে হচ্ছিল,একই মায়ের গর্ভজাত না হোক,ওরা একই দেশের সন্তান।
কখনো মনে হচ্ছিল, ওরা আমারই আপন ভাই।
যখন পুলিশ ওদের উপর গুলি ছোড়ে,মনে হচ্ছিল আমার ভাইয়ের বুকের পাঁজর ফুটো হয়ে গেছে।
১৫,১৬,১৭,১৮ জুলাইয়ের বিভীষিকা আমি কখনো ভুলব না,ভুলবে না দেশবাসী
স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র সবাই একত্র হয়েছিল,একই পরিচয়ে।আমরা ছাত্র।আমাদের এক দফা,এক দাবি।
দেশের মুখে চুনকালি লাগিয়ে ওরা শহীদ হয়ে গেল।
সোনার বাংলাকে স্বাধীন বলতেও লজ্জা করছিল তখন।
শহীদ হয়েছে কারো সন্তান,কারো ভাই,কারো বোন,কারো বাবা,মা।
আবু সাঈদের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে মনে হচ্ছিল এ আমার দেশের অবস্থা।
কেন যেন ওর নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যের চেয়ে বেশি পীড়া দেয় পেটে ক্ষুধা নিয়ে টিউশনিতে যাওয়ার দৃশ্য।
তোমাকে আমরা কখনো ভুলবো না সাঈদ,মেধাবী সাঈদ।স্যালুট তোমাকে।
তুমি বেঁচে থাকলে হয়তো দেশের বিপদে এভাবেই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতে,রক্ষাকবচ হয়ে।
আপনার ভাই কি হতে পারতো না সাঈদ,ওয়াসিম,মুগ্ধ,আদনান,রাফি সহ বাকিরা?
ওদের দিকে বুলেট,গ্রেনেড,টিয়ার,রড ছুঁড়তে কি হাত কাঁপতো না তখন?
আপনার বোনের শরীরে যারা ইট নিক্ষেপ করে,লাঠির আঘাত করে তাদের আপনি ছেড়ে দিতেন এভাবেই?
প্রশ্ন আমার দেশবাসীর কাছে, সরকারের কাছে,তথাকথিত নেতাদের কাছে।
কোনো মা সপ্তাহের বাজার করতে তার কোলের বাচ্চা রেখে পথে এসেছেন,তাকেও মেরে ফেললেন আপনারা?
তার সন্তান সারাদিন অপেক্ষা করে মা মা বলে চিৎকার করবে।
কোনো অফিসফেরত পিতা সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে ঘরে ফিরছিলেন,তাকেও খুন করতে হলো?
দুদিন না খেয়ে থাকা পরিবারের জন্য খাবারের সন্ধান করতে বেরিয়েছেন কোনো দিনমজুর, তার চোখ চিরকালের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে ছররা গুলিতে।
কি বিরূপ ধারণা নিয়ে বেঁচে থাকবে তাদের সন্তান,ভাবতে পারেন?
অনেক মা এখনো জানেন না,তার সন্তানের লাশ হাসপাতালের মর্গে।
তিনি হয়তো অপেক্ষাই করে যাবেন সন্তানের বাড়ি ফেরার।
অভিভাবকদের আহাজারির কি জবাব দেবেন?
"আমার ছেলেকে চাকরি না দিন,কিন্তু প্রাণে মারলেন কেন?"
আজ আমাদের কোনো শামসুজ্জোহার মত শিক্ষক পাশে  নেই,নজরুলের মত কবি পাশে নেই।
সহজেই পারতেন এ দাবির সমাধান করতে
ছাত্র ও দেশবাসীর উপর যারা পৈশাচিক আচরণের ক্ষমতা দেখায়,সেই ক্ষমতাকে আমরা ধিক্কার জানাই।
দেশ আমাদের, কথা বলার অধিকার আমাদের আছে।
ক্যালেন্ডারের জুলাই পাতা থেকে হচ্ছে রক্তক্ষরণ,জননীর হৃদয়পটের মত সে পাতা।
সর্বগ্রাসী পতাকায় হারিয়ে ফেলিনি স্বাধিকারের দাবি
হৃদয়ে ধরে রেখেছি সংঘবদ্ধ একতার রক্তবীজ।
জেনো,রক্তের বিনিময়ে কেনা এ বাংলার মাটিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা না করে থামছি না আর।