আমিই সেই কাপুরষ, যে প্রতিদিনই একবার মরে যাই।
আমি নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখি অধিকারের মিছিল,
সমস্বরে বঞ্চিত মানুষের বিক্ষুব্ধ স্লোগান।
ওরা চিৎকার করে বলে, মানি না, মানব না।
খুব ইচ্ছে হয় আমিও ওদের পেছনে দাঁড়াই দু-একবার,
ততটাই পেছনে, কোন বিশৃঙ্খলা দেখলেই
যেখান থেকে নিরাপদে এক দৌড়ে ঘরে ফেরা যায়।
আমি শেষমেষ সবকিছু মেনে নিই, আমাকে মানতেই হয়।
মহামতি শেক্সপিয়ার আমাকেই দেখিয়ে বলে,
সাহসীরা একবারই মরে আর ভীরুরা মরে বারবার।
আমি সেই ভীরু কাপুরষ, যে নিত্য করি মৃত্যুর কারবার।
আমি শেষ রাতের স্বপ্নে, রাজার সিংহাসনে ধরিয়ে দেই আগুন,
ভোর না হতেই এক দৌড়ে ছুটে যায় মহা-রাজার পায়ের কাছে।
দুপায়ে মাড়িয়ে দাম দিয়ে কেনা বাহারী গণতন্ত্রের সিঁড়ি,
আমি পরম আনন্দে টিপে যায় মহা রাজার পা, থলথলে শরীর।
আমার চোখের সামনে রোজ ডুবে যায় স্বাধীনতার সূর্য,
ক্লান্ত সন্ধ্যায় রাজার উচ্ছিষ্ট নিয়ে আমি রোজ ফিরে আসি ঘরে,
আমি সেই কাপুরষ, রাজাদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে প্রতিদিন যায় মরে।
আমার একান্ত ব্যক্তিগত নারী অন্যের অধিকারে গিয়ে,
আমাকে রোজ এসে শুনিয়ে যায় তার সামর্থ্যবান পুরুষটির গল্প।
আমার বধীর কানে গরম শীশার মত প্রবেশ করে অন্য পুরুষের বীরগাঁথা।
তবুও আমি হাসিমুখে চেয়ে দেখি একটা আদিম তৃপ্ত শরীর,
সবটুকু একান্ত নিজের মতো করে পেয়ে বেঁচে থাকে প্রতিদিন।
যার শিরা-উপশিরায় চঞ্চল রক্ত, অথচ জোড়া চোখ শান্ত কবরস্থান,
আমি ঐ চোখে একটা মৃত কবির কফিনে মোড়ানো লাশ দেখি,
যার শীতল দুটো চোখ তাকিয়ে দেখছে আমারই পরাজিত মুখ।
আমিই সেই কাপুরষ, যে প্রতিদিন মৃত্যুর কাছে পেতে দেই বুক।