বাঘের মাসি বলা যাবে না ওকে মোটেই,
বড়জোর বাঘের হাসির খোরাক হতে পারে আমাদের মিনি।
লোমশ, নরম, আদুরে শরীরে খুব করে স্বাধীনতা মেখে
ও ঘুরে বেড়ায় নি:শব্দে—কারাগার জুড়ে;
গ্রীল টপকে বারান্দায়, সেল পেরিয়ে ওয়ার্ডে,
এই পায়ের তলে, তো ওই বালিশের ওমে—ও ব্যাটার
উৎপাতের কাছে স্বয়ং জেলার মশাইও হার মেনে যাবে;
তফাৎ শুধু এই যে, এই জানোয়ার ছানাটা সবার আদরের।
কয়েক পুরুষ ধরেই যাবজ্জীবন কারাদন্ড খাটছে, তবুও
কুছপরোয়া নেই একরত্তি; রোবেন দ্বীপের ম্যান্ডেলার মত
প্রশান্ত, দিব্যি ঘুরে বেড়ায় সারাদিন—ফুটফুটে ওই
সাদা বেড়ালটা;
জেলখানার ঘণ্টা যখন বিকেল বেলাতেই ‘সান্ধ্য আইন’ জারি করে
এই বিস্তীর্ণ বধ্যভূমি জুড়ে,
আর আমরাও একেকজন চাপিয়ে দেয়া বন্দিত্বে ঘাড় গুঁজে
চৌদ্দ শিকের ভেতর গুটিয়ে নিজেদের—
বেশ অনেকটা কাছিমের মতো,
মিনি কিন্তু তখনও ফাটকের ফাঁক গলে এক একবার
বাইরে থেকে ভিতরে, আঙিনা থেকে বারান্দায়,
বেশ ইচ্ছে থেকে অনিচ্ছের দুনিয়ায় ঘুরে ফিরে
স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ায়।
আমরাও বেশ মানবশিশুর মতই আচরণ করি ওর সঙ্গে;
মোটামুটি ভদ্র আচরণের শর্তে ওর জন্যে নিয়মিত বরাদ্দ হয়
মাছ-ভাত, দু’এক টুকরো নরম হাড়, প্রায়ই খানিকটা মাংস,
আর বিনিময়ে সেও বিনা শুল্কে শান্তি বিলায়
এই অশান্তির চৌহদ্দি জুড়ে।
বাইরে রৌদ্রের আঁচ, মেঘের আর্দ্রতা, খসখসে পাতার শব্দ
অথবা ছায়ার নরম চুমু—দিনভর যেখানে যা পায়
গায়ে মেখে নিয়ে গহিন কারার অন্ধ প্রকোষ্ঠে ছড়িয়ে বেড়ায়
স্বর্গের গেলমানের মত ওই শ্বেতশুভ্র বিড়ালছানা।
যেন ঈসার স্পর্শ শরীরে মেখে হাঁটে ল্যাজারাস।