সে নেই, অথচ তার নাম পড়ে আছে --
প্রেম-বিরহের পাট চুকিয়ে সে চলে গেছে গ্রীবা উঁচু করে,
অনুপস্থিতি জুড়ে শুধু রেখে গেছে অশরীরি অক্ষরগুলো --
স্পর্শ নয়, গন্ধ নয়, প্রিয় কোন গান বা লালপেড়ে শাড়িটাও নয়,
যেতে যেতে সে ফেলে গেছে নামটা -- পকেটে রুমালের কোণে,
ঘরের দেয়ালের পলস্তারায়, টেবিলে কবিতার খাতা জুড়ে।

আমি ভেবেই পাই না, এক নি:শ্বাসে উচ্চারণযোগ্য একটি শব্দ,
অথচ সন্ধ্যার প্রণয়স্পর্শের মতো কেন তাকে দীর্ঘ মনে হয়!
ইতিপূর্বেও, যখন আমি তাকে এমনকি চোখেও দেখিনি,
তখনও তার নামটা শুনে ওটাকেই ভালবেসেছিলাম আগে;
ওটাই ছিল কৈশোরে আমার প্রেমের প্রথম পাঠ, আর তাই কি না
গ্রীবা-উঁচু অহংকারে সে চলে গেছে, ফেলে গেছে তার নামটা।

এই এত দিন পরে, যখন আমিও হয়তো তাকে আর
আগের মত ভালবাসি না -- কিন্তু নামের ব্যাপারটা ভিন্ন;
এখনও সে আমাকে ছুঁয়ে থাকে বিকেলবেলার একাকীত্বে,
মাঝরাত্রে মাঝেমধ্যে ধুয়ে দেয় অভিযোগী স্মৃতির জলে,
দিনে অফিসের শত ব্যস্ততার ফাঁকেও ড্রয়ার খুলে ওই প্রাণসঞ্জীবনী
শব্দটিকে একবার দেখে নিতে আমার ভুল হয়না মোটেই।

ঠিক জানি, একদিন তার ব্যথা-জাগানিয়া চুল-চোখ-নাকও
কোনো রকম কষ্ট দেবে না আর; কোন আততায়ী ছায়া এসে হয়তো
ছিনে নেবে পুরো অস্তিত্ব -- তখনও আমার সাথে ছায়াসঙ্গী হয়ে
থেকে যাবে খুব সাধারণ, আটপৌরে উচ্চারণের ওই নামটা;
অনেকটা অভিমানে অগোচরে দেশত্যাগী মানুষের মতো,
যার অভিবাসী শরীর প্রয়াণ হয় -- তবু ছায়া তো নয় কখনোই।


(পরিমার্জিত সংস্করণ / প্রথম প্রকাশ: বইমেলা ২০১২, 'হৃদয়ের রাজপথে', পাঠসূত্র প্রকাশনী)