বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪), তার অন্যান্য সকল কাব্য থেকে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ হ’য়ে দেখা দেয় মরচে পড়া পেরেকের গান (১৯৬৬)- কাব্যগ্রন্থটি। কাব্যটি যখন প্রকাশ পায়, বুদ্ধদেব বসু অতিক্রম করেছেন পঞ্চাশ। ব্যক্তিত্ব- ভাব-গাম্ভীর্য ও অন্যান্য দিকে অর্জন করেছেন নানা অভিজ্ঞতা। তার রচিত অন্যান্য কাব্য থেকে স্পষ্ট চিহ্ন দেখতে পাই এ-কাব্যতে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের, নিরন্তর কাব্য সাধনায় ১৯৬৬-তে, ২৬টি কবিতা নিয়ে প্রকাশ পায় এ-গ্রন্থটি। এ-কাব্যর, কবিতাগুলোর দিকে আমরা যদি একটু দৃষ্টি দেই, দেখতে পাব অনেক বেশী স্পষ্ট, অন্য অনেক কাব্যের কবিতা থেকে। এ-সকল কবিতার; শরীর জুড়ে গেঁথে থাকে মসৃণতার ছাপ। অনেক বেশী মৌলিক হ’য়ে ফু’টে উ’ঠে এ-কাব্যের কবিতাগুলো। সেই সাথে আরও একটি দিক স্পষ্ট হ’য়ে দেখা যাচ্ছে, দিন-দিন তার কবিতা থেকে যেন ঝ’রে পড়ছে মৌলিক কবিতার সংখ্যা। যে আঁধার আলোর অধিক (১৯৫৮)-এর পরবর্তী সময়ে; তেমন ভাবে দেখা দিচ্ছে না মৌলিক কবিতা। সেই সব কবিতার সৌন্দর্য যেন দূরে সরে যাচ্ছে, কবিতার পাতা থেকে। কিন্তু একটি কথা না বললেই নয় যে, ১৯৫৮-এর পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, তিনি অবস্থান করছিলেন দেশ থেকে বিদেশে। সেই সময় তিনি কী দূরে ছিলেন বাঙলা কবিতা থেকে ? না-কোনো কবিতাই ধরা দিচ্ছিল না তার মননে। সেটা অনেকটাই আড়ালেই থেকে যায় আমাদের কাছে। বিদেশে গিয়ে খুব বেশী থেমে থাকেননি তিনি ! নিজের মতো ক’রে রচনা করেছেন কবিতা। যে কবিতাগুলো আমরা পাব মরচে পড়া পেরেকের গান- এ। ১৯৬২-১৯৬৬, এই সময়ের মধ্যেই তিনি প্রস্তুত করেন এ-কাব্যটি। কিন্তু এত দীর্ঘ সময়ে কেন দেখা দেয় এত কম সংখ্যক কবিতা ? তার উত্তর কী আমাদের জানা আছে ! সময়ের সাথে যদি লক্ষ্য করি, তাহ’লে দেখতে পাব কবিতার সংখ্যা খুব বেশী নয়। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৬, এই সময়ের মধ্যে বুদ্ধদেব সবচেয়ে বেশী সংখ্যক কবিতা লিখেছেন ১৯৬২-তে। এ-বছরে লেখা কবিতার সংখ্যা ৯। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৬৩-তে লেখেন একটি কবিতা। তার পরের বছরগুলোতে, প্রতিবছর ৫টি ক’রে, তিন বছরে লিখে উঠেন ১৫টি কবিতা। একটি বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হয় যে, এই গ্রন্থের বেশীরভাগ কবিতাই রচনা করা হয় বিদেশে অবস্থানকালে। কবিতা ও আমার জীবন –প্রবন্ধে এই সময়ের কথা বলতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু বলেন- ‘এমন সময় মাঝে-মাঝে আসেই যখন কবিতা লেখার জন্য আঙুল যেন নিশপিশ করে অথচ দিনের কোনো বলার কথা জ’মে ওঠেনি। এ রকম সময়ে একটি মাত্র সন্নিকট বিকল্প হাতে আছে আমাদেরঃ তা হ’লো অন্যের কবিতার অনুবাদ রচনা। এই বিকল্পটি আমি অনেকবার ব্যবহার করেছি- ‘যে আঁধার আলোর অধিক’ লেখার সময় থেকে বলা যায় প্রায় ধারাবাহিকভাবে এই সেদিন পর্যন্ত। আমার সমগ্র কাব্যরচনার মধ্যে অনুবাদগুলিকে আমি নগণ্য ব’লে ভাবি না; এরাও আমার সচেতন প্রয়াসের ফলাফল এবং কিছুটা দৈবেরও দান।’ যে আঁধার আলোর অধিক ও মরচে পড়া পেরেকের গানে’র মধ্যেকার বছরগুলিতে, অর্থাৎ বলা যেতে পারে, মোটামুটি আটবছরে, বুদ্ধদেব বসুর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা একুশ। এর মধ্যে ছোটগল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমনকথা ইত্যাদি বাদ দিলে, উপন্যাসের সংখ্যা দুই, অনেক পরে প্রকাশিত বিপন্ন বিস্ময়’কে নিলে সংখ্যা দাঁড়ায় তিন। বাকি সময়টা শুধুই সংস্কৃতি, ফরাসি, মার্কিনী, রুশ এবং জর্মান কবিতার অনুবাদ করেছেন। বুদ্ধদেব বসু অনুবাদ একটু-একটু ক’রে শুরু করেছিলেন সেই ১৯৪৭ সাল থেকেই। কালিদাসের মেঘদূত (১৯৫৭), অনুবাদ করতে গিয়ে সেই কাজই কবিকে ধরে রাখলো। তার পর থেকে ক্রমান্বয়ে অনুবাদের পর অনুবাদ ক’রে গিয়েছেন বুদ্ধদেব বসু। পাস্টেরনাক, বোদলেয়ার এবং আরও অনেক কবির, যা আমাদের অজানা নয়। বুদ্ধদেব বসু যদিও রিলকের অনুবাদ বেঁছে নিয়েছেন আরও অনেক পরে। এই সব অনুবাদ করতে-করতে, বুদ্ধদেব তাদের বিষয়ে দীর্ঘ যে সব প্রবন্ধ লিখেছেন, পরে তার নিজের লেখা মৌলিক কবিতা অনুধাবনের জন্যও সেই প্রবন্ধগুলি কবির মনোযোগ দাবী করে। আমরা যখন মরচে পড়া পেরেকের গান –এ, প্রবেশ করি, প্রথমেই দেখতে রোদনরূপসী শিরোনামের কবিতাটি। অসম্ভব সৌন্দর্যমাখা একটি কবিতা এটি। যার সৌন্দর্য হৃদয়ে গেঁথে থাকে দীর্ঘ সময় ধ’রে। কবিতাটি একটু পড়া যাক-
‘কে তুমি, সুন্দরী, যার বিন্দু- বিন্দু অশ্রু ঝ’রে ভেসে যায়
পদ্ম হয়ে নদীর সচ্ছল স্রোতে অবিরল ?
কোন প্লুত নীলিমায় লিপ্ত তুমি ? কোন পুণ্যজল
তোমার লাবণ্যসার আপনার তরঙ্গে মেশায় ?
রোদনরূপসী, তুমি কেন কাঁদো ? অশ্রু কেন পদ্ম হ’য়ে ফোটে ?
কে তার হিরন্ময় অভিযান দিগন্তেও হয়না বিলীন ?
কোন মন্ত্রে এই দিন অফুরান ? ...মহাকবি দেননি উত্তর,
শুধুই ব’লে গিয়েছেন দেবতারা তোমার অধীন।’
কবিতাটির শেষের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, রচনাকাল হিশেবে সময় পাওয়া যায় মার্চ, ১৯৬৪। যদিও প্রথমেই আমরা বলেছি, এ-গ্রন্থের কবিতাগুলো লেখা হয় ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে। কিন্তু শুরুতেই আমরা দেখতে পাই ১৯৬৪ সালে রচিত একটি কবিতা। মহাভারতে’র আদিপর্বের ঘটনা থেকে তিনি রচনা করেন এ- কবিতাটি। প্রান্তবাসী প্রাণ শিরোনামের কবিতাটিও সেই ১৯৬৪ সালে রচিত। বেশ কিছুক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করতে হয় ১৯৬২ সালের রচনা কবিতাগুলোর জন্য। ‘অন্যান্য বীজাণু’ , ‘ইকারুস’ , ‘কেবল তোমাকে নিয়ে’ ইত্যাদি কবিতাগুলো ১৯৬৪ সালেই রচিত। ‘ভিনদেশী’, ‘অন্য ঋণ’, ‘প্রকোষ্ঠ’ ইত্যাদি কবিতাগুলো ১৯৬২ সালে রচিত। কাব্যের রচনাকালের কবিতা হিশেব মতে, এই কবিতাগুলো আমরা পেতে পারতাম প্রথম দিকেই। ‘লোকটা’ শিরোনামের কবিতার রচনাকাল পাই ১৯৬৩ সাল। এই বছরের রচনাকাল হিশেবে পাই মাত্র একটি কবিতা। আর কোনো কবিতাই আমরা দেখতে পাই না ১৯৬৩ সালে। তাহ’লে কী আমরা ধরে নিতে পারি, আর কোনো কবিতা তিনি রচনা করেনি এই বছরে ! কবি েহ্যল্ডার্লিনকে পাওয়া যায় চমৎকার একটি কবিতায়। যে কবিতাটির শিরোনাম আমরা পাই ‘েহ্যল্ডার্লিন’। কবিতাটি প্রথম দিকেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। জার্মান এই কবির প্রতি, বুদ্ধদেব বসুর রয়েছে গভীর এক ভালোবাসা। পরবর্তী সময়ে, আমরা আরও অনেক অনুবাদ কবিতা পাব তার কাছ থেকে। বুদ্ধদেব বসু-এ কবিতাটি শুরু করেন এভাবে- ‘সমাপ্ত চাঁদের মতো, স্থির/ অথচ, স্বর্গীয়/ গতির দ্যোতনা যাকে ধীরে আনে দেয়/ আমাদের জানালায়, ঝাউবনে, পার্কের বেঞ্চিতে/ এবং সুদুর/ যারা কাঁদে, ঝগড়া করে, ক্লান্ত হয়,/ কুঁজো পিঠে সস্তার বাজারে ফেরে,/ কিংবা যারা প্রাসাদের/ সচিত্র গলিতে জমে ষড়যন্ত্রে,/ মন্দিরের উদার অলিন্দে মাতে ষড়যন্ত্রে-তাদের করুণা, ঘৃণা, প্রলোভনে অবিচল- দূর/ দূরতর নীলিমায় যেন ইতিহাস বেলেল্লা মিছিল ছাড়া কিছু নয়।’ মরচে পড়া পেরেকের গান -কাব্যগ্রন্থটির দীর্ঘ কবিতা হিশেবে আমরা পাই ‘মোহমুদগর’ কবিতাটি। দীর্ঘ হ’য়ে কবিতাটি যে তার সৌন্দর্য নষ্ট করেছে, তা কিন্তু বলা যাবে না। সেই কবিতার অভ্যন্তরে যেন লুকিয়ে রয়েছে এক নীরব সৌন্দর্য। কবিতার নাম যে কবির ইচ্ছার উপর কতটা নির্ভর করে, তা আমরা দেখতে পাই ‘মন ও প্রাণঃ এক অন্তহীন বিতর্কের অংশ’ শিরোনামের কবিতাটির প্রতি দৃষ্টি দিলে। যেখানে কবি বেঁছে নেন, তার নিজের খুশিমত একটি নাম, যা কবিতার সাথে মিশে যায় যথার্থরূপে।
১৯৬৫-এর শেষের দিকে বুদ্ধদেব বসু লেখেন মৌলিনাথের স্বপ্ন শিরোনামের কবিতাটি। বেশ বৃহদায়কার কবিতা হিশেবে গণ্য হয় এটি। সৌন্দর্যময়তার প্রাণ ছুঁয়ে যায় কবিতাটি। কবিতাটি যেন মন কেড়ে নেয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কবিতাটি একটু পড়া যাক-
‘কে তুমি আমাকে ছুঁয়ে গেলে আজ স্বপ্নে
পায়রা পাখায় কোঁকড়া বাতাসে হালকা,
একা- শয্যায় শীতের নিথরে দ্বিতীয় প্রাণ-
কে তুমি আমার লিবিডো সজল স্বপ্ন।’
অনেকটা লুকিয়ে থাকার মতো সেও যেন লুকিয়ে রয়েছে কবিতার আড়ালে। তাকে নাম না ধরে কবি, পঙত্তির পর পঙত্তি জুড়ে দেন তার নামের সাথে। আমরা মনে করে নিই, সে যেন লুকিয়ে থাকে কোনো এক কঙ্কাবতীর মাঝে। যে সম্পূর্ণ হৃদয় জুড়ে বসবাস করে কবির গভীর হৃদয়ের অভ্যন্তরে। মরত্ব-সঙ্গীত কবিতাটি লিখতে বুদ্ধদেব বসু সময় নেন দশ বছরেরও বেশী সময়। কবি নিজেই প্রকাশ করেন এটি তিনি শুরু করেন ১৯৫৪-তে, দীর্ঘ সময় অতিক্রম করার তা সম্পূর্ণ হয় ১৯৬৫ সালে। অনেকটা আশ্চার্য হ’তে হয় আমাকে। তিনি কী ভুলে গিয়েছিলেন কবিতাটির কথা ? যে কবিতাটি একদা তিনি শুরু করেছিলেন, কিন্তু সমাপ্ত করেননি। একটি মৃত্যু কবিতায় মৃত্যুর চিহ্ন একে দিয়েছেন কবিতাটির শরীর জুড়ে। যে কবিতায় বুদ্ধদেব বসু, আমাদের মনে করিয়ে দেন তরুণ কবি শেলির কথা। ভাবনার সাথে স্বপ্নের এক অভূতপূর্ব সমন্বয় যেন খেলে যায় কবিতাটিতে।
মরচে পড়া পেরেকের গান কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবিতা ‘মরচে পড়া পেরেকের গান কবিতা’টি। অন্য অনেক কবিতা থেকে উৎকৃষ্টতর হ’য়ে দেখা দেয় কবিতাটি। কোনো এক কাহিনিকে অবলম্বন ক’রে রচিত হয় কবিতাটি। যে কাহিনি বা ঘটনা কবিতাটিকে প্রসার ঘটাতে ভূমিকা রাখে। ১৯৬৫-এর শেষের দিকে; বুদ্ধদেব বসু রচনা করেন কবিতাটি। রচনাকালের সময় হিশেব করলেও, তা অতিক্রম ক’রে ছয় দশকেরও বেশী সময়। এত সময় অতিক্রম করলেও একটুকুও ম্লান হয়নি কবিতাটি। যেন ঠিক সেই পূর্বের ন্যায় জীবন্ত হ’য়ে রয়েছে। তার সৌন্দর্য যেন তাকেই ধারণ করে টিকে আছে। কবিতাটি একটু পড়া যাক-
‘প’ড়ে ছিলো মরচে- পড়া পেরেক, পচা কাঠের টুকরো থেকে বেড়িয়ে।
সেদিন আশ্বিনের সকাল, এক বুড়ি ঘুটে দিচ্ছে দেয়ালে,
বাতাসে দুলছে লাল পদ্মের কুঁড়ি- আমাকে ইশারা ক’রে ডাকলো,
সেই মরচে পড়া পেরেক, পচা কাঠের টুকরো থেকে বেড়িয়ে।’
তপস্বী ও তরঙ্গিণী থেকে তিনটি কবিতা এখানেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু একটি কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয় এই কবিতাটির পূর্বনাম ছিল ‘গায়ের মেয়েরা’; যে নামটি কবি নিজেই পরিবর্তন করেন। আমরা ভুলে যাই সেই পূর্বের নামটি। কেউ আর মনে করে নিতে পারে না সেই নামটি। নতুন নামটি ধারণ ক’রে সে বেড়ে উঠে অন্য অনেক নতুন কবিতার মতো। টিকে থাকা নামের সাথে সেও দীর্ঘজীবী হ’য়ে উঠে। ‘মরচে পড়া পেরেকের গান’ কাব্যের শেষ কবিতা বৃদ্ধ রাজা। বুদ্ধদেব বসু, এ-কবিতাটি রচনা করেন ১৯৫৩ সালে। আর সেই কবিতাটির পরিমার্জন করেন ১৯৬৫ সালে। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় পার করে কবিতাটি। কবি আবার ফিরে আসেন সেই কবিতার কাছে; নিজের ভালোবাসার দায়িত্ব নিয়ে। সেই কবিতার ছায়াও মিশে থাকে কবির মননে। আবার দেখা দেয় একটি পরিপূর্ণ কবিতায়। যে কবিতাটির নাম হ’য়ে উঠে বৃদ্ধ রাজা। বৃদ্ধ রাজা কবিতাটি, বুদ্ধদেব বসু রচনা করেন ‘রাইনের মারিয়া রিল’কে অবলম্বন ক’রে। যা কবি, কবিতাটির শুরুতেই আমাদের কাছে বলে নেন। এক প্রকার ঘোষণা দিয়েই যেন তিনি শুরু করেন কবিতা রচনা। এই রকম অবলম্বন করে কবিতা রচনা, এই প্রথম তা কিন্তু বলা যাবে না। বুদ্ধদেব বসু; এ-রকম কবিতা অনেক রচনা করেছেন। সেই সব কবিতা আমাদের ভাবনার চিত্তে অনেকটা গেঁথে থাকে দৃঢ়ভাবে। কবিতাটির কিছু অংশ পড়া যাক-
‘রাজা ভাবলেন সারাদিন ব’সে ব’সে-
কী শূন্য তাঁর কীত্তির দিন, কত ইচ্ছা অনুভুত হ’লো না,
প্রিয় শিকারী কুকুরটিও
অনেক আদর কুড়িয়ে কুড়িয়ে হঠাৎ কোথায় চ’লে গেলো;
কী ম্লাণ দেয়ালে ঝোলানো বল্মমগুলো, বরাহের মুণ্ড, হরিণের চামড়া।’
এক প্রকার গল্পবলার ধরনের মধ্যে দিয়ে যেন এগিয়ে যায় কবিতাটি। যতক্ষণ পড়তে থাকি; মনে হয় একপ্রকার ভাবনার ভিতর যেন আমরা ডুবে আছি। যেখানে এই ভাবনার বোধ এগোতে থাকে, গভীর থেকে আরও অনেক গভীরে। বুদ্ধদেব বসু, তাঁর পরিপূর্ণ বয়সে রচনা করেন এ-গ্রন্থটি। তাই, অন্য অনেক কাব্য থেকে পৃথক হ’য়ে আলো ছড়াতে থাকে। যা শুধুমাত্র আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয় না, বরং তার সৌন্দর্য যেন আমাদের চোখের কোণেও অনেকটা লেগে থাকে। এ-যেন অনেকটা আলো দিয়ে আলো প্রোজ্বলনের দিকে প্রবাহিত হওয়া।