১
এলো বৈশাখ, এলো নতুনের ডাক, বসুধার ঝরে গেলো পুরাতন ফুল
ছড়ায় আমের বোল, ভরে বুক কিশোরীর, কোলে তার জাম-লিচু-কুল;
এলো বৈশাখ, ঘুচে আঁধার — চৈত্রের শেষে হাসে সূর্যের দিন
জাগবে হৃদয় সব রুদ্র-উৎসবে, নাচবে রৌদ্র-ছায়া-ঝড় সীমাহীন!
২
নেমেছে বর্ষা আবার — বিমুক্ত আকাশ যেন বিক্ষুব্ধ স্বদেশ,
শ্রাবণ-সিক্ত জলে শুদ্ধ হবে দেহ, সিদ্ধ হবে যত ক্রোধ-ঘৃণা-দ্বেষ;
এই দেশপ্রেম-হরা খরতাপ গাহে ঝরুক বর্ষা বর্ষভর
পাষাণ-ভাসানো আসুক বৃষ্টি, শানুক বজ্র, হানুক ঝড়!
৩
রুদ্র প্রতাপ গ্রীষ্ম-ধুয়া বর্ষা দিনের শেষে
ভাদর মাহের আদর-গাহে আসলো শরৎ হেসে
উদ্ভাসিল নিরভ’ আকাশ, উৎসারিল নদী
হাসবে নিখিল, ভাসবে অখিল দু:খ নিরবধি।
৪
পূবালি হাওয়ায় নাচে ধান সোনালি রৌদ্রে—চারিপাশে হেমন্তের রব;
কাস্তেরা ঝলসায় কিষাণের হাতে; নাড়ার ফাঁকে কুড়ায় ধান ফিরে ফিরে
অভাবী ছেলের দল; ব্যস্ততা, কোলাহল খুব—কিষাণীর উঠান জুড়ে
মাড়ানির ধান আর পিঠা-পুলির ঘ্রাণ—চারিদিকে এতো উৎসব!
৫
এলো শীত, এলো হিমকেশী, হিম ভোরে ঝেঁপে এলো কুয়াশার দিন
পল্লীর ঘরে ঘরে নকশি কাঁথার ধুম, নাগরীরা আবছায়া ধোঁয়াশায় লীন,
এলো শীত, এলো হাতকাঁপা জার, কিশোরীর ম্লান গায়ে নারকেল তেল
পথিকের পায়ে চোরকাঁটা, শিশিরের জল; প্রকৃতির অপরূপ রূপ উদ্বেল।
৬
আসলো আবার বসন্ত ঐ, তরুণ প্রাণের সঞ্চরী
বিশাখ দেহে জাগলো পাতা, ফুটলো ফুলের মঞ্জরী
হাসলো অরুণ, ভাসলো তরুণ, বরুণ-আলয়-ঢেউ জড়ি
অচিন আলোয় জাগবে স্বদেশ, হাজার রাতের ঘুম হরি।
(প্রথম প্রকাশ: বাংলা-কবিতা ডট কম, ২৭শে মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ)