এসেছে জোয়ার সমুদ্রে; ঢেউ ’পরে মত্ত যত ফেনা রাশি রাশি
ফুলেছে পাল, এই বেলা ছাড়বে তরী; প্রিয়ে, তবে আসি?
নির্বাক, থমথমে মুখ; জড়ায়ে দেহোপরে আটপৌরে শাড়ি
অভিমানী বধূ মোর এসেছে পিছু, হায়, কিছু কি বোঝাতে পারি?
নত আঁখি জলে ভার, ওরে দ্যাখ চেয়ে, আমারও কি নয়?
বুকে চেপে মোর হাহাকার তোর––‘কেন! কেন এমন হয়!’
বলি, কেন যে এমন হয়, তার আমি কি ছাই জানি?
সংসার––সে ধর্ম মোদের, তবু দেশ যে বড়, মানি;
থেমে থেমে ওই কান পেতে শোন, রণ দামামার বাজ
ওপার সাগরে––এই শুরু বলে––দিবি বেঁধে মোর তাজ?
জানি হৃদয়ের মাঝে তোরি নাম বাজে থেকে থেকে উচ্চারি
এই সাঁঝে তবু প্রণয় সাধনা ওঠে নাকো উৎসারি;
মোরা মুগ্ধ প্রেমে এই বিজন তীরে কাটিয়ে দিলাম বেলা
হোক না সখি––এই অচিন তীরেই––জীবন শেষের খেলা।
ও কি, ও কি, মুছে নিয়ে চোখ, বেশ তো দিয়েই ফাঁকি
ওঠে বসেছিস মোর ছোট নায়ে! না রে, সে কি হয় নাকি?
ভালবাসা নয়, যুদ্ধ ওপারে––শক্রকে জোর সাপটে
তুই অবলা নারী যেতে চাস সাথে আমাকেই ঠিক জাপটে!
কী বলিস? ও হো, ডরাস না মোটে, তাই বুঝি চাস বলতে?
রণরঙ্গিনী জায়া––সে আমি জেনেছি ঠিক, এত দিন সাথে চলতে;
তবু বলি নারী, ফোঁসে যদি নাগিনেরা, মোর মরণের ঘনায়ে
ওরে তুই কিরে বেহুলা? নিতে যদি চাস লখিন্দরেই ছিনায়ে!
এক্ষণে আঁধার ঘনায় মুখে; দেখি, মুছে গেছে হাসি
কী কহিনু? ওরে––মূঢ়, নির্বোধ আমি, কী বিষম চেতনানাশী!
প্রেম-ছাওয়া তোর নিচ্ছিদ্’ ঘর, সে যে বেহুলারও দীর্ঘশ্বাস
কতো সযতনে আগলে যে মোরে––বাহিরে রাহুর গ্রাস!
না, না, সখি, ভুলি নাই, বুক-ভার এই নিঠুর বিদায়-ক্ষণে
কী কঠিন ত্যাগে বেঁধেছিলে মোরে, কত যে বিসর্জনে;
জীবন-মঞ্চে মোর যেবা ছিল মৃত্যুর সাথে খেলা
জেনেশুনে তবু আমা সনে মিলে তরঙ্গে ভাসালে ভেলা।
আজ আমাদের জোছনা যবে গো অমাবস্যায় লীন
যাতনায় কী বা লাভ! বোধগ্রাসী প্রেমে অহেতুক বাড়ে ঋণ;
শোনো বলি মেয়ে, দোহাই তোমার, নিজেরে ফেরাও দৃষ্টি
সংসার ক্ষুদ্র অতি; জীবন?––সে তো সুমহান সৃষ্টি!
পড়ি সূরা, মাঙি দোয়া তোর তরে, এইবার তবে আসি?
আনমনে কাঁদি, কয়েছি কি কভু, তোরে কত ভালবাসি?
ওই ছাড়ে তরী! শেষবার বউ, মোর কথা ঠিক শোন্
ভালবাসা––সে তো দিগ্বিজয়ী; তবু শত্রু যে অর্জুন!
‘ভালবাসা সব পারে?’––নাহ, তোকে বোঝানো দায়
ইন্দ্রের সভা ভেঙেছে সেই কবে, হায়!
রচনাকাল: ঢাকা ২০১০