স্নিগ্ধ আর শান্ত নীরবতা যেন আমাকে হিম ক’রে তুলছে,
আমি কি হারিয়ে যাবো আমার মধ্যে থেকে !
ভাবনার সাথে বেড়ে যাচ্ছে দীর্ঘ এক ব্যবধান, বিচ্ছুরিত আলোর
মধ্যেও আমি দেখতে পাই স্তব্ধ এক গভীর নীরবতা,
সব কিছু যেন নিস্তব্ধ হ’য়ে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমার চতুর্দিকে;
বিস্ময়ে-বিমুগ্ধ তাকিয়ে থাকি গাঢ় পল্লবের দিকে,
বিহঙ্গের সুর যেখান থেকে বেজে উ’ঠে কোমল হ’য়ে,
অরণ্যের মাঝে হারিয়ে ফেলি নিজেকে; আবার খুঁজে
ফিরি সকাল-সন্ধ্যায় বেদনার মধ্যে ক্ষণে-ক্ষণে;
আমি কী ভুলে গেছি আমার পিতা বা পিতামহের নাম,
যাঁদের প্রবাহিত ধারা স্রোতের মতো বেঁয়ে চলে আমার রক্তে;
আমার সন্তান কী মনে রাখবে আমার নাম !
কয়েক দশক গত হওয়ার পর তার অন্তরের মাঝে ?
গভীর স্নেহ আর শিশিরের হিমেল হাওয়ায় যাদের ভালোবেসেছি অনেক বেশি;
আমার কী মনে থাকবে রবীন্দ্রনাথের কোনো কবিতার পঙত্তি;
যা আমি গলায় বেঁধেছি সুরের মতো বা
জীবনানন্দের ‘গভীর অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠলাম আবার’;
পড়েছি অনেকবার, জানি, কিছুই মনে থাকবে না আমার;
ভুলে যাবো! স্তব্ধ চিত্তে যা নিয়েছি নিজের ক’রে আপন মনে
হাসনাহেনা-কামিনী আর বকুলের সুঘ্রাণ নীরব ব্যথায় গেঁথে থাকে;
কোনো এক গভীর নীরবতা আমাকে পৌঁছে দিবে চিরন্তন সৌন্দর্যের মাঝে;
যেখানে নিজের ছায়াও হারিয়ে যাবে রাত্রির গাঢ় অন্ধকারে,
পূর্ণিমার ভরা জ্যোৎস্না আর বৃষ্টির শব্দে কেঁপে উঠবে না আমার দু’চোখ;
সকল সৌন্দর্য ম্লান হ’য়ে নিভে যাবে মুহূর্তে, স্পর্শের স্বাদ মুছে যাবে মুহূর্তে
আমার চতুর্দিকে ছড়িয়ে প’ড়ে এক গভীর নীরবতা রাতভর এক দুঃস্বপ্নের মতো
আদিম সঙ্গীত রচিত হয় কণ্ঠে-কণ্ঠে বিমূর্ত নিঃশব্দে;
সবুজ ঘাস গাঢ় হতে থাকে মৃত্তিকায় নরম কুয়াশা আর শিশিরের ছোঁয়ায়।