সকালে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে
ভাবনার নীলিমায় শুভ্র জ্যোৎস্নাকে ছুঁয়ে নিস্তব্ধতা ভেঙে দিতাম;
তুমি হয়তো জান না; বিচ্ছেদে শাদা মেঘের কত গভীরতা-
জমা রয়েছে আমার বুকে শিশিরের জলে, ছুঁয়ে যাওয়া হিমে
ভাবনার বিস্ময়ে; হৃদয়ের গভীর গহ্বরে-প্রজ্জলিত স্লিগ্ধতা
প্রসারিত শেফালির বনে, মুগ্ধ আর অপূর্ব সৌন্দর্য নিস্তব্ধতার
দিকে-দিকে; জোৎস্নার হলুদ বনে আমার হারানো শূন্য বুকে;
তুমি আসলে; হেমন্তের হলুদ রঙে ভ’রে উ’ঠে নক্ষত্রবীথি
নির্ঝরের গভীরে, হৃদয়ের প্রোজ্জ্বলিত ভেঙে পড়া সংগীতে
দুপুরে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে
অলস দুপুরটা ওভাবে কাটতো না ঘাস আর সমুদ্রের ঢেউয়ে;
তুমি হয়তো জান না; বিস্ময়কর শীতল সম্পর্ক মূছে যায়
মধুমতীর ঢেউয়ে আলো আর অন্ধকারের মসৃণ মেঘে-মেঘে;
তুমি কাছে থাকলে আমার কোনও নীলসন্ধ্যা জমে না
চোখের কোণে; ছুঁয়ে যাওয়া শরীরে, সৌন্দর্যের আঙুলে;
বিকালে আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে
‘গীতবিতান’-এর উপর পড়ে থাকতে পারতাম না সন্ধ্যার অন্ধকারে,
নক্ষত্রের নীল আলোয় আমিও হারিয়ে যাই নিশীথের তীব্র হাওয়ায়;
চন্দনের সুঘ্রান ব’য়ে যায় নিস্তব্ধতার উজ্জ্বল উচ্ছ্বাসে নিবিড় সুরে,
তুমি বলতো, ‘গীতবিতান’-এর কোন পাতায় আমাদের অঙ্গুলিগুলো
পেয়েছিল শ্রাবণের রুপালী ধারা শিশিরের শব্দহীন জ্যোতির্ময় নীলে;
সন্ধ্যায় আমার এখানে তুমি আসোনি; আসতে যদি তাহ’লে
দু’জনে বসে কফির পেয়ালায় মুখ রাখতাম আর শব্দমালায় ভরিয়ে
তুলতাম বিস্ময়কর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক; অন্ধকারে অন্তরালে হৃদয়ের
নিরন্তর নিঃশব্দে কোমল ঠোঁটের কোণে; যা মিশে যেত মেঘমালায়,
আশ্বিনের বাতাসে, লাল মেঘে নিস্তব্ধ জ্যোৎস্নার ছায়ায়, শিশিরের পরে
রাতে আমার এখানে তো তুমি আসো-ই নি, আসতে যদি তাহ’লে
হা-হা কার ক'রে উঠত না রুপালি জ্যোৎস্না একাকী মেঘের বুকে;
শতাব্দীর নিস্তব্ধতার শিশিরভেজা ফাল্গুন রাতের ছুঁয়ে যাওয়া আঁধারে।