হেই দিনডার কথা মনে অইলে অহনও
কলিজা ডা আমার ফাঁক অইয়া যায়!
রাইত অইলে অহনও আমি ঘুমাইতে পারি না
ঘুমের ঘোরে আতকা ছিক্কোর দিয়া উঠি।
চোখের সামনে ঝকঝকা ভাইস্যা উঠে
হহিনের দল লইয়া শয়তান ছমিরমেয়া
আমার পথ আটকায়া খাড়ইছে, আর কইতাছে
"শুনেন ভাবিসাব, আপনার সাথে অনেক দিনের একটা হিসেব
আজ সেই হিসাবটা মিটায়া দেয়াম!"
কথাডা হুইন্যা চোখ দুইটা আন্ধার অইয়া গেছে,
এর হরের যে ঘটনা আমি আর কিছুই কইতে পারি না।
যহন আমার চেতন অইছে, চায়া দেহি
আমরার ঘরের ভিতর অনেক মানুষ,
বেহেই আমার দিকে চায় আর
ফিসফিস কইরা কিতা জানি কয়।
দেশ স্বাধীনের পর আমারে লইয়া গেরামবাসী
নানান কুকথা কইতে থাহে, আর
আমার সংসারে নামে অশান্তির আগুন।
দিন যত যায় আগুনের তাপ ততই বাড়ে!
আগুনের তাপে পুইড়্যা ছাড় কার অইয়া যাই,
কলঙ্কিত জীবন লইয়া আমি আর বাঁচতে চাই না!
গলায় দড়ি দেয়া আর না হয় একটু বিষ খায়া
শেষ করে দিতে চাই, এই কলঙ্কিত জীবন।
কিন্তুক আমি আর পারলাম না,
নিজেরে আমি শেষ করতে পারলাম না।
এই ভাইবা অহনও বাঁইচা আছি
আমার গায়ে শুধু কলঙ্কের দাগ লাগছে
জীবনডাত আর যায় নাই, জীবনডাত অহনও বাঁইচা রইছে!
আর কত মায়ের কোল যে খালি অইছে, কত মাইনষের জীবন যে গেছে
আমার মতো আরও কত মা-বোনের গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগছে
তার হিসেব তো একবারও কইরা দেহি নাই।
কলঙ্কের দাগ লাগলেই বা আর কী!
দেশটা তো অহন স্বাধীন অইছে।
অহন আর কেউ আমরারে অইত্যাচার করব না
আমরাও অহন স্বাধীন।
আমার মনডাত বড় দুঃখ লাগে,
যহন দেহি অই শয়তান ছমিরমেয়া এই সমাজে
মাথা উঁচা কইরা অহনও বাঁইচা রইছে।
আবার হুনছি সে নাকি রাজনীতিও করে!
এই শয়তানডারে দেখলে কলিজা ডা আমার
আরও বেশী ফাঁক অইয়া যায়!
নিজেরে আর তহন সামলাইতে পারি না,
মনডাত অনেক কষ্ট লাগে তহন।
কি আর করবাম! সবি কহালের লেহারে ভাই
সবি কহালের লেহা!
(নেত্রকোণার আঞ্চলিক ভাষায় রচিত)