রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রেম এবং তাঁর সৌন্দর্যকে  আত্মার সাথে একত্রে নিয়ে আসেন বিশ্বভূবনে। যে ভূবনে শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, রবং সেই ধর্মবোধও কাজ করে মননে। সৌন্দর্য ও সৃষ্টিশীলতায় বিশাল এক কারিগড় যখন প্রার্থনা করেন আত্মা বা মনের সৃষ্টি সেই ‘নাথের’ নিকট যে ‘নাথ’ তাকে দূরে নয় বরং আরো কাছে আত্মার সাথে একাত্ম ক'রে নেয়। তিনি প্রার্থনা করেন এর মাঝে যেন কোনো দূরত্ব বা ব্যবধান না থাকে। তা যেন হ'য়ে উঠে আত্মার সাথে আত্মার অপার সৌন্দর্যের এক অভূতপূর্ব সমন্বয়। “প্রেমের অধিকার” (১৭ পৌষ: ১৩১৫)-এর রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টি করেন এক প্রার্থনাময় কবিতা:

“নাথ হে, প্রেম পথে সব বাধা ভাঙিয়া দাও।
মাঝে কিছু রেখো না, থেকো না দূরে।
নির্জনে সজনে অন্তরে বাহিরে নিত্য তোমারে হেরিব,
সব বাধা ভাঙিয়া দাও।“

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেমে  থাকেননি শুধু এই ভাবনা বা ভাবের মাঝে। বরং নিজ থেকেই করেন প্রার্থন্ াযে প্রার্থনা রবীন্দ্রনাথের আত্মার ও মনের প্রার্থনা। “এ প্রেম কার সঙ্গে মানুষ কেমন করে এ কথা কল্পনাতে এনেছে এবং মুখে উচ্চারণ করেছে যে বিশ্বভূবনেশ্বরের সঙ্গে তাঁর প্রেম হবে। বিশ্বভূবন বলতে কতখানি বোঝায় এবং তাঁর তুলনায় একজন মানুষ যে কত ক্ষুদ্র সে কথা মনে করলে যে মুখ দিয়ে কথা সয়ে না। সমস্ত মানুষের মধ্যে আমি ক্ষুদ্র, আমার সুখ-দুঃখ কতই অকিঞ্চিৎকর। সৌরজগতের মধ্যে সেই মানুষ এক মুষ্টি বালুকার মতো যৎসামান্যে এবং সমস্ত নক্ষত্রলোকের মধ্যে এই সৌরজগতের স্থান এত ছোটো যে অঙ্কর দ্বারা তার গণনা করা দুঃসাধ্য প্রকাশ করেন রবীন্দ্রনাথ।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সৌন্দর্য’ (১৯ পৌষ: ১৩১৫) শীর্ষক রচনায় সেই ‘সত্য’, ‘সুন্দর’ ‘প্রার্থনা’ এবং তার সাথে ঈশ্বরের ভাবনার সত্য নিযে আসেন আপনরূপে। যে রূপ এবং তাঁর সৌন্দর্যের সাথে সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর-ও এক হ’য়ে ধরা দেয়। সৌন্দর্য রচনার শুরুটাই হয় ঈশ্বর সত্য নিয়ে। তাঁর মনও মগজে গেঁথে রয়  সত্যের ভাবনা নিয়ে। সেই ভাবনা শুধু সত্য নয়, একই সাথে তা স্বীকার ক’রে নিতে হয় ভাবনার সাথে। তিনি বলেন:
‘ঈশ্বর সত্য’। তাঁর সত্যকে আমরা স্বীকার করতে বাধ্য। সত্যকে এতটুকু মাত্র স্বীকার না করলে আমাদের নি®কৃতি নেই। সুতরাং অমোঘ সত্যকে আমরা জলে স্থলে আকাশে সর্বত্র দেখিতে পাচ্ছি। কিন্তু তিনি তো শুধু সত্য নন-তিনি “আন্দরূপম মৃতং”। তিনি আনন্দরূপ, অমৃতরূপ। সেই তার আনন্দরূপকে দেখছি কোথায়?

‘সৌন্দর্য’-রচনার পরের রচনাটি হলো “প্রার্থনার সত্য” (২০ পৌষ: ১৩১৫), যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপাসনা, ধ্যান, ঈশ্বর, প্রার্থনা, ইত্যাদি ব্যাপারগুলোকে আবার তুলে আনেন। প্রার্থনার সত্য তা আবার প্রার্থনার মতোই সত্য হয়ে আসে। যা মনোনিবেশ ক’রে সত্যের মতো। ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তাকে ধারণ করা, বা তাঁর জন্য উপাসনা করো যা হ’য়ে উঠে ধর্মবোধেরই চরম বহিঃপ্রকাশ রূপে।

“কেউ কেউ বলেন, উপাসনায় প্রার্থনার কোনো স্থান নেই-উপাসনা কেবলমাত্র- ধ্যান। ঈশ্বরের স্বরূপকে মনে উপলব্ধি করা। সে কথা স্বীকার করতে পারতুম যদি জগতে আমরা ইচ্ছার কোনো প্রকাশ না দেখতে পেতুম। আমরা লোহার কাছে প্রার্থনা করি নে, পাথরের কাছে প্রার্থনা করি নে-যার ইচ্ছাবৃত্তি আছে তার  কাছেই প্রার্থনা জানাই। ঈশ্বর যদি কেবল সত্যস্বরূপ হতেন। কেবল অব্যর্থ নিয়মরূপে তাঁর প্রকাশ হত তা হলে তাঁর কাছে প্রার্থনার কথা আমাদের কল্পনাতেও উদিত হতে পারত না। কিন্তু তিনি নাকি “আন্দরূপমমৃতং”। তিনি নাকি  ইচ্ছাময়, প্রেমময়, আনন্দময়, সেইজন্যে কেবলমাত্র বিজ্ঞানের দ্বারা তাঁকে আমরা জানি নে, ইচ্ছার দ্বারাই- তাঁর ইচ্ছাস্বরূকে আন্দরূপকে জানতে হয়।’ পূর্বেই বলেছি জগতে ইচ্ছার একটি নিদর্শন পেয়েছি সৌন্দর্যে। এই সৌন্দর্য আমাদের ইচ্ছাকে জাগ্রত করে এবং  ইচ্ছার উপরেই তার নির্ভর। এই জন্য আমরা সৌন্দর্যকে উপকরনরূপে ব্যবহার করি প্রেমের ক্ষেত্রে, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নয়।  এই জন্য আমাদের সজ্জ, সংগীত, সৌগন্ধ্য সেইখানেই যেখানে ইচ্ছার সঙ্গে ইচ্ছার যোগ, আনন্দের সঙ্গে আনন্দের মিলন। জগদীশ্বর তাঁর  জগতে এই অনাবশ্যক সৌন্দর্যের এমন বিপুল আয়োজন করেছেন বলেই আমাদের হৃদয় বুঝেছে, জগৎ একটি মিলনের ক্ষেত্রে-নইলে এখানকার এত সাজসজ্জা একেবারেই বাহুল্য।”

“শান্তিনিকেতন” গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ‘পার্থক্য’ (২৩ পৌষ : ১৩১৫)- শিরোনামে আবার  ঈশ্বর এবং তার প্রকৃতি এক হয়। প্রকৃতি,   ঈশ্বর, ভাব এবং চেতনা সব কিছু নিয়ে বিশ্বজগতের মাঝে নিজের একটি উজ্জ্বল উপস্থাপন করেন। যেখানে ‘প্রকৃতি’ এবং ‘ঈশ্বর ভাবনা’-এক হ'য়ে রয় রবীন্দ্রনাথের ভাবনালোকে।
‘পার্থক্য’-এ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন:
ক. “ঈশ্বর যে কেবল মানুষকেই পার্থক্য দান করেছেন আর প্রকৃতির সঙ্গে মিলে এক হয়ে রয়েছেন, একথা বললে চলবে কেন? প্রকৃতির সঙ্গেও তাঁর একটি স্বাতন্ত্র আছে নইলে প্রকৃতির উপরে তাঁর তো কোনো ক্রিয়া চলত না।”
খ. “ঈশ্বর এই প্রকৃতিকে কী দিয়ে পৃথক করে দিয়েছেন। নিয়ম দিয়ে।  নিয়ম দিয়ে না যদি পৃথক করে দিতেন তা হলে প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর ইচ্ছার যোগ থাকত না।
একাকার হয়ে থাকলে ইচ্ছার গতিবিধির পথ থাকে না।”
গ. “বিশ্বজগতে ঈশ্বর জলের নিয়ম, স্থলের নিয়ম, বাতাসের নিয়ম, আলোর নিয়ম, মনের নিয়ম, নানা প্রকার নিয়ম বিস্তার করে দিয়েছেন। এই নিয়মকেই আমরা বলি সীমা। এই সীমা প্রকৃতি কোথাও থেকে মাথায় করে এনেছে, তা তো নয়। তার ইচ্ছাই নিজের মধ্যে এই নিয়মকে এই সীমাকে স্থাপন করেছে-নতুবা,  ইচ্ছা বেকার থাকে, কাজ পায় না। এই জন্যই যিনি অসীম তিনিই সীমার আকর হয়ে উঠেছেন-কেবল মাত্র ইচ্ছার দ্বারা, আনন্দের দ্বারা। সেই কারণের উপনিষ্য বলেন, ‘আনন্দদ্যের খল্বিমানি ভূতামি জায়ন্তে।’ সেই জন্যেই বলেন, যিনি  প্রকাশ পাচ্ছেন তাঁর যা কিছু রূপ তা আনন্দরূপ অর্থাৎ মূর্তিমান ইচ্ছা-ইচ্ছা আপনাকে সীমার বেঁধেছে, রূপে বেঁধেছে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এবং সেই সাথে ঈশ্বর ভাবনা ও তাঁর নিজের প্রেমের সাথে একাত্ব ক’রে নিয়েছেন তার নিজের আত্মাকে। যে সৌন্দর্য ও প্রেম ভাবনাকে। নিজের মধ্যে না রেখে নিয়ে এগিয়েছেন প্রকৃতির মধ্যে। যে প্রকৃতি ‘প্রেম’ ও ‘ঈশ্বর’ ভাবনা দ্বারা রবীন্দ্রনাথকে আরো প্রকৃতি ও ঈশ্বরপ্রেম রূপে এগিয়ে দেয়।
“প্রকৃতি” (২৪ পৌষ: ১৩১৫) এ বলেন: “ঈশ্বরের সমান না তে পারলে তাঁকে উপলব্ধি করব কী করে? আমরা যতই রেলগাড়ি চালাই আর টেলিগ্রাফের তার বসাই শক্তি ক্ষেত্রে আমরা ঈশ্বর হতে অনন্ত দূরে থেকে যাই। যদি ষ্পর্ধা করে তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবার চেষ্টা করি তা হলে আমাদের চেষ্টা আপন অধিকারকে লঙ্ঘন করে, ব্যাসকাশীর মতো অভিশপ্ত এবং বিশ্বামিত্রের সৃষ্টি জগতের মতো বিনাশপ্রাপ্ত হয়।”

এই জন্যেই জগতের সমস্ত ধর্ম সাধকেরা বারংবার বলেছেন, ঐশ্বর্য পথের পথিকদের পক্ষে ঈশ্বর দর্শন অত্যন্ত দুঃসাধ্য। অন্তহীন চেষ্টা চরমতাহীন পথে তাদের কেবলই ভূলিয়ে ভুলিয়ে নিয়ে যায়।

অতএব, ঈশ্বরকে বাহিরে অর্থাৎ তাঁর শক্তির ক্ষেত্রে কোনো জায়গায় আমরা  লাভ করতে পারি নে। যেখানে যে বালুকনাটির অন্তরালে তিনি রয়েছেন সেই বালুকণাটিকে নিঃশেষে  অতিক্রম করে এমন  সাধ্য কোনো বৈজ্ঞানিকের, কোনো যান্ত্রিকের নেই। অতএব শক্তির ক্ষেত্রে যে লোক ঈশ্বরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে যায়, সে অর্জুনের সঙ্গে  ছদ্মবেশী মহাদেবকে বান মারে-সে বান তাঁকে স্পর্শ করে না। সেখানে না  হেরে উপায় নেই।
এই শক্তির ক্ষেত্রে আমরা ঈশ্বরের দুই মূর্তি দেখতে পাই-এক হচ্ছে অন্নপূর্ণা মূর্তি-এই মূর্তি ঐশ্বর্যের দ্বারা আমাদের শক্তিকে পরিপুষ্ট করে তোলে। আর এক হচ্ছে করালী কালী মূতি-এই মূর্তি আমাদের সীমাবব্ধ শক্তিকে সংহরণ করে নেয়, আমাদের কোনো দিক দিয়ে শক্তির চরমতায় যেতে দেয় না-না টাকায়, না খ্যাতিতে না অন্য কোনো কামনার বিষয়ে। বড় বড় রাজসাম্রাজ্য ধূলিস্যাৎ হয়ে যায়-বড়ো বড়ো ঐশ্বর্যভান্ডার ভুক্তশেষ নারিকেলের খোলার মতো পড়ে থাকে। এখানে পাওয়ার মূর্তি খুব সুন্দর উজ্জ্বল এবং মহিমান্তিত, কিন্তু যাওয়ার মূতি, হয় বিষাদে পরিপূর্ণ নয় ভয়ঙ্কর। তা শুণ্যতার চেয়ে শূন্যতর, কারণ তা পূর্ণতার অন্তর্ধান।

জগৎ, চিন্তা এবং তাঁর ভাবনা সব  কিছুই রবীন্দ্রনাথ নিয়ে এসেছেন তাঁর সমস্ত লেখায়। ‘ঈশ্বর’, ‘প্রার্থনা’, ‘পূজা’, ‘নমস্কার’, ‘অর্চনা’, ‘শক্তি’ এবং ‘ঈশ্বর বন্দনা’ সবই একে একে ঈশ্বর সন্তুষ্ট বা তাঁর অর্চনায় নিমগ্ন থেকেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এখানে রবীন্দ্রানাথকে এক পূজারী বা ঈশ্বর প্রার্থনকারী যা-ই বলি না কেন, তিনি হ'য়ে উঠেন একজন প্রচন্ড বিশ্বাসী ধর্মানুরাগী হ'য়ে। যে চেতনা বা বিশ্বাস তাঁকে আরো বেশি বিশ্বাসী ক'রে তোলে।
একজন বিশ্বাসী বা প্রার্থনাকারী যেমন প্রত্যহ পালন করেন কিছু নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম, রবীন্দ্রনাথ ও হ'য়ে উঠেন তাদের মতো। তিনি ও নিজেকে বিচ্যুতি  ঘটান না ওই ক্রিয়াকর্ম থেকে। এই জন্যেই প্রতিদিন প্রার্থনা করেন, প্রার্থনা করেন একজন প্রার্থনকারী হ’য়ে।
“পাওয়া” (২৫ পৌষ: ১৩২৫)-এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন:

“জগতে তুমি রাজা অসীম প্রতাপ,
হৃদয়ে তুমি হৃদয়নাথ হৃদয়হরণরূপ।
নীলাম্বর জ্যোতি খচিত চরণপ্রান্তে প্রসারিত,
ফিরে সভয়ে নিয়মপথে অনন্তলোক।
নিভৃত হৃদয় মাঝে কিবা প্রসন্ন মুখচ্ছবি,
প্রেমপরিপূর্ণ-মধুরভাতি।
ভক্তহৃদয়ে তব করুনা রস সতত বহে,
দীনজনে সতত কর অভয়দান।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “কালান্তর” রচনা করেন (১৩২১-১৩৪৩)-এর মধ্যে, এবং এটি গ্রন্থকারে প্রকাশ পায় ১৩৪৪-এর বৈশাখে।
“কালান্তর”-এ অন্তর্ভূক্ত করেন ‘কালান্তর’, ‘ছোটো ও বড়ো’, ‘শক্তি পূজা’, ‘সত্যের আহবান’, ‘সমাধান’, ‘ক্ষুদ্রধর্ম’, ‘বৃহত্তর ভারত’, ‘হিন্দু মুসলমান’, ‘নারী’ এবং এরকম শিরোনামের আরো কিছু লেখা।

ধর্ম ভাবনা ‘কালান্তর’-এ এসে হয়ে ওঠে হিন্দু-মুসলমানের এক সংঘাত ও সংঘর্ষময়, যেখানে এসে উপস্থিত হয় প্রধান দু’টি জাতি, হিন্দু ও মুসলমান। যে হিন্দু ও মুসলমান শুধু নিজেকে নয় বরং একত্রিত ক’রে তোলে রবীন্দ্রনাথের বিশ্বলোক ও সম্পূর্ণ ভারতবর্ষকে।
“কালান্তর” গ্রন্থের ‘ছোটো ও বড়ো’ (অগ্রহায়ণ : ১৩২৪)- এ, এসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন:
“একথা মানিতেই হইবে আমাদের দেশে ধর্ম লইয়া হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একটা কঠিন বিরুদ্ধতা আছে। যেখানে সত্যভ্রষ্টতা সেখানেই অপরাধ, যেখানে অপরাধ সেইখানেই শাস্তি। ধর্ম যদি অন্তরের জিনিস না হইয়া শাস্ত্রমত ও বাহ্য আচারকেই মুখ্য করিয়া তোলে তবে সেই ধর্ম যত বড়ো অশান্তির কারণ হয়, এমন আর কিছুই না। এই ‘ওগমা’ অর্থাৎ শাস্ত্রমতকে বাহির হইতে পালন করা লইয়া যুরোপের ইতিহাস কতবার রক্তে লাল হইয়াছে। অহিংসাকে যদি ধর্ম বলো, তবে সেটাকে কর্মক্ষেত্রে দুঃসাধ্য বলিয়া ব্যবহার না মানিতে পারি, কিন্তু বিশুদ্ধ আইডিয়ালের ক্ষেত্রে তাহাকে স্বীকার করিয়া ক্রমে সে দিকে অগ্রসর হওয়া অসম্ভব নহে। কিন্তু বিশেষ শাস্ত্রমতের অনুশাসন্যে- বিশেষ করিয়া যদি কেবল বিশেষ পশুহত্যা না করাকেই ধর্ম বলা যায় এবং সেইটে জোর করিয়া যদি অন্য ধর্মমতের মানুষকেও মানাইতে চেষ্টা করা হয়, তবে মানুষের সঙ্গে মানুষের বিরোধ কোনাকালেই মিটাতে পারে না। নিজে ধর্মের নামে পশুহত্যা করিব অথচ অন্য ধর্মের নামে পশুহত্যা করিলেই নরহত্যার আয়োজন করিতে থাকিব, ইহাকে অত্যাচার ছাড়া আর কোনো নাম দেওয়া যায় না। আমাদের আশা এই যে, চিরদিন আমাদের ধর্ম আচার প্রধান হইয়া থাকিবে না। আরো একটি আশা আছি, একদিন হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে দেশহিত সাধনের একই রাষ্ট্রীয় আইডিয়াল যদি আমাদের রাষ্ট্রতন্ত্রে বাস্তব হইয়া উঠে তবে সেই অন্তরের যোগে বাহিরের সমস্ত পার্থক্য তুচ্ছ হইয়া যাইবে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্থির থাকেননি নিজের স্বধর্মের মাঝে, বরং বিচরণ করেছেন মানুষের কল্যাণে এবং ব্যক্তি জীবনের ধর্মে। সেই ধর্মের প্রভাব কতটা বিরাজ ক’রে তা নিয়ে। আর তার জন্য তিনি আলোচনা করেছেন বহু ধর্ম নিয়ে। যে ধর্ম ব্যক্তিক নয়, বরং তা দেখা দেয় বহু জাতিক ধর্মে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আবার ‘কালান্তর’ (১৩৪৪)-এ বলেন: “স্বীকার করি, কাজ কঠিন হইয়াছে। বাংলাদেশের একদল বালক ও যুবক স্বদেশের সঙ্গে স্বদেশীর সত্য যোগসাধানের বাধা-অতিক্রমের যে পথ অবলম্বন করিয়াছে তাহার জন্য আমরা লজ্জিত আছি। আরো লজ্জিত এই জন্য যে, দেশের প্রতি কর্তব্যনীতির সঙ্গে ধর্মনীতির বিচ্ছেদ সাধন করায় অকর্তব্য নাই এ কথা আমরা পশ্চিমের কাছে হইতেই শিখিয়াছি। পলিটিক্সের গুপ্ত ও প্রকাশ্য মিথ্যা এবং পলিটিক্সের গুপ্ত ও প্রকাশ দস্যুবৃত্তি পশ্চিম সোনার সহিত খাদ মিশানোর মতো মনে করেন, মনে করেন ওটুকু না থাকিলে সোনাশক্ত হয় না। আমরাও শিখিয়াছি যে, মানুষের পরমার্থকে  দেশের স্বার্থের উপরে বসাইয়া ধর্ম লইয়া টিক টিক করিতে থাকা মূঢ়তা, দূর্বলতা, ইহা সেন্টিমেন্টালিজম-বর্বরতাকে দিয়াই সভ্যতাকে এবং অধর্মকে দিয়াই ধর্মকে মজবুত করা চাই। এমনি করিয়া আমরা যে কেবল অধর্মকে বরণ করিয়া লইয়াছি তাহা নহে, আমাদের গুরুমশায়দের যেখানে বীভৎসতা, সেই বীভৎসতার কাছে মাথা হেঁট করিয়াছি। নিজের মনের জোরে ধর্মের জোরে গুরুমশায়ের উপরে দাঁড়াইয়াও এ কথা বলিবার তেজ ও প্রতিভা আমাদের আজ নাই যে, অর্থাৎ অর্ধমের দ্বারা মানুষের বাড়িয়া উঠে, অধর্ম হইতে সে আপন কল্যাণ দেখে, অর্ধমের ধারা সে শত্রুদিগকেও জয় করে, কিন্তু একেবারে মূল হইতে বিনাশ পায়। তাই বলিতেছি, গুরুমশায়দের কাছে আমাদের ধর্মবুদ্ধিরও যে এত বড়ো পরাভব হইয়াছে হইাতেই আমাদের সকলের চেয়ে বড়ো লজ্জা। বড়ো আশা করিয়াছিলাম, দেশে যখন দেশভক্তির আলোক জ্বলিয়া উঠিল তখন আমাদের প্রকৃতির মধ্যে যাহা সকলের চেয়ে মহৎ তাহাই উজ্জ্বল হইয়া প্রকাশ পাইবে; আমাদের যাহা যুগসঞ্চিত অপরাধ তাহা আপন অন্ধকার কোন ছাড়িয়া পালাইয়া যাইবে; দুঃসহ নৈরাশ্যের পাষাণস্তর বিদীর্ণ করিয়া অক্ষয় আশার উৎস উৎসারিত হইয়া উঠিবে এবং দুরূহ নিরুপায় তাকেও উপেক্ষা করিয়া অপরাহত ধৈর্য্য এক এক পা করিয়া আপনার রাজপথ নির্মাণ করিবে, নিষ্ঠুর আচারের ভারে এ দেশে মানুষকে মানুষ যে অবনত অপমানিত করিয়া রাখিয়াছে অকৃত্রিম প্রীতির আনন্দময় শক্তির দ্বারা সেই ভারকে দূর করিয়া সমস্তু দেশের লোক একসঙ্গে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইব। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে এ কী হইল। দেশ ভক্তির আলোক জ্বলিল। কিন্তু সেই আলোতে এ কোন দৃশ্য দেখা যায়-এই চুরি ডাকাতি গুপ্তহত্যা? দেবতা যখন প্রকাশিত হইয়াছেন তখন পাপের অর্ঘ্য লইয়া তাঁহার পূজা? যে-দৈন্য যে জড়তায় এতকাল আমরা পোলিটিক্যাল ভিক্ষাবৃত্তিকেই সম্পদ লাভের সদুপায় বলিয়া কেবল রাজদরবারে দরখাস্ত লিখিয়া হাত পাকাইয়া আসিয়াছি, দেশ-প্রীতির নববসন্তেও সেই দৈন্য সেই জড়তা সেই আত্মবিশ্বাস পলিটিক্যাল চৌর্যবৃত্তিকেই রাতারাতি ধনী হইবার একমাত্র পথ মনে করিয়া সমস্ত দেশকে কি কলঙ্কিত করিতেছে না।”

একই গ্রন্থে আবার দুই দেবতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন: “বাংলার মঙ্গলকাব্যগুলির বিষয়টা হচ্ছে, এক দেবতাকে তারা সিংহাসন  থেকে খেদিয়ে দিয়ে আর এক দেবতার অভ্যূদয়। সহজেই এই কথা মনে হয় যে, দুই-দেবতার মধ্যে যদি কিছু নিয়ে প্রতিযোগিতা থাকে তা হলে সেটা ধর্ম নীতিগত আদর্শেরই তারতম্য নিয়ে। যদি মানুষের ধর্ম বুদ্ধিকে নূতন দেবতা পুরাতন দেবতার চেয়ে বেশি তৃপ্তি দিতে পারেন তা হলেই তাঁকে বরণ করিবার সংগত কারণ পাওয়া যায়।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৫ জ্যোষ্ঠ : ১৩২৬)-এ “কালান্তর” গ্রন্থে উল্লেখ করেন: “এ কথা মনে রাখতে হবে, বাইরের বাধাবিঘœ বিরুদ্ধতা চিরদিনই থাকবে, থাকলে ভালো বৈ মন্দ নয়-কিন্তু অন্তরে বাধা থাকলেই বাইরের বাঁধা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এই জন্যে ভিক্ষার দিকে না তাকিয়ে সাধণার দিকে তাকাতে হবে, তাতে অপমানও যাবে, ফলও পাব।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন : “একটি কথা মনে রাখতে হবে, দস্যুর উপাস্য দেবতা শক্তি, বর্গীর উপাস্য দেবতা শক্তি, কাপালিকের উপাস্য দেবতা শক্তি। আরো একটি ভাববার কথা আছে, পশুবলি বা নিজের রক্তপাত, এমন-কি নরবলি স্বীকার করে মানত দেবার প্রথা শক্তিপূজায় প্রচলিত। মিথ্যা মামলায় জয় থেকে শুরু করে জ্ঞাতিশত্রুর বিনাশ কামনা পর্যন্ত সকল প্রকার প্রার্থনাই শক্তি পূজায় স্থান পায়। এক দিকে দেবচরিত্রের হিংস্রতা, অপর দিকে মানুষের ধর্মবিচারহীন ফলকামনা এই দুয়ের যোগ যে পূজায় আছে, তার চেয়ে বড়ো শক্তি পূজায় কথা কোনো বিশেষ শাস্ত্রে নিগূঢ় আছে কি না সেটা আমার আলোচ্য ছিল না। শক্তিপূজার যে অর্থ লৌকিক বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত সে অর্থকে অসংগত বলা যায় না, কারণ লোক প্রচলিক কাহিনী এবং রূপকচিহ্নে সেই অর্থই প্রবল এবং সভ্য ও বর্বর সকল দেশে সকল ভাবেই শক্তিপূজা চলছে। অন্যায় অসত্য সে পূজায় লজ্জিত নয়, লোভ তার লক্ষ্য এবং হিংসা তার পূজোপচার। এই লোভ মন্দ নয়, ভালোই, হিংস্রশক্তি মনুষ্যত্বের পক্ষে অত্যাবশ্যক এমন সকল তর্ক শক্তি পূজক য়ুরোপ স্পর্ধার সঙ্গে চলছে, য়ুরোপের ছাত্ররূপে আমাদের মধ্যেও চলছে-সে সম্বন্ধে আমার যা বলবার অন্যত্র বলেছি; এখানে এইটুকু বক্তব্য যে, সাধারণ লোকের মনে শক্তিপূজার সঙ্গে একটি উলঙ্গ নিদারুণতার ভাব, নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বলপূর্বক দূর্বলকে বলি দেবার ভাব সংগত হয়ে আছে- ‘বাতায়নিকের পত্রে’ আমি তারই উল্লেখ করেছি। কিন্তু তবুও এ কথা স্বীকার করা উচিত যে, কোনো ধর্ম সাধনার উচ্চ অর্থ যদি দেশের কোনো বিশেষ শাস্ত্র বা সাধকের মধ্যে কথিত বা জীবিত থাকে তবে তাকে সম্মান করা কর্তব্য। এমন কি ভূরিপরিমিত প্রচলিত ব্যবহারের চেয়েও তাকে বড়ো বলে জানা চাই। ধর্মকে পরিমানের দ্বারা বিচার না করে তার উৎকর্ষের দ্বারা বিচার করাই শ্রেয়।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, (কার্ত্তিক : ১৩২৮) : “কালান্তার” গ্রন্থে ‘সত্যের আহ্বান’ শিরোনামে লেখায় তু’লে আনেন ধর্মের সাথে বিশ্বাস এবং তার দৃঢ়তা। যে দৃঢ়তা শুধু ধর্মের প্রতি বিশ্বাস-ই নয় বরং, তার পারিপার্শ্বিকতার ব্যাপকতা, যে ব্যাপকতা শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেই নয়, বিশ্বাসের সাথে সমগ্র ভারতবর্ষও জড়িত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে এসে আবার বলেন : “সত্য আলোর মতো, তার শিখাটা জ্বলবা মাত্র দেখা যায় মায়া নেই। ভয় হচ্ছে মনের নাস্তিকতা, তাকে না এর দিকে থেকে নিকেশ করা যায় না, উপস্থিত মত তার একটা কারণ গেলেও রক্তবীজের মতো আর একটা কারণরূপে সে জন্ম নেয়। ধর্ম হচ্ছে সত্য, যে মনের আস্তিকতা, তার অল্পমাত্র আবির্ভাবে হ্যাঁ প্রকাণ্ড না’কে একেবারে মূলে গিয়ে অভিভূত করে। ভারতে ইংরেজের আবির্ভাব নামক ব্যাপারটি বহুরূপী; আজ সে ইংরেজের মূর্তিতে, কাল সে অন্য বিদেশীর মূর্তিতে এবং তার পরদিন সে নিজের দেশী লোকের মূর্তিতে নিদারুণ হয়ে দেখা দেবে। এই পরতন্ত্রতাকে ধনুর্বান হাতে বাইরে থেকে তাড়া করলে সে আপনার খোলস বদলাতে বদলাতে আমাদের হয়রান করে তুলবে। কিন্তু আমার দেশ আছে এইটি হল সত্য, এইটিকে পাওয়ার দ্বারা বাহিরের মায়া আপনি নিরস্ত হয়।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু ধর্মচিন্তা নিয়ে স্থির থাকেননি। হিন্দু এবং মুসলমানের সাথে তাদের সংমিশ্রণের চেষ্টায় নিমগ্ন থেকেছেন। যে সাধনা এবং কর্মে রবীন্দ্রনাথ নিয়োজিত ছিলেন জীবনের দীর্ঘ সময়। হিন্দুও মুসলমানের বিপরীত মুখী ভাবনা নিয়ে চিন্তায় থেকেছেন জীবন ব্যাপী। চেষ্টাও সাধনার দ্বারা এই প্রধান দু’টি জাতিকে নিয়ে আসতে চেয়েছেন একই সুতায়। ভাবনার জগতে তিনি থেকেছেন অবিচলও সুদৃঢ়।

অগ্রহায়ণ : ১৩৩০-“কালান্তর” গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘হিন্দু ও মুসলমান’-নিয়ে বলেন :
“খেলাফতের ঠেকো দেওয়া সন্ধিবন্ধনের পর আজকের দিনে হিন্দু মুসলমানের বিরোধ তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মূলে ভূল থাকলে কোনো উপায়েই স্থূল সংশোধন হতে পারে না। এ সব কথা শুনলে অধৈর্য হয়ে কেউ কেউ বলে উঠেন, আমাদের চারদিকে যে বিদেশী তৃতীয় পক্ষ শত্রুরূপে আছে সেই আমাদের মধ্যে ভেদ ঘটাচ্ছে, অতএব দোষ আমাদের নয়, দোষ তারই-ইতিপূর্বে আমরা হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি নির্বিরোধেই ছিলুম কিন্তু ইত্যাদি ইত্যাদি-শাস্ত্রে বলে, কলি শান ব্যাধি মানুষের ছিদ্র খোঁজে। পাপের ছিদ্র পেলেই তারা ভিতরে প্রবেশ করে, সর্বনাশের পালা আরম্ভ করে দেয়। বিপদটা বাইরের, আর পাপটা আমার, এই কারণে বিপদের প্রতি ক্রোধও পাপের প্রতি মমতা করাই হচ্ছে সকল বিপদের সেরা।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একই গ্রন্থে আবার বলেন :
“আমি পূর্বে অন্যত্র বলেছি, ধর্ম যাদের পৃথক করে তাদের মেলবার দরজায় ভিতর দিক থেকে আগল দেওয়া। কথাটা পরিষ্কার করে বলবার চেষ্টা করি। সকলেই বলে থাকে, ধর্ম শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে যা আমাদের ধারণ করে অর্থাৎ, আমাদের যে-সকল আশ্রয় ধ্রুব তারা হচ্ছে ধর্মের অধিকারভূক্ত। তাদের সম্বন্ধে তর্ক নেই। এই সকল আশ্রয়ের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। এদের সঙ্গে ব্যবহার যদি চঞ্চলতা করি, কথায় কথায় যদি মত বদল করতে থাকি, তা হলে বাঁচি নে।”

পূর্বেই আমাদের জাতি ভেদের প্রধান দু’টি ধর্মের প্রভাবের কথা উল্লেখ করেছি। হিন্দু ও মুসলমান-এ দু’টি গোষ্ঠীর মাঝে যে ভেদাভেদ রয়েছে যুগ থেকে যুগান্তরব্যাপী। যা চিন্তার জগতে রবীন্দ্রনাথ ধারণ করেছেন কাল থেকে কালান্তর পর্যন্ত। যে সমস্যা শুধু প্রধান দু’টি জাতি গোষ্ঠীরই নয়, বরং তা হ’য়ে ওঠে রবীন্দ্র মানসের চিন্তা ধারায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘কালান্তর’- গ্রন্থে হিন্দু-মুসলমান নিয়ে বলেন:“আমাদের আর একটি প্রধান সমস্যা হিন্দু-মুসলমান সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান এত দুঃসাধ্য তার কারণ দুই পক্ষই মুখ্যত আপন আপন ধর্মের দ্বারাই অচলভাবে আপনাদের সীমা নির্দেশ করেছে। সেই ধর্মই তাদের মানব বিশ্বকে সাদা কালো ছক কেটে দুই সুষ্পষ্ট ভাগে বিভক্ত করেছে- আত্ম ও পর। সংসারে সর্বত্রই আত্মপরের মধ্যে কিছু পরিমাণে স্বাভাবিক ভেদ আছে। সেই ভেদের পরিমাণটা অতিমাত্র হলেই, তাতে তার কল্যাণ হয়। বুশম্যান জাতীর লোক পরকে দেখবা মাত্র তাকে নির্বিশেষে বিষবান দিয়ে মারে। তার ফল হচ্ছে, পরের সঙ্গে সত্য মিলনে মানুষের যে মনুষ্যত্ব পরিষ্ফুট হয় বুশম্যানের তা হতে পারে নি, সে চূড়ান্ত বর্বরতার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে। এই ভেদের মাত্রা যে জাতির মধ্যে অন্তরের দিক থেকে যতই কমে এসেছে সেই জাতি ততই উচ্চ শ্রেণির মনুষ্যত্বে উর্ত্তীণ হতে পেরেছে। সে জাতি সকলের সঙ্গে যোগে চিন্তার কর্মের চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করতে পেরেছে।