অরুণিমা সেন_
_____________
অরুণ আলোয় দেখা অরুণিমা সেন
চোখের ভেতর; যেন সাত'শত পাখির নীড়ে
তাহার হঠাৎ গিয়াছে উবে -সাদা ঠ্যাঙ।
গাঙচিল,দুরের বসতি যাহার -হলুদ পেখম
মেলে কতদিন ডাকিয়াছে তারে।
কত লোকে ডাকিয়াছে তারে-নিখিল
অন্ধকারে নিমেষের তরে কভু দিয়াছে সে দেখা।
বেলা অবেলায় পথে প্রান্তরে;
সবুজ ঘাস-মেঠো পথ-ধানের আলোড়নে
ধানসিঁড়িঁটির তীরে।
হাজার বছর প'রে একদিন-
হয়তো ক্লান্ত ভোরের আলো ফুরিয়েছে দেখে;
সদ্য আদিম জাতক হাসিতেছে কোলে তার;
চাঁদের আহবানে।
কালো মেঘে আসিয়াছে ঢেকে
দিগন্তের ওপার;তবু তার ধ্যান,শিশুটিকে
নিয়ে যাবে অরুণিমা সেন।
_________________________________
কস্তুরীর চাঁদ_
_______________________________
ম্লান হেসে কারা যেন যায়
রোদের আলেয়ায় - অপেক্ষায় থাকি তার।
যদি দেখা হয় ঘনতরুচ্ছায়;
ক্ষণিক জিড়োবার ছুঁতোয়-না হয়
জেনে নেব নাম!
ঘন শ্বাস ফেলি,পিপাসায় আড়ষ্ঠ জিভ;
ভেংচি কেটে নিজের অজান্তেই বলি-
এতোক্ষণ ফেরার কথা
-গিয়েছিলেন কোথাও?
এমন তো নয় - পথ হারিয়ে...
না না হয়তো কোন এক আত্মীয়ের বাড়ি।
কস্তুরী চাঁদের মতন দ্বিধা খেলে মনে!
সন্ধ্যা নিয়ে নামে গাঙচিল,
শেয়ালেরা হাউ হাউ করে উঠে -দুরের উপত্যকায়;
সদ্য উঠা কস্তুুরীর নীল চাঁদ,
তারি স্নিগ্ধ আভায় -জনেক রমনী পড়েছে
নীল শাড়ি।কলহস্য মুখর-
ঝঙ্কার তুলে অরন্যের কেয়ায়;
পাখির কূজন অবেলায় সাড়-শব্দহীন।
যে যার মতো দাড়িয়ে থাকে যেথায় ছিলেন
অকস্মাৎ মুখ তুলে অরুণিমা সেন।
________________________________________
চোখ খোলো_
________________________________________________
ঘুমাতেছ কেমন নিবিড় চোখ খোলো
ঘুমাতেছ দেখে শান্তি তবু;চোখ খোলো
তারপরে অনেক্ষণ শব্দহীন-তক্ষকের মতন
হিজলের ছায়া নামে পানবনে।
ঐখানে একঝাঁক প্রজাপতি আরোগ্য পেয়েছে
দু'দিন হলো; চোখ খোলো,চোখ খোলো।_
_________________________________
খড়কুটো_
____________________________________
বুনো হাঁস পাখা মেলে অতিদুর পথ
তবু তার ফিরিবার কথা ছিল আজ
নিশিন্দার ছায়াতলে অঘোর ঘুমাতেছে
নিঝুম বালক;ঝরে'পরে ডাহুকের পাখ।
উত্তরী তারস্বরে আজি শুনি কার নাদ
ফুল,নারী,নদী শত উপমা অবাধ!
কে চাহে গগন ভেদিয়া ওঠে পৃথীবির ধ্বনি;
আকাশের বুক ফেঁরে কত নক্ষত্র যেতেছে ঝরে-
চারি দিকে হা-হা-কার শুনি।
খড়কুটো,সবুজ -শস্যর ঘরবাড়ি, চাঁদ-চম্পা
-আলপনা নগরী; কে কবে বলেছিল,
সব লীন হয়ে যাবে একদিন।
গিরিপথে আগ্নেয়গিরি ধুকে ধুকে যেতেছে ধসে-
আদমের পন্ড উল্লাসে;
বিশাখার আয়োজনে ধূসর পান্ডুলিপি
নক্ষত্রের মতো গেছে খ'সে।_
______________________________________
গহন স্বাক্ষর_
______________________________________
অরুণিমা তব আজি হতেছ রাগীনি
দয়ার'দুয়ারে দাড়ায়েছ দে'শালাই জ্বালি।
সায়াহ্নের মুখখানি ম্লান হয়ে র'বে
নীল কস্তুরী চাঁদের আভা -যখন ফুরবে;
সেইদিন দিকে দিকে নক্ষত্রের আহবান
গাঙচিল র'বে চেয়ে বিশাখার ডালে -তারপরে
ধুপে ধুপে নিভে যাবে পৃথীবির সব আলো।
ধূসর জগতের নীলিমায় তুমি আর আমি
বহু দিন প'রে -যুগের বারতা লয়ে;
এক - দুই - তিন তুমি খেলিতেছ কড়ি,
পৃথীবির বয়সি এক বিশাল বৃক্ষ যেন-
ছড়াতেছ ফুল বসে স্নিগ্ধ বাতায়নে;
শীতল হাওয়া বয়ে যাবে -ধানসিড়িঁ নদী।
আমাদের দেখা হবে?হয়তো হবে না আর-
কাব্য জুরে গহন স্বাক্ষর হয়ে র'বে অরুণিমা তুমি।
____________________________________
ধান কাটার দিন_
_________________________________
কালো মেঘ দেখে দৌড়লে তুমি
ওরা কেমন দাড়িয়ে আছ দেখো;
আকাশটা ভেঙ্গে যদি মাথায় প'রে
ওরা নড়বে - না - এক -চুলো।
জানো কি,ওরা নেশায়
আছে বুদ হয়ে -না জানি - এ ক্ষেতে
কত ঘর্ম পড়েছে চুঁয়ে।
আদিম তুমি দেখেছ কি কভু;
হতে মাংসের ক্ষয়,
তিলে তিলে গড়া স্বপ্নের কাছে
অকস্মাৎ পরাজয়।
তবু তো ওরা মাটির কাছে
মানে নি কখনো হার,
কৃপণের মতো ধূলিকণা হতে
জুগিয়েছে আহার।
অপেক্ষায় থাকা চোখ লেগে গেছে
তবু অহরাতি ভয় ভয়,
উড়ুক উড়ুক ডানা ঝাপটে চিল
নেমে যাবে দুর্মতি ঝড়;
খড়কুটো পেতে আজ ঘুমবে ওরা
এই মাঠ - হিম - জল - হাওয়ার ভিতর।
___________________________________________
কুমড়ো লতা_
____________________________________________
কুমড়ো লতা উৎরায়ে বিশাখার সাড়ি
হলুদ পেড়েঁ পরিয়াছ শাড়ী।
কবেকার - অরুণিমা সেনের মতন; দেহে
মাংসের তুফান।মুখশ্রী - শ্বাশত রাত্রির; গর্ভ - যোনিমুখ হতে ছিনিয়া আনে আবাল যুবক।
অরব অন্ধকারে বাতাসে শাঁই শাই ধ্বনি;
শুনি আর্তনাদ - হা - হা - কার।
চিৎপাত শুয়ে থাকি হাজার বছর;হিম কুয়াসায়।
যে রাতে বাজে মৃত্যুর বাদন
হায় হায় সহস্র জনতার মুখে মুখে;কঠিন
চোখ হীরার মতন। -সেই রাতে - উৎরায়ে
বিশাখার সারি; হলুদ পেড়েঁ পরিয়াছ শাড়ী,
কবেকার অরুণিমা সেনের মতন।
___________________________________________