একটি সাধারণ বিরোধ অসাধারণ পরিসমাপ্তির পথে
যার জন্যে রাস্তার মধ্যখানে প্রণয়ের ছায়া আর বিরহের রৌদ্র মেখে
মুখোমুখি আমরা দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেমিক।

এই প্রশান্ত শহরে, যার অন্যপ্রান্তে সাদা মেঘ এবং সবুজ পাখিরা উড়ে,
যদিও আমাদের কোমরের হোলস্টারে ঝুলছে বাদামি ঘৃণা
পিচ গলে রাস্তায় টপ টপ পড়ছে ক্রোধ
ওপাশে বন্ধ ঘড়ির নিচে বিরাট অক্ষরে লেখা 'ডু অর ডাই', অর্থাৎ
বিজয়ীর গলায় বরমাল্য––কোমল কণ্ঠে বুঝিয়ে বলেছে আমাদের প্রেমিকা
যার দোতলা বাড়ির সামনে রাস্তার মঞ্চে এই দৃষ্টিনন্দন চিত্রায়ণ:
একটি প্রাচীন শহরের ধূসর ধুলায় মুখোমুখি দুই যুবক
এবং সংলগ্ন দালানের ছাদে তাদের আরাধ্য নারী নীল রুমাল হাতে দাঁড়ানো,
যা সে নিচে ছুঁড়ে দেয়া মাত্র অন্ততপক্ষে একজন খুন হয়ে যাবে।

অবশ্যই এ রাশান রুলেট নয়––
আমাদের প্রত্যেকের ম্যাগাজিনে ছয়টি করে গুলি সযত্নে ভরে দিয়েছে প্রেমিকা,
যেমন যত্নে সে একসঙ্গে ভালোবেসেছিলো দুইজনকেই
অতঃপর এইখানে ওষ্ঠচাপা ক্রোধ আর নিখাদ ঘৃণার পসরা সাজিয়ে
আমরা দুই প্রেমিক, এবং স্বপ্নিল চোখে চেয়ে আমাদের বিশ্বস্ত প্রেমিকা;
সাধারণ নাটকের একটি অসাধারণ ক্লাইম্যাক্স, যাকে সম্পূর্ণ এবং
আইনসিদ্ধ করতেই কি না সদর দরজায় 'ফেয়ার প্লে' লেখা হলুদ ব্যানার
ঝুলিয়ে দিয়েছে কেউ––অনেকটা বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো,
যদিও সোনালি কাপের পরিবর্তে এক্ষেত্রে মিলবে অর্ধেক রাজত্ব,
এবং সম্ভবত অর্ধেক রাজকন্যা।

নিদেনপক্ষে একটি মৃত্যু চাই––ধুলায় ঝাপটানো, রক্তাক্ত, করুণ;
অথচ আমাকে ছুঁয়ে এখনো মায়ের প্রশ্রয়ী শ্বাস,
আমাকে নিয়ে নিষ্ফল স্বপ্নে পিতার চশমার কাঁচ গুঁড়ো হয়ে ঝরে রাস্তায়,
পিস্তলের বাঁট-ঘেঁষা আঙুলে এখনো স্কুলে পড়া বোনটির নরম হাতের ঘ্রাণ,
এই ভালোবাসাময় মৃত্যুদ্বীপকে ঘিরে এখনো পদ্ম-শাপলার পাতা ঝাপটায়।
আমাদের তরুণ চুল আর সরু জুলফি বেয়ে নামে সতর্ক ঘাম
আমার অস্থির হাত, অথচ সামনে পিকাসোর চিত্রকর্মের মতো নিখুঁত যুবক
স্পষ্ট দেখি এমনকি তারও গলা জড়িয়ে মায়ের কান্না, বোনের নিষেধ,
এবং সামনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁচের গুঁড়ো;
সদ্যোজাত শিশুর বিস্ময় নিয়ে আমি কিছুতেই ভেবে পাই না
কী করে নিজের ছায়ার উপরে গুলি চালাবো?

আমার আততায়ী হাত চেপে হিমালয়-কাঞ্চনজংঘার সম্মিলিত ভার,
অস্তিত্বে ডানা মেলে অহিংস বুদ্ধের মায়াবী পঙ্খীরাজ
অথচ চোখের কোণে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
এই অসহ্য সুন্দর শহরের গাঢ় হলুদ রাস্তায় উড়ে উড়ে নামছে
আমাদের প্রেমিকার ঘ্রাণ মাখা ভালোবাসার নীল রুমাল।


(পরিমার্জিত সংস্করণ / প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ২০১২, 'হৃদয়ের রাজপথে', পাঠসূত্র প্রকাশনী)